শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উৎসবের আমেজ নেই বাসন্তী পূজায়

Paris
Update : শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা : অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য কালে কালে বহু মানুষ আধ্যাশক্তির আরাধনা করেছেন। রামায়ণ অনুসারে, শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে অশুভ শক্তির বিনাশের উদ্দেশ্যে দেবীর আরাধনা করেন। পুরাণ অনুযায়ী, চন্দ্র বংশীয় রাজা সুরথ বসন্তকালে দেবীর আরাধনা করেন। বসন্ত বা শরৎ যাই হোক আরাধনা দেবী দুর্গারই। শারদীয়া অকাল বোধন যেমন দেবী দুর্গা পূজা, বসন্তের দুর্গা পূজা তেমনই বাসন্তী পূজা, দেবী দুর্গারই আরাধনা। কালের পার্থক্যে সামান্য কিছু রীতির তারতম্য হলেও উভয় পূজারই মূল রীতি একই।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতিতে গতবছরের ন্যায় এবারও উৎসবের কোন আমেজ নেই হিন্দু ধর্মালম্বীদের খাদ্য ও সুখের দেবী অন্নপূর্ণার বাসন্তী পূজায়। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে জেলার সবচেয়ে বড় একটি বাসন্তী পূজা মন্ডপেও নেই পূজার কোন আমেজ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে (২২ এপ্রিল) নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের টাকাহারা বাসন্তী মন্দির ঘুরে দেখা যায়, পূজা বিসর্জনের দিনেও নেই তেমন কোন উপস্থিতি। ৫ দিন ব্যাপী পূজার শেষ দিনেও দর্শনার্থী নেই মন্ডপে। গ্রামপুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও তাদের সময় কাটছে অলসতার মধ্য দিয়ে।

টাকাহারা বাসন্তী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক শ্রী বিপদ ভজন বর্মন জানান, প্রায় হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এখানকার বাসন্তী পূজা। এখানে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা হয় আমাদের বাপ-দাদার সময় থেকে। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য গত বছর থেকে তেমন কোন আয়োজন নেই। সরকারের সকল নির্দেশনা মেনে এবছর স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে পূজা উৎযাপন করা হচ্ছে। মন্দিরের পাশের একটি পুকুরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ৫ দিন ব্যাপী বাসন্তী পূজার বিসর্জন দেয়া হয়।

বাসন্তী মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে থাকা শ্রী নারায়ণ চন্দ্র বর্মন বলেন, পার্বতীর অন্য এক রূপ হল অন্নপূর্ণা। অন্নদা নামেও তিনি পরিচিতা। অন্ন কথার অর্থ ধান, আর পূর্ণা-র অর্থ হল পূর্ণ। অর্থাৎ যিনি অন্নদাত্রী। শক্তির অপর রূপ হিসেবে হিন্দুদের মধ্যে বিরাজমান এই দেবী। দ্বিভুজা অন্নপূর্ণার এক হাতে অন্নপাত্র ও অন্য হাতে হাতা থাকে। দেবীর একপাশে থাকেন ভূমি ও অন্যপাশে থাকেন শ্রী। বাসন্তী পুজোর অষ্টমী তিথিতে অন্নপুর্ণার পুজা করা হয়। কালী ও জগদ্ধাত্রী পুজোর মতই তান্ত্রিক মতে এই পুজো হয়ে থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দা শ্রী প্রহোল্লাদ চন্দ্র বর্মন জানান, পূজা উপলক্ষে এখানে প্রতিবছর বিশাল মেলা বসে। ৫ দিন ব্যাপী মেলায় মিষ্টান্ন, কাঠের বিভিন্ন আসবাবপত্র, তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন পন্যের সমারোহ থাকে। তবে করোনাকালীন পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় এবছর মেলা বসেনি। রবিবার থেকে শুরু হওয়া পূজায় এবছর ভক্তদের উপস্থিতিও নেই। হাতেগোনা কয়েকজন আসছে, প্রতীমার প্রতি ভক্তি করে চলে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, এই পূজা দেখতে জেলার নাচোল, গোমস্তাপুর, শিবগঞ্জ ও নওগাঁর নেয়ামতপুর হতে ভক্তরা এসে ভিড় জমায়। তবে কঠোর লকডাউনের কারনে ভক্তরা বাসন্তী পূজায় উপস্থিত হতে পারছে না।

বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক ডাবলু কুমার ঘোষ বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারনে এবছর সরকারি নির্দেশনা মেনে বাড়িতে বাড়িতে প্রার্থনা করা হচ্ছে। তবে হাজারো বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধারণ করতেই টাকাহারা বাসন্তী মন্দিরে পূজার আয়োজন করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।

পুরাণ মতে, বিয়ের পর কৈলাশ পর্বতে শিব ও পার্বতী বেশ সুখেই দাম্পত্যজীবন কাটাছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের জেরে কিছুদিন পর শুরু হয় দাম্পত্যকলহ। দারিদ্র্যের কারণে দেবীর সঙ্গে দেবাদিদেবের মতবিরোধে পার্বতী কৈলাস ত্যাগ করলে মহামারি, খাদ্যাভাব ঘটে। ভক্তগণকে এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য দেবাদিদেব ভিক্ষার ঝুলি নিজ কাঁধে তুলে নেন। কিন্তু দেবীর মায়ায় কোথাও ভিক্ষে পান না তিনি। তখন দেবাদিদেব শোনেন যে কাশীতে এক নারী সকলকে অন্ন দান করছেন। দেবীকে চিনতে মহাদেবের একটুও দেরি হয় না।

মহাদেব দেবীর কাছে ভিক্ষা গ্রহণ করে ভক্তদের মহামারি ও খাদ্যাভাব থেকে রক্ষা করেন। এরপর দেবীর মহিমাবৃদ্ধির জন্য কাশীতে একটি মন্দির স্থাপন করেন শিব। চৈত্রমাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথিতে সেই মন্দিরে দেবী অবতীর্ণ হলেন। সেই থেকেই দেবীর পূজার প্রচলন বাড়ে। ইতিহাস মতে, চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের বাসন্তী পুজোই প্রকৃত দুর্গাপূজা। যদিও পরবর্তীকালে আশ্বিন শুক্লপক্ষের দুর্গাপূজোই অন্যতম প্রধান পূজার স্বীকৃতি পায়। এবছর করোনা থেকে মুক্তি ও বৈশ্বিক শান্তি প্রার্থনা বাসন্তী ভক্তদের মাঝে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris