বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

করোনাকালে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি

Paris
Update : শনিবার, ১২ জুন, ২০২১

এফএনএস : করোনাকালে দেশের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পালে তুমুল হাওয়া লেগেছে। ফলে মহামারীর মধ্যেও এক বছরে দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০৯ শতাংশ। আর একই সময়ে এজেন্টদের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭১ শতাংশেরও বেশি। তাছাড়া রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ১৯৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ। বিগত ২০২০ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চের তথ্য পর্যালোচনায় এ তথ্য মিলে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বছর সাতেক আগে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় ব্যাংক সেবা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম থেকেই গ্রামমুখী ব্যাংক সেবাটি দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। আর করোনাসৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি সচল ছিল। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধিতে তারই ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর ঘরের সঞ্চিত অর্থও ব্যাংকে আসতে শুরু করেছে।

শহুরে গণ্ডি ভেঙে দিয়ে এজেন্টদের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়াই দেশের ব্যাংক খাতের বড় সফলতা। এর মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ২৮টি ব্যাংক। তার মধ্যে ৪টি ব্যাংক এজেন্ট নিয়োগ, আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও রেমিট্যান্স আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

সূত্র জানায়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট চালুর ক্ষেত্রে সবার শীর্ষে আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। আর এজেন্টদের মাধ্যমে হিসাব সংখ্যা চালুর ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে ব্যাংক এশিয়া। তাছাড়া এজেন্টদের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ইসলামী ব্যাংক। দেশের বৃহৎ ওই ব্যাংকটি এজেন্টদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহেও শীর্ষস্থানে রয়েছে।

তবে এজেন্টদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংক শীর্ষস্থানে রয়েছে। ব্যাংকগুলোও এজেন্ট নিয়োগ, নতুন নতুন আউটলেট ও ব্যাংক হিসাব খোলায় একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করছে। আর সেবাটিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গিও বেশ উদার। তবে কভিডসৃষ্ট দুর্যোগে ২০২০ সালের মার্চের শেষ নাগাদ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে। গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে দেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রম এক ্রকার বন্ধ ছিল। তারপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এ মুহূর্তে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে।

সূত্র আরো জানায়, গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চের শেষ দিন পর্যন্ত দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে ২২টি ব্যাংকের এজেন্ট ছিল ৮ হাজার ২৬০টি। আর চলতি বছরের মার্চে এজেন্টের সংখ্যা বেড়ে ১২ হাজার ৩৪৫-এ দাঁড়িয়েছে। করোনাকালের এক বছরে ব্যাংকগুলোর এজেন্ট সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৮৫টি। ওই হিসাবে এজেন্টের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

আর এজেন্টের মতোই গত এক বছরে ৪ হাজার ৫৪৬টি আউটলেট বেড়েছে। ২০২০ সালের মার্চ শেষে এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৮৭৫ আর চলতি বছরের মার্চে আউটলেটের সংখ্যা বেড়ে ১৬ হাজার ৪২১-এ উন্নীত হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে আউটলেট বেড়েছে ৩৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। তাছাড়া ২০২০ সালের ৩১ মার্চ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চালু করা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ৬৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫১টি।

আর করোনাকালের এক বছরে ৪৫ লাখ ২৫ হাজার ১৯৫টি নতুন ব্যাংক খোলা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্টদের মাধ্যমে চালু করা ব্যাংক হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ২২ হাজার ৬৪৬টি। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক হিসাবের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। করোনাকালের এক বছরে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। কিন্তু এজেন্টদের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানত বেড়েছে ১০৮ শতাংশেরও বেশি।

চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। ওই আমানতের মধ্যে এজেন্টদের মাধ্যমে ১৭ হাজার ৮২২ কোটি টাকা এসেছে। অথচ ২০২০ সালের ৩১ মার্চ এজেন্টদের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ ছিল মাত্র ৮ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু করোনাকালের এক বছরে এজেন্টদের মাধ্যমে ৯ হাজার ২৮৭ কোটি টাকার আমানত সংগৃহীত হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চে এজেন্টদের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৭৩ কোটি টাকা।

কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৫০১ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ওই হিসাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭১ শতাংশেরও বেশি। তাছাড়া চলমান মহামারীতে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অর্জন হলো রেমিট্যান্সের বড় উল্লম্ফন। চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। অথচ করোনাকালের এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ১৯৯ শতাংশ। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত এজেন্টদের মাধ্যমে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।

কিন্তু মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৫৮ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। শুধু এক বছরে এজেন্টদের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৮ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। বিগত ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ে নীতিমালা জারি করে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে পাইলট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যাংক এশিয়া প্রথম এজেন্ট নিয়োগ দেয়। তারপর দ্রুততম সময়ে অন্য ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৮টি ব্যাংক লাইসেন্স নিয়েছে। আর ইতিমধ্যে সেবাটি চালু করেছে ২৭টি ব্যাংক।

এদিকে এজেন্ট ব্যাংকিংর উচ্চ প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা জানান, দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঞ্চয় ব্যাংক খাতে আসতে শুরু করায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিছুটা দেরিতে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করে। কিন্তু স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই প্রায় আড়াই হাজার এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়। লেনদেন বেশি হওয়ায় ইসলামী ব্যাংকের এজেন্টরাও মুনাফায় চলে এসেছে।

আমানত সংগ্রহ ও রেমিট্যান্স আহরণে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সবার শীর্ষে। এটি ইসলামী ব্যাংকের প্রতি দেশের গণমানুষের আস্থা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এজেন্টদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের জন্য প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। সেটি সম্পন্ন হলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকের বিনিয়োগ পৌঁছানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন জানান, দেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ ব্যাংক সেবার বাইরে ছিল।

সাধারণ মানুষ ব্যাংকে যেতে ভয় পেত। কিন্তু এজেন্টরা মানুষের মনের ভয় দূর করতে পেরেছে। করোনাকালের এ সময়ে মানুষের চলাচলে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল। যে জন্য মানুষ ঘরের পাশে এজেন্টদের কাছে সেবার জন্য গিয়েছে। লেনদেন নিরাপদ হওয়ায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris