এফএনএস : একবিংশ শতাব্দীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিপ্লবের এই যুগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পুরো পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিচ্ছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম। সব বয়সি মানুষের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, লিংক্ড ইন-এর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।
তবে দিন দিন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব আমাদের জীবনে এতই প্রকট আকার ধারণ করছে যে সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচকতাকে ছাপিয়ে নেতিবাচক দিকগুলোই প্রখরভাবে চোখে ধরা দিচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসক্তি পর্যালোচনা করলে ধরে নেওয়া যায় যে সোশ্যাল মিডিয়া তার প্রযোজনের সীমা ছাড়িয়ে ক্রমশই অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর দিকগুলোকেই গুরুত্ববহ করে তুলছে। তাই সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য আমাদের উচিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে এখনই সর্তক হওয়া।
সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটি প্ল্যাটফরম যেখানে ব্যবহারকারীরা অন্যান্যের সামনে নিজেদের উপস্থাপন করার একটি সুযোগ পায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের উচিত নিজেকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ করা। নিজের ব্যক্তিজীবনকে অতিরিক্ত খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় সমস্ত খুঁটিনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার পরিধি অনেক বেশি প্রসারিত এবং এখানে ভালো ও খারাপ উভয় মানসিকতার ব্যবহারকারীই রয়েছে। তাই যতটা প্রয়োজন ততটাই প্রকাশ করা এবং ব্যক্তিজীবনের গোপনীয়তা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিচিত অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গেই সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পাই, যাকে সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষায় বলা হয় ‘ফ্রেন্ড’ বা ‘ফলোয়ার’।
তাই সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধু নির্বাচনে বেশ সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ার পরিসীমা অনেক বড় এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই সেখানে অনেক ধরনের মানুষ রয়েছে। আর প্রসারতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন সোশ্যাল ক্রাইম। ফলে নির্বিচারে বন্ধু নির্বাচন আপনার জীবনে যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম দিতে পারে। তাই কাকে বন্ধু নির্বাচন করে আপনার ব্যক্তিজীবনে প্রবেশের অনুমোদন দিচ্ছেন, সে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে ছবি, ভিডিও ইত্যাদি শেয়ার করার সুযোগ। তাই নিজের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করার আগে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিন। কারণ, আপনার এই ছবি বিনা অনুমতিতে এবং আপনার অজান্তেই যে কোনো অবৈধ কাজে ব্যবহূত হতে পারে, যাতে আপনার গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হয়। এমনকি যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত বিপদেও আপনি পড়তে পারেন।
তাই নিজের ও পরিবারের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সর্তক থাকুন। এ ক্ষেত্রে প্রাইভেসি মেইনটেইন করুন। সর্বোপরি নিজের এবং পরিবারের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। সোশ্যাল মিডিয়া একটি সার্বজনীন প্ল্যাটফরম যেখানে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা, ধর্ম ও মতাদর্শের মানুষ রয়েছে।
একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে তা যেন কোনো মতাদর্শকে ক্ষুণ্ন না করে বা কোনো গোষ্ঠীর ভাবমূর্তিতে আঘাত না হানে সেই দিকে সতর্ক থাকতে হবে।
তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় কী শেয়ার করছেন বা নিজের মতামতকে কীভাবে অন্যান্যের সামনে উপস্থাপন করছেন সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়শই আমরা আমাদের অর্জন ও প্রতিভাকে অন্যান্যের সামনে তুলে ধরি। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
আপনার প্রতিভা বা অর্জনগুলোকে সেভাবেই সবার সামনে উপস্থাপন করুন যেন কেউ হীনম্মন্যতায় না ভুগে। বরং আপনার সাফল্য যেন অন্যান্যের অনুপ্রাণিত করে। সবার সামনে নিজেকে জাহির করার প্রবণতা পরিত্যাগ করা উচিত। বরং আমাদের উচিত বিনয়ী হওয়া এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ভালো কাজ দ্বারা অন্যান্যের উদ্বুদ্ধ করা।