শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
বাগমারায় এক স্কুলের সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এলাকাছাড়া! বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল জাতীয় চার নেতা কখনো মৃত্যু ভয় করেননি : লিটন প্রেমিককে কুপিয়ে জখম করল প্রেমিকা! গোদাগাড়ীতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ২ আসামি গ্রেপ্তার এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের সরে দাঁড়াতে নির্দেশ সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তিন প্রতারক রাজশাহীতে গ্রেফতার পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করে লাশ গুম করেছিলেন পুত্রবধূ! রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরা মুজিবনগর সরকার আমাদের প্রেরণা : আসাদ

অধিক সংখ্যক করদাতা নগদ অর্থই বৈধ করার সুযোগ বেশি নিয়েছে

Paris
Update : শনিবার, ২৯ মে, ২০২১

এফএনএস : অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার পরিধি চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে আগের তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত করা হয়েছে। জমি, ভবন ও অ্যাপার্টমেন্টের পাশাপাশি নগদ অর্থ, ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, বন্ড ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ ছিল। তবে বেশিরভাগ করদাতাই নগদ অর্থই বৈধ করার সুযোগ নিয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত আর ১০ হাজারের বেশি করদাতা এর সুযোগ নিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাজেটে নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত, আর্থিক স্কিম ও ইনস্ট্রুমেন্ট, সব ধরনের আমানত ও সঞ্চয়ী আমানত এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান সাপেক্ষে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ বাজেটে দেয়া হয়েছে। আর আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।

সূত্র জানায়, ১০ শতাংশ কর দিয়ে দুই শতাধিক করদাতা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিপরীতে অর্থ বৈধ করেছে। ওই খাতে ২৬০ কোটি টাকা বৈধ করার বিপরীতে এনবিআর কর পেয়েছে ২৬ কোটি টাকা। আর জমি কেনার মাধ্যমে দেড় হাজারের বেশি করদাতা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেছে। এ খাত থেকে সরকার কর পেয়েছে ১২৪ কোটি টাকা। অ্যাপার্টমেন্ট কিনে অর্থ বৈধ করেছে ২ হাজার ৬০০ করদাতা। ওই বাবদ করদাতারা সরকারকে ১২২ কোটি টাকা কর দিয়েছে।

আর ৬ হাজারেরও বেশি করদাতা নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত ও অন্যান্য আর্থিক স্কিমে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেছে। ওই বাবদ সরকার ১ হাজার ১০০ কোটি টাকারও বেশি কর পেয়েছে। সে হিসাবে ওই খাতে বৈধ হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি এনবিআরের বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে পাওয়া খসড়া হিসাব। চূড়ান্ত হিসাবে করদাতার সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

তাছাড়া জমি কেনার মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার বিষয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়, এলাকাভেদে প্রতি বর্গমিটারের জন্য নির্ধারিত কর পরিশোধ সাপেক্ষে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা যাবে। সেক্ষেত্রে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতি বর্গমিটার জমির জন্য ২০ হাজার টাকা কর দিতে হবে।

ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকার জন্য করের পরিমাণ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা।

আর অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার জমির ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটার ৫ হাজার টাকা, জেলা শহরের পৌরসভা এলাকায় ১ হাজার ৫০০ ও অন্য এলাকার জন্য ৫০০ টাকা হারে বাড়তি কর দিতে হবে। তাছাড়া অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করতে অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রেও এলাকাভেদে করের পরিমাণ ভিন্ন।

সেক্ষেত্রে গুলশান মডেল টাউন, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৪ হাজার টাকা। ফ্ল্যাটের আয়তন এর বেশি হলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৬ হাজার টাকা।

ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৩ হাজার টাকা এবং এর চেয়ে বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

আর ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্য সব এলাকা ও অন্যান্য সিটি করপোরেশনে ১২০ বর্গমিটার ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৭০০ টাকা, ১২০ থেকে ২০০ বর্গমিটারের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ৮৫০ টাকা ও ২০০ বর্গমিটারের চেয়ে বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য ১ হাজার ৩০০ টাকা কর দিতে হবে। আর জেলা শহরের পৌরসভা এলাকায় একই আয়তনবিশিষ্ট ফ্ল্যাটের জন্য প্রতি বর্গমিটারে যথাক্রমে ৩০০, ৪৫০ ও ৬০০ টাকা এবং দেশের অন্য সব এলাকার ক্ষেত্রে একই আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য ২০০, ৩০০ ও ৫০০ টাকা কর ধার্য রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, পুঁজিবাজারে সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগের বিষয়ে বাজেটে বলা হয়েছে, ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে ৩ বছরের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতারা পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।

সেক্ষেত্রে স্টক, শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট, বন্ড, ডিবেঞ্চার, সরকারি বন্ড ও সিকিউরিটিজ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত অন্য যে কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে। অবশ্য বাজারসংশ্লিষ্টদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সময়সীমা ৩ থেকে কমিয়ে এক বছর করা হয়।

প্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার জন্য গতবছরের বাজেট প্রস্তাবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) বিষয়টি উত্থাপন করেছিল। আগামী অর্থবছরের বাজেটেও অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করার সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তাছাড়া বর্তমানে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলেই বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস নিয়ে আয়কর প্রশাসন প্রশ্ন করবে না এমন বিধান রয়েছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ সুযোগ বহাল রেখেছে সরকার।

এদিকে চলতি অর্থবছরে পুঁজিবাজারে খুব বেশি পরিমাণ অর্থ না আসার বিষয়ে বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান জানান, জমি কিংবা অ্যাপার্টমেন্টের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রেও কাগজপত্রের পাশাপাশি এক বছরের জন্য বিনিয়োগ রাখতে হবে। অন্যদিকে নগদ অর্থ কিংবা ব্যাংক আমানতের ক্ষেত্রে কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা নেই বললেই চলে।

ফলে যাদের কাছে অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে তাদের জন্য সেটিই সহজ এবং তারা ওই সুযোগই বেশি নিয়েছে। সেজন্যই বিএমবিএ শুধু পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখার দাবি জানিয়েছিল।
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদদের মতে, বছরের পর বছর ধরে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তবে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলা যেতে পারে এ সময়ের মধ্যে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা না হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার বিষয়ে নমনীয় নয় বরং কঠোর অবস্থান নেয়া জরুরি। তাহলে যাদের কাছে অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে তারা তা বৈধ করতে বাধ্য হবে। তাছাড়া উৎপাদনশীল খাত যেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, স্বাস্থ্য খাত কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলা সংক্রান্ত প্রকল্পে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলেও সেটি অধিকতর কার্যকর হবে।

সাধারণ করদাতারা যে হারে কর দেয়, তার চেয়ে কম হারে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া একেবারেই অনৈতিক। তাতে সৎ করদাতারাও কর দিতে নিরুৎসাহিত হবে। তাছাড়া ব্যাংকে আমানত কিংবা সঞ্চয় স্কিমে নগদ অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার বিষয়টি তুলনামূলক সহজ হওয়ার কারণেই করদাতারা এর সুযোগ সবচেয়ে বেশি নিয়েছে।

কারণ সাধারণ করদাতাদের জন্য করহার ২৫ শতাংশ। আর যারা কর ফাঁকি দিচ্ছে তাদের জন্য ১০ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এটি এক ধরনের বৈষম্য। তাছাড়া সহজে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হলে তাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি প্রাকান্তরে উৎসাহিত করা হয়।

অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার প্রসঙ্গে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, ব্যবসায়ীরা অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করার আগ্রহী নয়। সরকারের উচিত শুধু শিল্প বা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ রাখা।

তাতে অনেক ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠা পেয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি গড়ে উঠবে অবকাঠামো, জনপদ। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, যতোদিন অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততোদিন পর্যন্ত তা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হবে। আসন্ন বাজেটেও এ সুবিধা থাকবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris