শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মামুনুলের বিরুদ্ধে কথিত স্ত্রী ঝর্ণার ধর্ষণ মামলা

Paris
Update : শনিবার, ১ মে, ২০২১

এফএনএস : বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। এই নারীর অভিযোগ, মামুনুল হক তার সরলতার সুযোগ নিয়ে তার সঙ্গে অন্যায় করেছেন। অনেক দিন ধরে প্রতারণা করেছেন। তিনি রাষ্ট্রের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চান। গতকাল শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জান্নাত আরা ঝর্ণা এসব কথা বলেন। এর আগে, সকালে সোনারগাঁ থানায় গিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি লিপিবদ্ধ হয়। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। মামলার এজাহারে ঝর্ণা বলেছেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। আমাকে গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির নাম করে নিয়ে গিয়ে তার পরিচিত বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রীযাপন ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তার যৌন লালসা চরিতার্থ করে। আমি বিয়ের কথা বললে সে আমাকে করব-করছি বলে নানান অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে।

গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানাধীন রয়েল রিসোর্টে জান্নাত আরা ঝর্ণাসহ মামুনুল হককে আটক করে স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে ঝর্ণাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন মামুনুল। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মামলার এজাহারে ঝর্ণা বলেছেন, সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল আমাকে ঘোরাঘুরির কথা বলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে নিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থানকালে স্থানীয় জনগণ আমাদের আকস্মিকভাবে আটক করে এবং আমাদের (মামুনুল হক ও আমার) পরিচয় জানতে চায়। আমরা কোনও সদুত্তর দিতে না পারায় স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়ি। পরবর্তীতে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। এজাহারে তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলে মামুনুল হক আমাকে আমার নর্থ সার্কুলার রোডের ভাড়া বাসায় যেতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে জোরপূর্বক আটকে রাখে।

এ সময় আমি আমার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। একপর্যায়ে সুকৌশলে আমার বড় ছেলে আবদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার দুরবস্থার কথা জানাই এবং আমাকে এই বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরবর্তীতে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে আমাকে আমার বাবার জিম্মায় দেয়। মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয়ের বর্ণনা দিয়ে ঝর্ণা তার এজাহারে বলেন, আমার সাবেক স্বামী শহীদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমাদের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সুখে-শান্তিতে অতিবাহিত হচ্ছিল।

স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের বাসায় মামুনুল হকের অবাধ যাতায়াত থাকায় পরিচয়ের শুরু থেকেই আমার ওপর তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। যার ফলে আমাদের ছোটখাটো সাংসারিক মতানৈক্যের মধ্যে সে কৌশলে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকে। মামুনুল হকের কু-মন্ত্রণায় আমাদের দাম্পত্য জীবন চরম বিষিয়ে ওঠে। সাংসারিক এই টানাপড়েনের মধ্যে মামুনুল হকের পরামর্শে ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এজাহারে বলা হয়েছে, বিচ্ছেদের পর আমি পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি।

আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে সহযোগিতার নাম করে কৌশলে ঢাকায় আসার জন্য আমাকে প্ররোচিত করে। আমি একজন আলেমকে ভরসা করে সরল বিশ্বাসে তার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় আসার পর শুরুতে আমাকে তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীদের বাসায় আমাকে রাখে এবং নানান ভাবে আকার ইঙ্গিতে আমাকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। একপর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। এরই ধারাবাহিকতায় তার পরামর্শে আমি কলাবাগানের নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় সাবলেট ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করি এবং তার ঠিক করে দেয়া একটি বিউটি পার্লারে কাজ শিখতে থাকি।

এদিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়েরের পর কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ঝর্ণার মেডিকেল টেস্ট করা হয়। এর সকালে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। মামলা হওয়ার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জান্নাতকে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়ে যায় সোনারগাঁ থানা পুলিশ। সেখান থেকে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনারগাঁ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, জান্নাত আরা ঝর্ণা মামলা দায়েরের পর তাকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য মহিলা পুলিশের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। মেডিকেল পরীক্ষার পর তিনি নিজের বাসায় চলে যান। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, সোনারগাঁ থানার ধর্ষণ মামলায় ভিকটিম জান্নাত আরা ঝর্ণাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। পরে গাইনি বিভাগের তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে তার মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয়।

যথাসময়ে মেডিকেল রিপোর্ট সোনারগাঁ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এদিকে জান্নাত আরা ঝর্ণা গতকাল শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) সাংবাদিকদের বলেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমার সঙ্গে অন্যায় ও প্রতারণা করেছেন। আমি রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাই। মামুনুল হক আমার সঙ্গে যে ধরনের অন্যায় করেছেন আর কোনো নারীর সঙ্গে যেন এমন করতে না পারেন, সেজন্য তার সেই ধরনের বিচার হওয়া উচিত। মামুনুল হক আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris