বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় সুস্বাদু নাকফজলী আম আসছে ২ জুন থেকে

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১
All-focus

ধামইরহাট প্রতিনিধি : নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের স্বাদে গুনে অনন্য আম হিসেবে পরিচিত নাকফজলী আগামী ২জুন থেকে গাছ থেকে নামানো শুরু হবে। উপজেলার আমচাষীরা বর্তমানে গাছ থেকে এ আম নামানোর জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তবে দেশে চলমান লকডাউনের কারণে আমের চাহিদা কম থাকায় দাম কমের আশংকা করছেন চাষিরা। অন্যদিকে নাক ফজলী আমের গুনাগুন বিচার বিশ্লেষন করে দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে রপ্তানীর জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি দপ্তর।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,এ উপজেলায় ৬শত ৭০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। অধিকাংশ বাগানে নাক ফজলী আম রয়েছে। এছাড়া গোপালভোগ, ল্যাংড়া, আম্রপালি, হিমসাগর, বারী-৪ ও ৭, আশ্বিনা, ফজলী জাতের আম গাছ রয়েছে। এ উপজেলার কৃষকরা কমবেশী প্রত্যেকের বাড়ীতে ২-৩টি করে নাক ফজলী আম গাছ লাগিছে। এক কথায় প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে এ আম এখন চাষ হচ্ছে। একটি নাক ফজলী আমের ওজন ৩ শত থেকে ৪শত গ্রাম পর্যন্ত।

পাতলা চামড়া এবং সরু বিচি যা অন্যান্য আমের চেয়ে আলাদা। মিষ্টতার দিক দিয়ে ন্যাংড়া ও আম্রপালি আমের সমতুল্য। এ আমে কোন আইশ না থাকায় খেতে খুবই সুস্বাদু। আম পাকার পরও শক্তভাব থাকায় সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব। নাক ফজলী আম বাংলাদেশে শুধুমাত্র নওগাঁ জেলার ধামইরহাট ও বদলগাছি উপজেলায় চাষ হচ্ছে। তবে বর্তমানে পার্শ্ববতী পত্নীতলা ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার এ আমের বিস্তার ঘটেছে।

অনেকে মনে করেন এ আমের নিচের দিকে নাকের মত চ্যাপ্টা হয়ায় এর নাম করণ হয়েছে নাক ফজলী। আম চাষীদের কাছ থেকে জানা যায়,নাক ফজলী আম ১৯৬৭ সালে আফতাব হোসেন ভান্ডারীর মাধ্যমে এ উপজেলার বিস্তার লাভ করে। বন বিভাগের সাবেক এমএলএসএস প্রয়াত আফতাব হোসেন ভান্ডারীর দাদার বাড়ী একই জেলার বদলগাছি উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামে।

ভান্ডারপুর গ্রামের তৎকালীন জমিদার খুকুমনি লাহেরীর কাছ থেকে তার দাদা এ আমের জাত সংগ্রহ করেন। জমিদার খুকুমনি লাহেরী ভারতের কলকতা থেকে এ আমের জাত সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে আফতাব হোসেন ভান্ডারী জোড় কলমের মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ৫৩ বছর পূর্বে ধামইরহাট উপজেলায় এ আমের বিস্তার ঘটায়। বর্তমানে উপজেলার মনিপুর, রামরামপুর, আঙ্গরত, চকময়রাম, হরিতকীডাঙ্গা, হাটনগর, পিড়লডাঙ্গা, শিবরামপুর, মইশড়, আগ্রা˜িগুন, আলমপুর, জয়জয়পুর এলাকায় ছোট বড় প্রচুর পরিমাণে নাক ফজলী আমের বাগান রয়েছে।

এছাড়াও উপজেলার সর্বত্র কম বেশি এ আমের চাষ হচ্ছে। জোড় কলমের মাধ্যমে এ আমের চারা রোপন করার ১-২ বছরের মধ্যে গাছে মুকুল আসে। গাছের বয়স ৩-৪ বছর হলে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৪-৫ মণ আম পাওয়া যায়। গ্রাম্যঞ্চলে কৃষক পর্যায়ে এ আম প্রতি কেজি প্রথমে ৩০-৩৫ টাকা দরে কেনা বেচা হয়। পরবর্তীতে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেলে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম বিক্রি হয। ধামইরহাট পৌরসভার অন্তর্গত হাটনগর গ্রামের আমচাষী আবু সাঈদ বলেন,আগে এ আমের চাহিদা না থাকলেও এখন আম পাকার আগে বিভিন্নস্থান থেকে লোকজন আম কেনার জন্য অগ্রিম বায়না দিচ্ছেন।

রামরামপুর গ্রামের আমচাষী দেওয়ান আব্দুল হান্নান বলেন, রোগবালাই কম থাকার এ আম চাষ করা সহজ ও লাভজনক। যারা একবার এ আমের স্বাদ গ্রহণ করেছে পরবর্তীতে আবারও সংগ্রহের জন্য কৃষকদের নিকট ধরনা দিচ্ছেন। এ জেলার বাইরে এ আমের তেমন কোন পরিচিতি না থাকায় দেশবাসী এর শ্বাদ গ্রহণ করতে পারছে না। তবে বর্তমানে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অধিবাসীরা যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করছেন তাদের মাধ্যমে এ আমের স্বাদ গুন অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা গ্রহণ করছেন।

বর্তমানে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এ আমের চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধামইরহাটে আমের আড়ৎগুলো থেকে ব্যাপক পরিমাণে এ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা.শাপলা খাতুন বলেন,নাক ফজলী আম সব দিক থেকে অনন্য। এ আম কে ব্র্যান্ডিং আম হিসেবে পরিচিতির জন্য ইতোমধ্যে বিল বোর্ডসহ বিভিন্নভাবে প্রচারনা চালানো হচ্ছে।

এলাকার চাহিদা মেটানোর পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আম সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশেও রপ্তানীর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ২জুন থেকে গাছ থেকে নাক ফজলী আম নামানো শুরু হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris