বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

রাজশাহীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ রাক্ষুসে মাছ

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীতে ও জেলার বিভিন্ন উপজলোয় অবাধে চলছে সরকারীভাবে নিষিদ্ধ আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছ ক্রয়বিক্রয়। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মৎস্য ব্যবসায়ীদের একটি চক্র এমনটা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। অন্য মাছ ব্যবসায়ীরা পড়েছেন লোকসানের মুখে। কেউ কেউ ওই হাট ছেড়ে অন্যত্র ব্যবসা শুরু করেছেন। তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর নওদাপাড়া বাজার, শালবাগান, জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাট, তানোরের গোল্লাপাড়া ও মুন্ডুমালা বাজার, মোহনপুরের মৌগাছি, ধুরইল ও কেশরহাট বাজার, পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে বিক্রি হচ্ছে রাক্ষুসে আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছ। প্রতি সপ্তাহে শুধুমাত্র কাকনহাটেই বিক্রি হয় নিষিদ্ধ প্রজাতির প্রায় ২০ মণ মাছ। পূর্বেও এসব নিষিদ্ধ মাছ ক্রয়বিক্রয় হলেও করোনার প্রকোপের পর থেকে এসব মাছ বেচাকেনায় আরো জোর দিয়েছে একটি ব্যবসায়ী চক্র।
সূত্র জানায়, জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত গোদাগাড়ী উপজেলার কাকন হাটে বাজারে সাপ্তাহিক বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি মাছ কেনাবেচা হয়।

প্রতিকেজি দেশি মাগুর ৮০০-১০০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও প্রতিকেজি বিদেশি মাগুর বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকায়। ফলে ক্রেতারা এসব মাছের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এতে অন্য মাছ বিক্রেতারা পড়েছেন হুমকির মুখে। এমনকি প্রায় ১৬ বছর ধরে চলে আসা ওই হাটে কেউ কেউ ব্যবসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব হাটে পিরানহা মাছ বিক্রি হচ্ছে রূপচাঁদার নামে, আর ছোট আকারের নিষিদ্ধ আফ্রিকান মাগুর মাছ বিক্রি করা হচ্ছে দেশি মাগুর বলে।

আফ্রিকান মাগুর মাছ দেখতে অনেকটা দেশি মাগুর মাছের মতো হলেও আকারে অনেক বড় হয়। সর্বভুক হওয়ায় খুব দ্রুত এই মাছ বেড়ে ওঠে। অনেকেই সঠিকভাবে চিনতে না পেরে প্রতারিত হচ্ছেন বাজারে গিয়ে। একটি ব্যবসায়ী চক্র কৌশলে এসব মাছ বিক্রি করছে।

রাক্ষুসে স্বভাবের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশ সরকারও পিরানহা মাছের উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পিরানহা মাছ চাষ, উৎপাদন, পোনা উৎপাদন, বংশ বৃদ্ধি, বাজারে বিক্রি এবং বাজার থেকে ক্রয় সরকারীভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। এবং ২০১৪ সালের জুন থেকে আফ্রিকান মাগুরের আমদানি, উৎপাদন, বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস রুলস, ১৯৮৫ এর কয়েকটি ধারা সংশোধন করে আফ্রিকান মাগুরের উপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এছাড়া বিদেশ থেকে আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছ, মাছের রেণু ও পোনা আমদানি করলে জেল জরিমানার বিধান রেখে মৎস্য সংঘ নিরোধ আইন-২০১৭ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ।

এ আইন অমান্য করলে দুই বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কারণ এই দুই প্রজাতির মাছ চাষের ফলে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। কোন ভাবে যদি পুকুর বা অবরুদ্ধ জলাশয় থেকে এই মাছ দুটি নদীতে বা মুক্ত জলাশয়ে চলে আসে তাহলে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের জন্য মহা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

তবে নিয়ম লঙ্ঘন করেই প্রকাশ্যে এভাবে নিষিদ্ধ মাছ বিক্রি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ অঞ্চলের মাছ চাষিরা। দাবি জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ মাছ আমদানি, উৎপাদন, বিপণন এবং বাজারে বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার। জেলার মোহনপুর উপজেলার মাছ ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন বলেন, এভাবে নিষিদ্ধ মাছ বাজারে থাকায় দেশি মাছের ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে না। লোকসানের মুখে আমার ১৫টি পুকুরের মধ্যে ১০টি ছেড়ে দিয়েছি, বাকি ৫টি পুকুরে মাছ চাষ করছি।

তবে নিষিদ্ধ মাছ বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা তাদের সংসার চালানোর তাগিদে এসব মাছ বিক্রি করছেন বলে যৌক্তিকতা পেশ করে এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলোক কুমার সাহা বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এসব মাছ বিক্রি করা দন্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”


আরোও অন্যান্য খবর
Paris