শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু

Paris
Update : শনিবার, ১৫ মে, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গতকাল শনিবার থেকে গাছ নামানো হয়েছে মওসুমের প্রত্যাশিত রাজশাহীর আম। প্রথম দিন সব ধরনের গুটি আম পাড়তে পারছেন চাষিরা। আগামী সপ্তাহে দ্বিতীয় দফায় নামবে গোপালভোগ আম। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ ১৫ মে থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া শুরু হবে। তবে কোন আম আগে পাকলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে হবে।

রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে এই আম পাড়া যাবে। আর উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা পাড়া যাবে ২৫ মে থেকে এবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে পাড়া যাবে। এছাড়া ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি আম ১৫ জুন থেকে পাড়া যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে পাড়া যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম। অপরিপক্ব আমের বাজারজাত ঠেকাতে গত কয়েক বছর ধরেই রাজশাহীতে আম নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এবারও সিদ্ধান্ত নিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষ থেকে অনলাইন প্লাটফর্মে জুম মিটিং করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই যদি কোনো বাগানে আম পেকে যায় তাহলে চাষি তা নামাতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে হবে। তারপর ইউএনও সরেজমিনে বাগান পরিদর্শন করবেন। বাগানে তিনি প্রাকৃতিকভাবে আম পাকা দেখলে তা নামানোর অনুমতি দেবেন। এরপরই আম নামিয়ে বাজারে পাঠাতে পারবেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা এমন সিদ্ধান্তই হয়েছে ওই সভা থেকে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, গত কয়েক বছর থেকে আম নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণে ঢাকাসহ সারাদেশের ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন যে, কোনো রাসায়নিক মিশিয়ে রাজশাহীর আম পাকানো হয়নি, এটা প্রাকৃতিকভাবেই পেকেছে। ফলে রাজশাহীর আমের সুনাম অক্ষুণ্ন ছিল। তাই এবারও থাকবে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করা না হলে বাগানে প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি করা হতো। কেউ যেন আগেভাগে অপরিপক্ব আম নামাতে না পারেন সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হতো।

কিন্তু এতো জনবলও তাদের নেই। সব দিক বিবেচনায় আম নামানোর ক্ষেত্রে তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হলো। তবে আগে পাকলে অবহিতকরণের মাধ্যমে আম নামানোরও সুযোগ থাকল।
এদিকে চলতি বছর তাপদাহসহ প্রাকৃতিক বৈরিতায় গাছ থেকে আপনা আপনি ঝরে পড়ছে বাড়ন্ত আম। এতে রাজশাহীর বাগানগুলোতে কমেছে আমের পরিমাণ। তাই উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয়ে আছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলেছে, বাড়তি ফলন না হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ততর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৭০ হেক্টর বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক নয় মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্য হবে না বলেও মতামত রাজশাহী কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের।

এর আগে অসময়ে আম পাড়া ও কেমিক্যাল ব্যবহারে আম পাকানো বন্ধে সময় বেঁধে দেয় প্রশাসন। নিদের্শনার ব্যতয় যাতে না ঘটে সেটি নিশ্চিতে মৌসুমজুড়েই বিষয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত মনিটরিং করবে। রাজশাহীতে এ বছর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমি থেকে আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। ফলন ভালো। ঝড়-ঝঞ্ঝার কবলে না পড়লে এ আম দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris