বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

‘করোনার ভয়াবহতা জেনেও ভুল করলে আবারও মাশুল দিতে হবে’

Paris
Update : বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১

এফএনএস : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কিভাবে আসল তা থেকে শিক্ষা না নিলে তৃতীয় ঢেউয়ের দিকে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে টিকা নেয়ার পর আমরা মনে করলাম করোনামুক্ত হয়ে গেছি। বেপরোয়াভাবে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। পর্যটন কেন্দ্রে গেলাম, বিয়েতে গেলাম, পিকনিক করলাম, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করলাম কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানলাম না। এ কারণে করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেল।

কিন্তু আমরা যখন জানি করোনা কিভাবে ছড়ায়, এর কি ভয়াবহতা, এসব জেনেও যদি আবারও ভুল করি তাহলে আবারও ভুলের মাশুল দিতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে ‘কোভিড-১৯ মহাদুর্যোগে বিশ্ব: দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় জনসচেতনতার গুরুত্ব’ ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনার কি ভয়াবহতা তা দেখতে পাচ্ছি। অন্যান্য দেশের ভুল ও আমাদের দেশের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাই।

আমরা করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়াতে চাই না, কমাতে চাই। এখনও প্রতিদিন একশ’ রোগীর মৃত্যু ও তিন-চার হাজার আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ মাসখানেক আগে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল খুবই কম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি প্রচার-প্রচারণা ও নানা পদক্ষেপের ফলে মাস্ক ব্যবহারে জনসচেতনতা আগের চেয়ে বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুধু রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারে। কিন্তু রাস্তাঘাট ও হাটবাজারে মানুষের নিয়ন্ত্রণ এ মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। তবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে মানুষকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত টিকাসহ অন্যান্য দেশ থেকে টিকা আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বার বার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, লোকাল এজেন্ট বেক্সিমকোর মাধ্যমেও করোনার টিকা আনার চেষ্টাও চলছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিকা নিয়ে পৃথিবীতেই একটা টানাপোড়েন আছে। কারণ টিকার প্রয়োজন অনেক, কিন্তু উৎপাদন কম। ১০টি ধনী রাষ্ট্র ৭০ শতাংশ টিকা নিয়ে গেছে। ৫০ থেকে ৬০টি রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত নিতেই পারেনি।

আমাদের আশপাশে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে সীমিত আকারে টিকা দিলেও ব্যাপকহারে আমাদের মতো দিতে পারেনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক দেশের আগে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে। সফলভাবে টিকা প্রদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল এবং তা প্রশংসিতও হয়েছে। গত বছরের মে মাস থেকে আমরা টিকা কেনার কার্যক্রম গ্রহণ করি। আমরা তিন কোটি ডোজের অর্ডার দিয়েছিলাম। টাকা পয়সাও আমরা দিয়েছি। আফসোসের বিষয় টিকাটা সময়মতো পাচ্ছি না। যার ফলে টিকা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এখানকার লোকাল এজেন্ট বেক্সিমকো, তারাও চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ছাড়া সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে টিকা আনার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বসে নেই। আমরা চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যোগাযোগ বেশ এগিয়েছে। আগামীতে এসব দেশ থেকে বেশকিছু টিকা আনতে পারবো। চীন পাঁচলাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এগুলো পেতে যে কাগজপত্র লাগে সেগুলোও আমরা দিয়ে দিয়েছি। আমরা এখন অপেক্ষায় আছি চীন কবে এই টিকা পাঠাবে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনই একমাত্র কার্যকরী উপায় নয় বলে মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেটে যাওয়ার উপর জোড় দেন তিনি। বলেন, বেঁচে থাকলে অনেক ঈদ করতে পারবেন। তিনি বলেন, তিন সপ্তাহ লকডাউন দিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কমেছে। ইউরোপ ও আমেরিকাও একইভাবে সংক্রমণ কমিয়েছে। তবে লকডাউনের নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। এর ফলে অর্থনীতি ও লেখাপড়ার ক্ষতি হয়ে যায়। দারিদ্রতার হার ও সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। কিন্তু তারপরও সংক্রমণ হ্রাস ও জীবন বাঁচাতে সরকারকে লকডাউন দিতে হয়েছে।

আর লকডাউনের কারণেই সংক্রমণের হার ২৪ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশ কমে এসেছে। এটি লকডাউনের বড় ফল। কিন্তু লকডাউন তো দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার উপর গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, লকডাউন নয় দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। ঘন ঘন সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া। ভিড় এড়িয়ে চলা। পাশাপাশি গোটা জাতিকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা। এটি হলো বড় কার্যকরী পদ্ধতি।

দোকানপাট ও শপিং মল খুলে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে গত তিন সপ্তাহ দোকানপাট ও শপিং মল বন্ধ ছিল। এর সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ ও কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ জড়িত। বেশি দিন বন্ধ থাকলে তাদের আয় রোজগারে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে কিছু প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ ও গাইড লাইন দিয়ে মার্কেট ও শপিং মল খুলে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঈদের সময় ক্রেতা যারা মার্কেটে যাবেন তারা মাস্ক পরিধান করে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাবেন। বেঁচে থাকলে অনেক ঈদ করতে পারবেন। ঈদের আনন্দ যেন নিরানন্দে পরিণত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এদিকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) একেকজন করোনা রোগীর চিকিৎসায় দিনে সরকারের ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জাহিদ মালেক জানান, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সাত হাজার শয্যা রয়েছে। একটি শয্যায় একজন করোনা রোগীর চিকিৎসায় দিনে সরকারের ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এরমধ্যে আইসিইউতে যারা চিকিৎসা নেন, প্রতিদিন তাদের একজনের জন্য সরকার প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে। এভাবে গত এক বছর ধরে সরকার করোনা রোগীদের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে রাজধানীর মহাখালীতে এক হাজার শয্যার ডিএনসিসির করোনা হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই হাসপাতালে ২১২টি আইসিইউ রয়েছে। সবমিলে আইসিইউ সমমনা শয্যা রয়েছে ৫০০টি। এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা আরও বাড়ানোর কাজ চলছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি তরুণেরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তরুণদের একটি বড় অংশ মাস্ক পরতে চান না।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়েও তারা উদাসীন। এতে তরুণদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। তাদের মাধ্যমে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বয়োজ্যেষ্ঠ মারা যাচ্ছেন। তাই করোনা নিয়ে আর অবহেলা না করে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris