শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চলতি বছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৫-৬ শতাংশ

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২১

এফএনএস : চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে তারা এখন বলছে, বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে। গতকাল বুধবার ‘লঞ্চ অব এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এডিবি। তাতে এডিবি বলেছে, বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আবার চাপে পড়েছে।

সরকার সংক্রমণ রোধে লকডাউন দিয়েছে ও ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ করেছে। এসব পদক্ষেপ জীবন বাঁচাবে, কিন্তু জীবনযাপনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি কমিয়ে দেবে। তারা আরও বলেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চললেও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। আমরা যখন পূর্বাভাস দিয়েছিলাম, তখন এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ফলে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি অর্জন হওয়ার যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, তার থেকে কমপক্ষে ১ শতাংশ কম অর্জিত হতে পারে। এই অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি অর্জিত হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ।

বৈশ্বিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালে এবং যথাযথভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে ২০২২ অর্থবছরে (২০২১-২২) প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ বলেও জানিয়েছে এডিবি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রফতানি ও রেমিটেন্স আগের মতোই ভালো অবস্থায় থাকতে পারে। একইভাবে কৃষি, সেবা ও শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। রাজস্ব আদায় গত বছরের চেয়েও এ বছর বেশি হতে পারে। মূল্যস্ফীতি থাকতে পারে ৫.৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। আর আমদানি যেমন আছে, তেমনই থাকতে পারে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা সঙ্কুচিত হতে পারে।

টিকা কিনতে ৮ হাজার ৮৪ কোটি টাকা: বংলাদেশের জনগণের জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহে ঋণ ও অনুদান মিলে ৯৪ কোটি ডলার দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রতি ডলার সমান ৮৬ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৮৪ কোটি টাকা। প্রদিবেদনে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন সহায়তার বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনের। এ সময় বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এডিবি ইতোমধ্যেই ৬৫ কোটি ডলার ঋণ ও ৭ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে করোনা সংকট মোকাবিলায়।

দুই কর্মসূচির আওতায় এডিবি আরো ৫০ কোটি ডলার দেবে এডিবি। এই ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া টিকা কর্মসূচির জন্য দেবে ৯৪ কোটি ডলার। ২০২১ থেকে ২০২৩ অর্থবছরে নানা প্রকল্পে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে সংস্থাটি। কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, চলতি অর্থবছর ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে করোনার দ্বিতীয় ঢেওয়ের উপর। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের চাপে এটি পাঁচ দশমিক পাঁচ থেকে পাঁচ দশমিক আট শতাংশও হতে পারে। করোনার ভ্যাকসিন সংকটের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক কোম্পানির সক্ষমতা রয়েছে।

তাই দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে জোর দিতে হবে। এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুকি সোয়াদা বলেন, ভারত যে গতিতে টিকাদান চালিয়ে নিচ্ছে, তাতে আগস্টের মধ্যে সেখানে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে ২০২২ সালেই হয়তো ভারত ‘হার্ড ইমিউনিটিতে’ পৌঁছে যাবে। এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর গতি যতটা হবে বলে আগে ভাবা হয়েছিল, এবছর তার চেয়ে বেশি হবেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বাড়লে এবং টিকাদানের গতি কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাড়ানো না গেলে অঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ানো কঠিন হবে।

এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি (৫.৫ থেকে ৬ শতাংশ) অর্জনের বিষয়ে দেয়া পূর্বাভাসের চেয়েও প্রত্যাশা আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বুধবার দুপুরে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, এরা (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) যে পূর্বাভাস দিয়ে আসছে তা আমাদের অর্জনের কাছাকাছি থাকে।

যদিও আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি। তবুও এটি যদি আমরা অর্জন করতে পারি তাহলে সাউথ এশিয়া, সাউথ ইস্ট এশিয়ায় সবার ওপরে থাকবে বাংলাদেশ। এটা কিন্তু তাদের বক্তব্য। আমাদের প্রত্যাশা আরও উপরে। সেটা বছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা তথ্য নিরূপণ করতে পারব না। তারপরও আমি বলব, তারা যা বলেছে সেটাও কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক বড় অন্যান্য দেশের তুলনায়। বৈঠকে সরাসরি পদ্ধতিতে ওষুধ ও পিপিই কেনার অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেকোনো প্রস্তাবে খুটিনাটি সব বিষয় দেখে, সকল নিয়ম অনুসরণ করে আমরা প্রস্তাব অনুমোদন করে থাকি।

কোনো মন্ত্রণালয় প্রস্তাবনা দেয়ার পর যদি কোনো ব্যত্যয় থাকে, মিসম্যাচ হয় বা কোয়ালিটি এনশিওর করতে না পারে, সেটা তাদের ব্যাপার। তারপরও আমরা এখান থেকে দেখাশোনা করি। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এফবিসিসিআই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, আমি এ বিষয়ে জানি না। আমার কাছে এ ধরনের কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। কেউ দেখাও করেনি, আলোচনাও হয়নি। সুতরাং ব্যাংকের বিষয়ে কী করতে চাচ্ছে সেটা জানি না।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris