বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

করোনার প্রাদুর্ভাবেও চলতি অর্থবছরে বেড়েছে রফতানি

Paris
Update : শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

এফএনএস : করোনা প্রাদুর্ভাবেও পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ নতুন মাইলফলক দেখলো। গত মাসে ৩১৩ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৫০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। আর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৩ হাজার ২০৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। ওই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ফলে চলতি বছর টানা ৪ মাস পর পণ্য রফতানি আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরল। করোনার কারণে গত বছরের এপ্রিলে সাধারণ ছুটির কারণে অধিকাংশ শিল্প-কারখানা ৩ সপ্তাহের মতো বন্ধ ছিল।

ওই কারণে রফতানি ব্যাপকভাবে কমে যায়। চলতি বছর করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার গত মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানাকে উৎপাদন চালানোর সুযোগ দেয়া হয়। ফলে রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গত বছরের এপ্রিলে রফতানি তলানিতে নেমে গেলেও এবার প্রবৃদ্ধি আকাশ ছোঁয়া। যদিও ২০১৯ সালের এপ্রিলে ৩০৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। তার তুলনায় গত মাসে রফতানি বেড়েছে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তৈরি পোশাক, পাট ও পাটপণ্য, চামড়া ও চামড়াপণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক পণ্য, রাসায়নিক পণ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রফতানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণেই সার্বিকভাবে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে হিমায়িত খাদ্যের রফতানি কমেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ ৩ হাজার ২০৭ কোটি ২৭ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। আগের অর্থবছর রফতানির ওই পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৪৯ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এপ্রিলে রফতানি হয়েছে ৩১৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য। আর গত বছরের এপ্রিলে ৫২ কোটি ডলারের রফতানি বিবেচনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। কিন্তু গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় প্রায় ৫০৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি বছরের এপ্রিলে রফতানির পরিমাণ কৌশলগত লক্ষ্যের তুলনায় কম। কৌশলগত লক্ষ্য ছিল ৩৩৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি। ওই হিসেবে কৌশলগত লক্ষ্যের চেয়ে রফতানি ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম হয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে রফতানি করা পণ্যের ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক। দেশের মোট রফতানির ওপরও তাই ওই পণ্যটির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি পোশাক পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় ২ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পোশাক। ওই হিসেবে ১০ মাসে পোশাক পণ্যের রফতানি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিলের পোশাক রফতানির সঙ্গে চলতি বছরের এপ্রিলের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এপ্রিলে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৭১ শতাংশ।

তবে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে করোনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্য কভিডের প্রভাবে ক্ষতি আরো বেশি হতে পারতো। কিন্তু কারখানা সচল রাখা ও সরকারি প্রণোদনার মতো কার্যকর সিদ্ধান্তের কারণে ওই ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। যদিও রফতানির আন্তর্জাতিক গন্তব্যগুলোর কোথাও কোথাও তৃতীয় এবং দেশে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণপ্রবাহের কারণে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, সার্বিকভাবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৩ হাজার ২০৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। অবশ্য চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আরো ৮৯৩ কোটি ডলার প্রয়োজন। আর মে ও জুন মাসে ওই পরিমাণ রফতানি অসম্ভব। কারণ গত ১০ মাস গড়ে ৩২০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। তার আগের বছর রফতানি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য।

তবে তৈরি পোশাকের রফতানি আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। ওই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে নিট পোশাকের রফতানি ১৫ শতাংশ বাড়লেও ওভেন পোশাকের রফতানি কমেছে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ। তাছাড়া চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ১০৩ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে।

ওই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। তাছাড়া ৯৫ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রফতানি হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫৪ শতাংশের বেশি। আর চলতি বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৭৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়া পণ্য, ৪৩ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্য, ৩৯ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য রফতানি হয়েছে। তার মধ্যে চামড়া ও চামড়া পণ্যে সাড়ে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এদিকে বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, কভিডের প্রথম সংক্রমণপ্রবাহের কারণে গত বছরের এপ্রিলের মধ্যেই প্রায় সোয়া ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক রফতানির বাজারগুলোয় এখনো ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলার লড়াই চলছে। এরমধ্যে শুরু হয়েছে তৃতীয় সংক্রমণপ্রবাহের প্রভাব। বর্তমানে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল না করলেও পণ্য জাহাজীকরণের সময় পিছিয়ে দিচ্ছে। আর রফতানির বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপরিশোধিত রয়ে যাচ্ছে।

পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর পর্ষদ প্রতিনিধিদের মতে, করোনার প্রভাবে সারা বিশ্বের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত। অর্থনীতির স্থবির চাকাকে চলমান রাখতে উদ্যোক্তাসহ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রীতিমতো সংগ্রামে লিপ্ত। সংকুচিত হয়ে পড়েছে কর্মক্ষেত্র। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নতুন লকডাউনে পড়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বিশাল এক জনগোষ্ঠী। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তার কোনো পূর্বাভাসও নেই। চরম প্রতিকূলতা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে বর্তমান সময় অতিবাহিত হচ্ছে। কারখানায় পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ নেই।

আগামী দিনগুলোতেও স্বাভাবিক মাত্রায় কার্যাদেশ পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। হাতে যেসব কার্যাদেশ রয়েছে বা রফতানি হচ্ছে, ওই অর্থও হাতে পেতে সময় লাগে ১৬০ থেকে ২০০ দিন। আবার ক্রেতারা আগের চেয়ে পোশাকের মূল্য কমিয়ে দিয়েছে ১০-১৫ শতাংশ। কোনো প্রকার দর কষাকষির সুযোগ নেই। শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মসংস্থান বজায় রাখার স্বার্থে লোকসান দিয়েই কার্যাদেশ নিতে বাধ্য হচ্ছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি কাঁচামালের বাজারেও চলছে এক চরম অনিশ্চয়তা। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের রফতানির প্রধান খাতটি চরম হিমশিম খাচ্ছে ।

এ বিষয়ে বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, এ পরিস্থিতির শেষ এখনো দেখা যাচ্ছে না। টিকে থাকতে লড়াই করতে হচ্ছে। আর লড়াইটা এখন পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছে সরকারের সহযোগিতায়। পরিস্থিতি আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কায় সরকারের কাছ থেকেও দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার প্রত্যাশা রয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris