শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবজি গেমিং রোগে আক্রান্ত রাজশাহীর কিশোর-যুবকরা, দিশেহারা অভিভাবকরা

Paris
Update : সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

আর কে রতন : মাঠে গিয়ে ধূূলো-কাঁদা মাখা হয় না আর এখন। ঘেঁমে বিকেলে খেলা শেষে বাড়ি ফেরার চিরারিত দৃশ্যটা আজকাল যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় খেলার জায়গার অভাব, পড়ার চাপ, বেশি বেশি বাইরে গেলে সন্তান খারাপ হবার ভয়-কতই না অভিযোগ অভিভাবকদের! এরমধ্যে চলমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে বাড়ীতে সময় কাটানোর জন্য অভিভাবকরা বিনোদনের নামে যা তুলে দিচ্ছেন ছেলে-মেয়েদের হাতে স্মাট ফোন, তার ক্ষতির পরিমানটা তাদের ধারনারও বাইরে।

পূর্বে মোবাইলে ”পাবজি” খেলা বিশেষ করে শহর এলাকায় এই চিত্র দেখা মেললেও ক্রমেই মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের আনাচে-কানাচে ভয়ংকর ভিডিও গেম। ফলে দিনে দিনে এ খেলায় আসক্ত হয়ে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হচ্ছে শিশু-কিশোর ও যুবকরা। সব মিলিয়ে মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের পর্দায় কিশোর-তরুণরা ‘পাবজি’তে এতটাই মগ্ন থাকছে যে, বাস্তব পৃথিবী ভুলে তারা এক বিপজ্জনক নেশায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।

ভিডিও গেমসের এ নিধনযজ্ঞ অনেক বাস্তব অনুভব হচ্ছে তাদের কাছে। বর্তমানে এই গেমে অত্যধিক আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশু থেকে শুরু করে কিশোর এবং তরুণরাও। অন্যদিকে শহরের ইট, পাথর আর কংক্রিটের আড়ালে আটকা পড়ছে শিশুদের বর্ণিল শৈশব। গ্রামের শিশুরা খেলাধুলার কিছুটা সুযোগ পেলেও শহরের শিশুদের সে সুযোগ কম। বড়দের মতো শিশুদের মধ্যেও ভর করছে শহরের যান্ত্রিকতা। ফলে তারা খেলাধুলার আনন্দ খুঁজে ফিরছে মাউসের বাটন টিপে, কম্পিউটারের পর্দায় গেমস খেলে, কিংবা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। অনেক সময় তাদের এ আকর্ষণটা চলে যাচ্ছে আসক্তির পর্যায়ে। ধীরে ধীরে তারা র্নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে কম্পিউটার-মোবাইল-ট্যাব গেমসের ওপর। ফলে ভিডিও গেমস শিশু-কিশোরদের প্রকৃত শৈশব-কৈশোর কেড়ে নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনই কর্মব্যস্ত। সন্তান বড় হচ্ছে প্রায় একা এবং কিছু মায়েরা শিশুকে খাবার খাওয়ার জন্য ও কান্না থামাতে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ও ভিডিও গেমসের অভ্যাস করাচ্ছেন। এরমধ্যে চলমান মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে বাড়ীতে সময় কাটানোর জন্য মোবাইলে খেলার প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশু-তরুণ এবং যুবকরা অর্থাৎ ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেটে ডুবে থাকার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

একাধিক অভিভাবকরা জানান, লেখাপড়ায় ফাঁকি দিয়ে সারারাত জেগে এই “পাবজি” গেমস খেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়েছে। পড়ালেখায় অনেকের মনোযোগ কমে গেছে। গেমটি খেলতে নিষেধ করলে তাতে খেলতে না পারলেই সন্তানদের মাঝে এক ধরনের মানসিক যাতনা তৈরি হয় এবং মেরাজ খিটখিটে হয়ে ঠিকমত খেতে চাই না। একাধিক অভিভাবকদের সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে “পাবজি” নামের গেমটি মোবাইল ফোনে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক প্রমথ চন্দ্র সরকার বলেন, মোবাইলে “পাবজি” গেম কিশোর-তরুণদের মধ্যে এক ধরনের সহিংস মনোভাব তৈরি করছে। এতে করে তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনে একটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলার আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। এ আসক্ত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হয়ে সন্তানদের প্রতি নজর বাড়াতে হবে। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: মো: রাকিবুজ্জামান চৌধুরী (সৈকত) বলেন, যেকোনো আসক্তিই খারাপ।

অনলাইন গেমে যদি আসক্তি তৈরির উপাদান থাকে, এটি যদি আসক্তি তৈরি করে, তাহলে তাতে আচরণগত সমস্যা তৈরি হয়। মেজাজ খিটখিটে হয়। প্রাত্যহিক কাজে মনোযোগ কমে যায়। আচরণগত সমস্যা তৈরি করে এবং শারীরিক ও মানসিক রোগ হতে পারে। ‘‘পাবজি” গেম একজন শিশু কিশোর কিংবা যুবকের ওপর সামাজিক মূল্যবোধের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘদিন খেললে হার্টের সমস্যা, আঙ্গুল, ঘাড় ব্যথা, কানে কম শোনা এবং ডিসপ্লে থেকে জিবাণু ব্যাকটরিয়ার সংক্রমণসহ অসংখ্য শারীরিক ঝুঁকির আশংকা তৈরী করতে পারে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris