শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনাকালে পশ্চিমা দেশে রফতানি বেড়েছে বাংলাদেশের বাইসাইকেল

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ৬ মে, ২০২১

এফএনএস : করোনাকালে পশ্চিমা দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বাইসাইকেল রফতানি বেড়েছে। কারণ বিশ্বজুড়েই এখন মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে। ফলে শরীরচর্চায় মনোযোগের অংশ হিসেবে পরিবর্তন এসেছে তাদের চলাচলের বাহনেও। পশ্চিমা দেশগুলোতে আগে ব্যক্তিগত গাড়ির বহুল ব্যবহার থাকলেও এখন বাইসাইকেলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে কভিড-১৯ মহামারীকালে আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্যসচেতন হয়েছে পৃথিবীর মানুষ। ওই বাস্তবতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়েছে দ্বিচক্রযানের চাহিদা।

কভিডকালে কেবল বাংলাদেশেই বাইসাইকেল রফতানি বেড়েছে ৪২ শতাংশ। কভিড-১৯ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাইসাইকেলের চাহিদা বৃদ্ধিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। ফলে বাংলাদেশের বাইসাইকেলের রফতানি বেড়েছে। আর তার বেশির ভাগই ইউরোপের বাজারে গেছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান গন্তব্য ছিল জার্মানি। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বাইসাইকেলের চাহিদা পূরণে টেকসই বাণিজ্যের জন্য সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন বলে খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের বাইসাইকেল রফতানি চাহিদার উল্লম্ফন ফুটে উঠেছে। ইপিবির তথ্যানুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ ৮ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারের বাইসাইকেল রফতানি করেছে। চলতি অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ডলার। কিন্তু চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসেই ১২ মাসের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ছুঁই ছুঁই। এই ৯ মাসে রফতানি হয়েছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার ডলারের বাইসাইকেল।

এই সময়ের কৌশলগত লক্ষ্য ছিল ৭ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রফতানি। অর্থাৎ ৯ মাসের কৌশলগত লক্ষ্যের বিপরীতে বেশি রফতানি হয়েছে ২৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের ৯ মাসের তুলনায় এ বছর রফতানি বেড়েছে ৪২ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৯ মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ৬ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বাইসাইকেল রফতানি করেছিল বাংলাদেশের রফতানিকারকরা।

সূত্র জানায়, স্থানীয় বাজারে বাইসাইকেলের ব্যবহার আগেও ছিল। কিন্তু তা ছিল অনেকটাই প্রয়োজননির্ভর। কিন্তু এখন অনেকেই স্বাস্থ্যসচেতনতার অংশ হিসেবে বাইসাইকেলকে কাজে লাগাচ্ছে। এখন বাইসাইকেল একটা লাইফস্টাইল পণ্যে পরিণত হয়েছে। কভিড স্থানীয় বাজারেরও চাহিদা বৃদ্ধিতে একটা মাত্রা যোগ করেছে। কারণ কভিডকালে গণপরিবহন ব্যবহার স্বস্তিকর নয়, আবার লকডাউনসহ নানা কারণে সবসময় গণপরিবহন পাওয়াও যায় না। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরীরচর্চা কেন্দ্রগুলো বন্ধ। অনেক দেশে গণপরিবহনও বন্ধ রাখা হয়। ফলে শরীরচর্চার বিকল্প হিসেবে ও যাতায়াতের সুবিধার জন্য মানুষ এখন বাইসাইকেল বেছে নিচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ থেকে বাইসাইকেল রফতানি করছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মেঘনা গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল, চট্টগ্রামের সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তার মধ্যে প্রাণ-আরএফএল রফতানি বাজারের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে শক্তিশালী ব্র্যান্ড তৈরি করতে পেরেছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বাজারে প্রাণ-আরএফএলের দুরন্ত ব্র্যান্ডের বাইসাইকেল তৈরি ও বাজারজাত শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটি পরের বছরই রফতানি শুরু করে। এ মুহূর্তে বিশ্বের ১০টি দেশে ওই কোম্পানির বাইসাইকেল রফতানি হয়। তার মধ্যে প্রধান বাজারগুলো হলো যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও বেলজিয়াম।

আন্তর্জাতিক বাজারে যে বাইসাইকেলগুলো যাচ্ছে, তা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হয়ে রফতানি হয়। ওসব পণ্য বাজারভিত্তিক তৈরি হয়। ওই হিসেবে লো-এন্ড বাইসাইকেলগুলো দেশের বাজারেই বিক্রি হয়। আর বহির্বিশ্বে যায় উচ্চমানের বা হাই-এন্ড বাইসাইকেলগুলো। যার দামই ১ লাখ টাকা থেকে শুরু হয়। এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে কভিডকালে প্রাণ-আরএফএলের সাইকেলের চাহিদা অনেক বেড়েছে। রফতানির ক্রয়াদেশ বা চাহিদা বৃদ্ধিটা অনেক বেশি। অনেক সময় চাহিদা মেটানোও সম্ভব হয় না।

বে এখন সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে বছরে এখন কোম্পানিটির বাইসাইকেল তৈরির সক্ষমতা ৭ লাখ পিস। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও বাইসাইকেলের চাহিদা বেশ ভালো। চাহিদা বৃদ্ধির কারণ মূলত তরুণদের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ার প্রবণতা।

এদিকে বাইসাইকেল খাত সংশ্লিষ্টরা এ খাতে নগদ সহায়তার ওপর জোর দিচ্ছে। কারণ সরকারের সহায়তা পেলে বাইসাইকেল খাতটি আরো টেকসই করা সম্ভব হবে। পশ্চিমা দেশগুলো বাইসাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সড়কে আলাদা লেন বসানোর মাধ্যমে নানা রকমের নীতিসহায়তা দিচ্ছে। কভিড-১৯ মোকাবেলাজনিত স্বাস্থ্যসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধির মতো বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সেসব দেশের সরকারগুলো সচেতনভাবে ওসব সহযোগিতা দিচ্ছে।

সেজন্যই আসন্ন বাজেটে কিছু নীতিসহায়তা চাওয়া হয়েছে। যেমন বন্ড ফ্যাসিলিটি পেলে বাইসাইকেল খাতের অনেক উপকার হবে। বন্ড ফ্যাসিলিটির পাশাপাশি নগদ প্রণোদনাও প্রয়োজন। মোটা দাগে বলতে গেলে পোশাক রফতানিতে যে নীতিসহায়তাগুলো দেয়া আছে, সেগুলো দেয়া হলে বাইসাইকেলেও নানা সফলতা আসবে। বাইসাইকেল তৈরিতে অনেক উপকরণ আমদানিও করতে হয়। সেখানেও দীর্ঘসূত্রতার মুখোমুখি হতে হয়। মেঘনা গ্রুপের সঙ্গে জার্মানির একটি যৌথ অংশীদারিত্বভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাইসাইকেল প্রস্তুতকারক ওই কোম্পানিটির নাম টিউব। মেঘনা কারখানায় তৈরি হওয়া সাইকেলগুলোর দাম ন্যূনতম ১২০ ডলার।

অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ও মেঘনা গ্রুপের ডিরেক্টর অপারেশনস লুৎফুল বারি জানান, এখন ইউরোপের বাজারেই বাইসাইকেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ইউরোপে আগের চেয়ে বাহন হিসেবে বাইসাইকেলের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। বাইসাইকেল ব্যবহার বৃদ্ধিতে সরকারও উৎসাহ দিচ্ছে। যার প্রতিফলন হিসেবে সড়কগুলোতে বাইসাইকেলের আলাদা লেন দেখা দিচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris