নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতির বাঁধার মুখে তিনমাস থেকে প্রসাদপুর উপজেলা পোষ্ট অফিসের প্রাচীর নির্মাণের বন্ধ রয়েছে। সরকারি এ স্থাপনার প্রাচীর নির্মাণের কাজ করায় হামলা চালিয়ে পোস্ট মাষ্টারকে মারপিট করার অভিযোগ উঠেছে দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে জীবন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন পোস্ট মাষ্টার। এ ঘটনায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পোষ্ট অফিসের মাষ্টার মামুনুর রশিদ।

জানা গেছে, পোষ্ট অফিস সংস্কার করতে চলতি বছরের শুরুর দিকে মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্দ আসে। বরাদ্দের অনুকুলে সংস্কার কাজ শুরু করেন পোষ্ট অফিসের মাষ্টার মামুনুর রশিদ। পোস্ট অফিসের প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করা হলে প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি এরশাদ আলী, সাধারন সম্পাদক বাবুল আক্তার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন রানা গত ৬ ফেব্রুয়ারী প্রাচীর নির্মানের কাজ বন্ধ করতে পোস্ট অফিসের মাষ্টারকে বিভিন্নভাবে বাঁধা প্রদান করে। তারা দাবী করেন পোষ্ট অফিসের ভিতর কিছু জমি পাবে।

গত ১ মার্চ মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হালিম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোল্লা এমাদুল হক, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ পোষ্ট অফিসে যান। ইউএনও পোষ্ট অফিসের মাষ্টারের কাছে জমির বিষয়টি জানতে চান। এর কিছু পরই ইউএনও এবং চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সহ কয়েকজন তার ওপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে। এরপর ঘটনাস্থল থেকে চলে যান ইউএনও। ওইদিনই ইউএনও তার অফিসে ভুক্তভোগী মাষ্টার মামুনুর রশিদকে ডেকে নিয়ে অভিযুক্ত একজনের সঙ্গে জোরপূর্বক আপোষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

২৩ মার্চ পোষ্ট অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পোস্ট অফিসের তিনদিকে প্রাচীর নির্মাণের কাজ হলেও বাধার কারণে উত্তর দিকের কাজ বন্ধ রয়েছে। দলিল লেখকের নেতারা স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় প্রভাব খাঁটিয়ে ধরাকে সরা করে চলে। স্থানীয়রা বলেন, বেশ কিছু দিন থেকেই পোস্ট অফিসের ওই জমি নিয়ে দলিল লেখক নেতাদের সঙ্গে ঝামেলা হয়ে আসছিল। পোস্ট অফিসের ওই সীমানা দিয়ে এক প্রভাবশালীর বাড়ি আসা-যাওয়ার জন্য রাস্তা দিতেই তারা বিভিন্ন ভাবে ঝামেলা করছে। এ নিয়ে পোস্ট অফিসের মাষ্টারকে অন্যায়ভাবে মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে।

প্রসাদপুর উপজেলা পোষ্ট অফিসের মাষ্টার মামুনুর রশিদ বলেন, পোষ্ট অফিস সংস্কার ও প্রাচীর নির্মাণে সরকার থেকে বরাদ্দ আসে। পোষ্ট অফিসের ৩৬ শতাংশ জমির মধ্যে বর্তমানে ২৯ শতাংশ জমি আছে। তারপরও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক দাবী করে পোষ্ট অফিস তাদের জমি দখল করে আছে। বরং তারাই আমাদের জায়গা দখল করে আছে। ইউএনও’র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সেদিন উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে ও দলিল লেখক সমিতির নেতারা আমার উপর হামলা করেছে।

পরে ইউএনও স্যার তার অফিসে আমাকে ডেকে এক প্রকার জোর করে আপোষ করার চেষ্টা করে। তারা প্রভাব খাঁটিয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেছে। অদ্যবধি পর্যন্ত পোষ্ট অফিসের প্রাচীর নির্মাণ করতে দেয়নি। প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় থাকে পোষ্ট অফিস। উল্টো বিভিন্ন ভাবে প্রাণনাশের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে তারা। অভিযুক্ত সাধারন সম্পাদক বাবুল আক্তার বলেন, প্রাচীরের সীমানা নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল। নিশেধাজ্ঞা থাকায় কাজ বন্ধ আছে।

তবে পোষ্ট অফিসের মাস্টারকে মারপিটের কোন ঘটনা ঘটেনি। অভিযুক্ত প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি এরশাদ আলী বলেন, ওই বিষয় নিয়ে কারো সঙ্গে আমার কোন কথা বা ঝামেলা হয়নি। মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল হালিম বলেন, ডিসি স্যারের নির্দেশনায় সেখানে (পোষ্ট অফিসে) আমি দেখার জন্য গিয়েছিলাম। তবে সেখানে যা হয়েছিল সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। পরে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি।