শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনার কারণে ৫ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের কর্মস্থলে ফেরা অনিশ্চিত

Paris
Update : বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১

এফএনএস : প্রবাসী শ্রমবাজারের গন্তব্য দেশগুলো এখনো করোনার প্রথম ঢেউয়ের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরই মধ্যে আবার হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে করোনার দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ। যদিও প্রবাসী শ্রমবাজার নিয়ে চলতি বছরের শুরুতে আশা জেগে উঠেছিল। যার প্রভাবে এখন পর্যন্ত রেমিটেন্স প্রবাহ সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে-বিদেশে সবখানে আবারো শঙ্কার মেঘ দেখা দিয়েছে। দেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হওয়ায় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাইপলাইনে থাকা ৫ লাখ প্রবাসীর কর্মসংস্থানে ফেরা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে ওই জটিলতা কাটাতে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশেষ ফ্লাইটে কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ হয়েছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার এখনো করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কাই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার মধ্যেই রেমিটেন্স আয়ের প্রধান এ খাতটি দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে এক বছরে ৯ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত আসে। তবে পরবর্তীতে করোনার প্রভাব কমায় কিছু প্রবাসী শ্রমিক কর্মস্থলে ফেরত যেতে পেরেছে। কিন্তু এখন করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাড়ে ৫ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে লকডাউনের মধ্যেই বিমান সংস্থাগুলো প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে উড়াল দেয়া শুরু করেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞরা সঙ্কট কাটিয়ে উঠার জন্য কর্মীদের করোনা থেকে সুরক্ষা দেয়া, ভ্যাকসিনেশন, বিমান ভাড়া সহনীয় রাখাসহ বেশকিছু সুপারিশ করেছেন।

সূত্র জানায়, গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৪ জন দেশে ফিরেছে। তার মধ্যে সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ১৯ হাজার ১৭২ জন ফিরে এসেছে। তাছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৬৬ জন, ওমান থেকে ২৪ হাজার ৪৫৭ জন, কুয়েত থেকে ১৫ হাজার ২২৭ জন, বাহরাইন থেকে ৪ হাজার ৪৮৪ জন, কাতার থেকে ৪৯ হাজার ২৫২ জন, মালয়েশিয়া থেকে ১৭ হাজার ১০৬ জন, মালদ্বীপ থেকে ১৫ হাজার ৯৭৭ জন ও সিঙ্গাপুর থেকে ৮ হাজার ৪২৪ জন ফিরেছে। আর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৮৫ হাজার ২৪২ জন কর্মী বিভিন্ন দেশে গেছে।

আর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ৬৯ হাজার ৯৮৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৫৯ হাজার ১৩৯ জন এবং মার্চে ৫২ হাজার ৯১ জন প্রবাসী শ্রমিক কর্মস্থলে গিয়েছিল। ফলে ৩ মাসে মোট সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ২১৮ জন। তারপর ৪ মাসেরও বেশি সময় করোনার কারণে শ্রমবাজার থমকে ছিল। তবে আগস্টে বৈদেশিক শ্রমবাজার আবার সচল হলে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩৬ হাজার কর্মী বিদেশে যায়।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরাতে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারে সরকার শতাধিক বিশেষ ফ্লাইটের অনুমোদন দেয়। ওই ৫টি দেশ হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর। ওই দেশগুলোতে এখন বিশেষ ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। তবে বিশেষ ফ্লাইটের নামে প্রবাসগামী কর্মীদের কাছ থেকে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে রেমিটেন্স প্রবাহের ওপর এই চাপ পড়বে। বর্তমানে প্রতিবছর দেশে যে রেমিটেন্স আসে, তার প্রায় অর্ধেক পাঠায় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীরা।

এদিকে শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এদেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে ভবিষ্যতে শ্রম বাজার চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে। ওমান ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশী যাত্রীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এদেশে কর্মীরা এয়ার টিকেটের জন্য যেভাবে ঘোরাঘুরি করছে তাতে ওসব জায়গা থেকেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে এদেশের শ্রমবাজারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, মিয়ানমার ইত্যাদি।

ওসব দেশের করোনা পরিস্থিতি খুবই ভাল। ওই কারণে তারা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে। এদেশের শ্রমিকদের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বাজারে একটা ভাল ধারণা দেয়া প্রয়োজন। সেজন্য প্রয়োজন বিদেশগামী শ্রমিকদের সুরক্ষা। আর ওই সুরক্ষার চিত্র বিশ্ব বাজারে তুলে ধরা এই মুহূর্তে সব থেকে বড় কাজ। বিদেশে এদেশের শ্রমবাজার ধরে রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য হজযাত্রীদের মতো বিদেশগামী কর্মীদেরও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা জরুরি।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গেৎ বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, নতুন বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে অনেক শ্রমিক বাইরে গেছে। নতুন আশা জাগছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের কারণে চিন্তায় পড়েছে লাখ লাখ শ্রমিক। এরই মাঝে অনেক দেশে করোনা বেড়ে গেছে। অনেক দেশে আগের পরিস্থিতি বিরাজমান। ফলে বৈদেশিক শ্রমবাজার খুললেও শঙ্কা কাটেনি। করোনা পরিস্থিতি না কেটে যাওয়া পর্যন্ত শ্রমবাজার আগের অবস্থায় ফেরার কোন সম্ভাবনাও নেই। তবে আকামার মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় অনেককেই এখন বাধ্যতামূলক ফিরতে হবে। নইলে আরো ভোগান্তি বাড়বে।

একই প্রসঙ্গে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম জানান, যারা ফেরত এসেছে দেশে তাদের আয়ের পথগুলো কী হবে তা নিশ্চিত করার সময় এসেছে। তাছাড়া যারা বিদেশ যাচ্ছে তাদের যাওয়ার পদ্ধতি আরো নিরাপদ করার জন্য সরকারী উদ্যোগ থাকা দরকার। একই প্রসঙ্গে বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী জানান, করোনার কারণে অভিবাসন খাতের সংশ্লিষ্টরা সবাই বিপদে আছে। যেসব শ্রমিক দেশে এসে করোনার কারণে আটকে আছে তাদের দ্রুত কর্মস্থলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা জরুরি।

এ প্রসঙ্গে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটির) অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাফরিজা শ্যামা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশে কর্মী যাওয়া কিছুটা কমেছে। আসলে কর্মী যাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি আন্তর্জাতিক চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। আর শ্রমবাজারের সুখবর নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। আটকে পড়া শ্রমিকদের এখন ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris