শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নওগাঁর আমের হাটে ক্রেতা নেই

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০২১

নওগাঁ থেকে প্রতিনিধি : আমের নতুন রাজধানী নওগাঁ। এবার আম উৎপাদনে শীর্ষস্থানে রয়েছে এই জেলা। আমের ফলন হয়েছে বেশ ভালো। ইতিমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন জাতের আম। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের কারনে আমের দরপতনে চাষিদের মুখে হাসি ফোটেনি। আমচাষিদের অভিযোগ, করোনার কারণে বাইরের ক্রেতার অভাবে আমের বাজার ও বিপণন নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় আড়তদার ও ফড়িয়ারা। এতে করে অনেক কৃষক আমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ফলে আমচাষিদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। তাদের ভাষ্য, ‘হাটে আম আছে, ক্রেতা নেই।’
আমচাষিরা বলছেন, লকডাউন ও করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বাইরের কোন ব্যবসায়ীরা আম কিনতে আসছে না। এবং যাত্রী পরিবহন সংকটে বাইরের ক্রেতারা হাটে আসতে পারেননি। এ সুযোগে স্থানীয় ফড়িয়া/আড়তদাররা যারা অন্য সময়ে বাইরের ব্যবসায়ীদের কমিশনে আম কিনে দিতেন, তারাই এখন আম বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা চাষিদের কাছে কম দামে আম কিনে বেশি দামে বাইরের ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করছেন।

সস্প্রতি নওগাঁর সবচেয়ে বড় আমের হাট সাপাহার উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, হাটে আসা বিভিন্ন ব্যাটারিচালিত ভ্যান ভর্তি আম। চাষিরা বাগান থেকে ভ্যানে করে আম নিয়ে হাটে এসে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু আমের সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা অনেক কম। প্রকারভেদে বাজারে গোপালভোগ প্রতিমণ ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায়, ক্ষীরশাপাত প্রতি মণ ১৩শ থেকে ১৫শ টাকায়, নাগফজলি প্রতি মণ ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা এবং গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকায় প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে।

সাপাহার হাটে আসা আমচাষি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, কিছু ক্রেতা আমের দাম বললেও তিনি আরো দামের আশায় অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, হাটে বাইরের ক্রেতা না থাকায় আমের দাম কম বলা হচ্ছে। অথচ সাধারণ সময়ে তিনি বাগান থেকে হাটে আনার পথেই ক্রেতারা আম কিনে নিয়ে যেতেন। আবার হাটে আসতেই ব্যবসায়ীরা আম কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু, এবার আম নিয়ে হাটে বসে থাকতে হচ্ছে।

আরেক আমচাষি জয়নাল বলেন, তারা যখন হাটে আম বিক্রি করতে যান, তখন দাম কম। আবার তারা যখন হাটে আম কিনতে যান, তখন দাম বেশি। তিনি বলেন, গোপালভোগ ও ক্ষীরশাপাত জাতের ১০মণ আম নিয়ে এসেছি বিক্রি করতে। গোপালভোগ আমের দাম বলছে ১২শ টাকা মণ আর ক্ষীরশাপাত আমের দাম বলছে ১৩শ টাকা মণ। অথচ গতবছর গোপালভোগ আম বিক্রি করেছি ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা এবং ক্ষীরশাপাত ২ হাজার থেকে ২৫শ টাকা করে প্রতি মণ। এরকম দাম হলে তো আমরা লাভের মুখ দেখতে পারবোনা। বরং আরো লোকসানে পড়তে হবে।

স্থানীয় আম ব্যবসায়ী মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, লকডাউন ও করোনা ভাইরাস এর সংক্রমন বেড়ে যাওয়ার করনে বাহির থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা কম আসছেন নওগাঁতে। যার কারনে আমরা চাষিদের কাছে থেকে বেশি আম আমরা কিনতে পারছিনা। যদিও ব্যবসায়ীরা আম কেনার জন্য নওগাঁতে আসতে পারবেন যথাযথ নিয়ম মেনে তবুও খুব কম ব্যবসায়ী নওগাঁতে প্রবেশ করছেন। ব্যবসায়ীরা যদি পুরোদমে নওগাঁ আসতে শুরু করেন তাহলে বাজারে আম বেচা-কেনা বেশি হবে এবং চাষিরাও ভালো দাম পাবেন।

সাপাহার আম আড়ৎদার সমিতির সভাপতি শ্রী কার্ত্তিক সাহা জানান, রাজশাহী বিভাগে আমের মূল পাইকারী ব্যবসায়ীরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট ও ভোলাহাট উপজেলার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। আবার আড়তে কাজ করতে আসা শ্রমিকদেরও করোনার পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ীরা এখনো আসা শুরু করেনি বাজারে। বাজারে আম বেশি থাকলেও ক্রেতা কম রয়েছে।

তাছাড়া অন্য জেলাতে ৫৫ কেজিতে প্রতিমন হিসেব করে পাইকারী ব্যবসায়ীরা আম কিনে নিয়ে যায়। আর নওগাঁতে ৪৫ কেজিতে প্রতিমনে আম কেনা-বেচা করা হয়। এসব কারেনে আম কেনা-বেচা কম হচ্ছে, যার কারনে চাষিরা দামও কম পাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে কিন্তু যদি পাইকারী ব্যবসায়ীরা না আসলে আম বেচা কেনা বেশি হবেনা।

যার কারনে বেচা-কেনা কম হচ্ছে। চাষিরা সেভাবে তাদের কাঙ্খিত আমের দাম পাচ্ছেনা। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এবং আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩লক্ষ ৬২হাজার মেট্রিকটন। এছাড়াও চলতি মৌসুমে ১৫শ কোটি টাকার আম কেনা-বেচা হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris