শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পরাজয় যে ৬ কারণে

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১

এফএনএস : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস আর কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নির্বাচনী লড়াইটা যে হাড্ডাহাড্ডি হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। নির্বাচনে ২১৩ আসনে জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস আর বিজেপি পেয়েছে ৭৭টি আসন। যদিও বিজেপির প্রচার-প্রচারণা দেখে মনে হয়েছিল বিজেপিই ক্ষমতায় আসতে চলেছে। কিন্তু দুই সংখ্যাও পার করতেও পারেনি। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দলটির পরাজয়ের পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। অন্যদিকে এনডিটিভি অনলাইনে লেখা সত্যহিন্দি ডটকমের সম্পাদক ও লেখক আশুতোষ বিজেপির হারের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দিক উল্লেখ করেছেন।

যে যুক্তিটি আশুতোষ তুলে ধরেছেন, সেটি হলো রাজ্যে ক্ষমতায় থেকেও ‘ভিক্টিম কার্ড’খেলে সাফল্য পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থেকেও নিজেকে ভুক্তভোগী হিসেবে তুলে ধরেছেন। বিজেপিকে আগ্রাসী সেনানী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, বাইরে থেকে এসে বিজেপি যেকোনো মূল্যে রাজ্য জয় করতে চায়। আট দফার ভোটের ময়দানে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের মধ্য দিয়ে অবশ্য এমন অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা মেনে নিয়েছে ভোটাররা। শেষ সময়ে এসে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে মমতার নিকটতম কর্মকর্তাদের বদলিও একই বার্তা দিয়েছে।

মমতা তাই শুরু থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহকে দোষী সাব্যস্ত করে বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁকে হারাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। ২. রাজ্য বিজেপি নেতারা প্রচারপর্বে অনেক পরিশ্রম করলেও কোনো মুখ তুলে ধরতে পারেননি। এই সিদ্ধান্ত ছিল বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরই। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা বার বার বলেছেন, বাংলার ‘ভূমিপুত্র’ই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কিন্তু আলাদা করে কারও নাম বলেননি।

অন্যদিকে, তৃণমূলের মুখ ছিলেন ১০ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকা লড়াকু নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩. নীলবাড়ির লড়াইয়ে বাংলার কোনো নেতাকে মুখ হিসেবে তুলে না ধরার জন্য বড় বেশি নির্ভরতা ছিল কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপরে। আর সেই নির্ভরতাকে ‘বহিরাগত’তকমা দিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি প্রাথমিকভাবে মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ তৃণমূলের এই আক্রমণকেই সমর্থন দিয়েছে বাংলার মানুষ। ৪. ধর্মীয় মেরুকরণকে হাতিয়ার করে নীলবাড়ির লড়াইয়ে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল বিজেপি।

প্রচারপর্বে অনেক ক্ষেত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ তুলতে কড়া ভাষা প্রয়োগ করেছেন নেতারা। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে এর ফলে মুসলিম ভোট একাট্টা হলেও হিন্দু ভোটের সিংহ ভাগ ঝুলিতে টানা যায়নি। অন্যদিকে নির্বাচনি প্রচারণায় চণ্ডীপাঠ করে হিন্দুদের আস্থা ধরে রাখেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। ৫. রাজ্য বিজেপি আরও একটি কারণকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দলের উচ্চাভিলাষী বক্তব্য, ২০১৬ সালে বিজেপি রাজ্যে মাত্র তিনটি আসনে জিতেছিল। সেখান থেকে একেবারে ক্ষমতায় আসার যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল তা দলের অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেকটাই বেশি।

লোকসভা নির্বাচনের ফলকে বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য দেওয়া ঠিক হয়নি। তাই এই হারকে বড় মনে হচ্ছে। ৬. বিজেপিতে ‘আদি ও নব্য’বিবাদ অনেকদিনের। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই এই অভিযোগ নিয়ে দলের মধ্যে অনেক বিবাদ হয়েছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে তৃণমূল থেকে যাঁরা এসেছেন, তাদের প্রাধান্য দেওয়া দলের কর্মী, সমর্থক এবং ভোটাররা ভালো চোখে নেয়নি বলেই মনে করছে বিজেপি। আবার রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, রাজ্যের সর্বত্রই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেক ভুল ছিল।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris