বুধবার

১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিক্রেতা উধাও তিন কোম্পানির

Paris
Update : সোমবার, ২৪ মে, ২০২১

এফএনএস : সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক, রিং সাইন টেক্সটাইল এবং ঢাকা ডাইং দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। এরপরও এই তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করতে চাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে ক্রেতা থাকলেও কোম্পানি তিনটির বিক্রেতা উধাও হয়ে গেছে। এর মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ঘোষণা করা লভ্যাংশ। আর রিং সাইনের শেয়ার দাম বাড়াতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা। তবে লোকসানে নিমজ্জিত ঢাকা ডাইংয়ের শেয়ার দাম বাড়ার পেছনের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এনআরবিসি ব্যাংক : গতকাল রোববার লেনদেন শুরু হতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যাংকটির শেয়ার দাম বেড়ে দিনের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। এরপরও একশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন শুরুর দাম ছিল ২৯ টাকা ৫০ পয়সা। তবে শুরুতে ২৯ টাকা ৮০ পয়সা করে ৫৫ হাজার ১০০ শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। এ দামে কেউ শেয়ার বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় কয়েক দফা দাম বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৮০ পয়সা করে শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে দাম বাড়ায় সর্বোচ্চ সীমায় চলে যায় কোম্পানিটির শেয়ার। এ দামেও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন না।

গত সপ্তাহজুড়েও কোম্পানিটির শেয়ার দামে বড় উত্থান হয়। এতে গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষস্থানটি দখল করে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসায় গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বাড়ে ৮ টাকা ৪০ পয়সা। শেয়ারের এমন দাম বাড়ার পেছনে ২০২০ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ঘোষণা করা লভ্যাংশ বড় ভূমিকা রেখেছে। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ তালিকাভুক্তির প্রথম বছরের বা ২০২০ সালের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের সাড়ে ১২ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ নগদ এবং ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার রয়েছে। এর ফলে ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডাররা ১০০টি শেয়ারের বিপরীতে নগদ ৭৫ টাকা এবং ৫টি সাধারণ শেয়ার পাবেন। এই লভ্যাংশ পাওয়ার যোগ্য বিনিয়োগকারী নির্বাচনে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৩১ মে। অর্থাৎ ৩১ মে যেসব বিনিয়োগকারীর কাছে ব্যাংকটির শেয়ার থাকবে তারই লভ্যাংশ পাবেন।
রিং সাইন টেক্সটাইল : পুঁজিবাজারের বহুল আলোচিত কোম্পানি রিং সাইন টেক্সটাইলকে গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলন করা অর্থের ৪০ কোটি টাকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

বিএসইসির এই সিদ্ধান্তের ফলে গতকাল রোববার লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে দিনের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। এরপরও একশ্রেণির বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন শুরুর দামই হয় ৭ টাকা ৮০ পয়সা। যা দিনের দাম বাড়ায় সর্বোচ্চ সীমা। তবে এ দামেও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন না। ২০১৮ সালের ১২ মার্চ পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বস্ত্রখাতের প্রতিষ্ঠান রিং সাইনকে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তোলার অনুমোদন দেয়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয়, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করতে শেয়ারবাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। আইপিওর কিছুদিনের মধ্যেই কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দেশ ছেড়ে যাওয়ার গুজবের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে জব্দ করা হয়। বিএসইসির অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যবস্থা নিয়েছিল। এর পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া উৎপাদন পুনরায় শুরুর মাধ্যমে ব্যবসা উন্নয়নের কোম্পানিটির পর্ষদ ভেঙে সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বিএসইসি।

কোম্পানিটির অনিয়ম অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ ছাড়া রিং সাইনের কেলেঙ্কারি তদন্তে ৬১টি বিও হিসাবের তথ্য তলব করে বিএসইসি। তবে সম্প্রতি শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে রিং সাইনের আটকে থাকা আইপিওর টাকা ব্যবহারের অনুমতি দিতে যাচ্ছে বিএসইসি। তারই প্রেক্ষিতে কয়েকদিন ধরে কোম্পানিটির শেয়ার দাম টানা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কমিশন সভা করে বিএসইসি রিং সাইনের আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলন করা অর্থের ৪০ কোটি টাকা ব্যবহারের অনুমতি দিল। এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র বলেন, ‘কমিশন সভায় রিং সাইনের অব্যাবহৃত আইপিও ফান্ড হতে ৪০ কোটি টাকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, এই অর্থ থেকে শ্রমিকদের অবসরভাতা ১৫ কোটি টাকা, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের বকেয়া তিন কোটি টাকা, তিতাস গ্যাসের বকেয়া তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণ ১০ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ঋণ ছয় কোটি টাকা এবং বিবিধ খাতে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা যাবে। তিনি আরও জানান, কমিশন সভায় নূন্যতম ৫১ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারের উপস্থিতিতে কোম্পানিটির আইপিওর অর্থ ব্যবহার পরিকল্পনা সংশোধন অথবা পরিবর্তনের ঘটনাত্তোর অনুমোদন দেয়া হয়।

এছাড়া আইপিওতে আসার আগে রিং সাইন প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে যে টাকা উত্তোলন করেছে বলে দেখিয়েছে, তার মধ্য থেকে কোনো অর্থ জমা না হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর শেয়ার এবং তার বিপরীতে ইস্যু করা সকল বোনাস শেয়ার বাজেয়াপ্ত করে কোম্পানির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ঢাকা ডাইং : গতকাল রোববার লেনদেনের শুরুতে ১২ টাকা ৯০ পয়সা করে কোম্পানিটির ১০০ শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। তবে যাদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার আছে তারা এ দামে বিক্রি করতে রাজি হননি। এরপর কয়েক দফা দাম বেড়ে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা করে লাখের ওপর শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। এতে দাম বাড়ায় সর্বোচ্চ সীমায় চলে যায় কোম্পানিটির শেয়ার।

এ দামেও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন না। হঠাৎ শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি লোকসানের মধ্যে নিমজ্জিত। ফলে ২০১৫ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারেনি কোম্পানিটি। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে পচা ‘জেড’ গ্রুপে রয়েছে কোম্পানিটি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris