মোবারক হোসেন শিশির, দুর্গাপুর : রাজশাহীর দুর্গাপুরে কাঁঠালবাড়ীয়া শহীদ আবুল কাশেম স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ উঠছে। এ ঘটনা নিয়ে কলেজের ৪৪ জন শিক্ষক-কর্মচারি স্বেচ্ছাচারিতা ও অমানবিক আচরণ ও অর্থ আত্মসাতসহ নানা বিষয়ে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। গতকাল মঙ্গলবার অভিযোগের ভিত্তিতে গভর্নিং বডির সভায় স্কুল ও কলেজটির নামে বিভিন্ন অনিয়ম করে টাকা আত্মসাতের সত্যতা মিলে। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষক কর্মচারিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বৈঠক শেষে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারি অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে কলেজ মাঠে বিক্ষোভ করে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে কাঁঠালবাড়ীয়া শহীদ আবুল কাশেম স্কুল ও কলেজের আমিনুল ইসলাম অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে একেরপর এক অনিয়ম আর দুর্নীতি শুরু করেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সকল শিক্ষক-কর্মচারিদের প্রতিনিয়তই অমানবিক আচরণ করতে থাকেন। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণের অভিযোগ এনে ওই প্রতিষ্ঠানের ৪৪জন শিক্ষক-কর্মচারিদের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগপত্র উপজেলা মাধ্যমিক, ইউএনও, জেলা শিক্ষা, উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চল, চেয়ারম্যান/সচিব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড বরাবর প্রদান করেন।
অভিযোগে জানা গেছে, অধ্যক্ষ আমিনুল নিজের ব্যক্তিগত কাজে কলেজের নামে একাধিক টাকার বিল ভাউচার করেন। কলেজ ফান্ড থেকে তিনি গত এক বছরে খরচ করেছেন ২লাখ ২৩৮ টাকা। তিনি প্রকৌশল অধিদপ্তরে গিয়েছিলেন ২০দিন, যার বিল করেছেন ৪৩ হাজার ৬১০ টাকা। এমপির বাড়িতে গিয়েছেন ৪৮ দিন, বিল ২৪ হাজার ৬৪০ টাকা, ডিসি অফিসে যাওয়া বাবদ ২১ দিন, বিল ১৩ হাজার ৫৬০ টাকা, বোর্ড অফিসে বাবদ ৩৭ দিন, বিল ১৭হাজার ৪২০টাকা, ডিও অফিসে ৯ দিন, বিল ৬হাজার ৫৯০ টাকা, ইউএনও অফিস বাবদ ১৪ দিন, বিল ৩হাজার ৯২০ টাকা, তাঁর ব্যাক্তিগত মোবাইল খরচ ১৬ হাজার ৫৪৪ টাকা, সমিতি ও অন্যান্য বাবদ বিল ১৯ হাজার ৬৫৯ টাকা, গাছ ও টয়লেট বাবদ ২হাজার ৪৩৫ টাকা, মাধ্যমিক অফিস বাবদ ১৭ হাজার ৪৮০ টাকা, সভাপতি ৩ হাজার ৭০০ টাকা, সম্মাননা বাবদ ২০ হাজার ৯০ টাকা, চাঁদা বাবদ ১হাজার ৩৪০ টাকা, ইউনিয়নে খরচ বাবদ ৫৬০ টাকা ও বিটল ভাই ৮ হাজার ৭৫০ টাকা খরচ বাবদ বিল ভাউচার দেখিয়েছেন।
এসব অভিযোগে মঙ্গলবার কলেজের কলেজের শিক্ষক-কর্মচারিদের নিয়ে গভনিং বডির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রতিষ্ঠানের খরচ বাবদ টাকার সাথে অমিল পাওয়া যায়। পরে এসব বিষয় নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম ভূল স্বীকার করেন। এ নিয়ে শিক্ষক কর্মচারিরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করলে অমিমাংসীত ভাবে বৈঠক শেষ হয়। পরে কলেজ মাঠে শিক্ষক কর্মচারিরা অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
কাঁঠালবাড়ীয়া বাড়িয়া শহীদ আবুল কাশেম স্কুল ও কলেজের শিক্ষক ফরহাদ হোসেন, আব্দুর রকিব, আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, অধ্যক্ষ মহোদয় প্রায় প্রতিটি কাজেই অনিয়ম করে থাকেন। এ বিষয়ে তাকে কিছু বলতে গেলেই হুমকির শিকার হতে হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান তিনি তাঁর আচার আচরণ হবে একজন অভিভাবকের মত। অথচ তাঁর আচরণে পুরো স্টাফ-কর্মচারিরা অতিষ্ট। প্রতিনিয়তই শিক্ষক কর্মচারিদের সাথে তিনি খুব খারাপ আচরণ করেন। তাঁরা যে সকল দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তাদের নিকটে তদন্তপুর্বক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে কালেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁ বক্তব্যে পাওয়া যায় নি। জানতে চাইলে কাঁঠাবাড়ী স্কুল ও কলেজের গভর্নি বডির সভাপতি ও ঝালুকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাহার আলী বলেন, অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম অনিয়ম করেছেন। মঙ্গলবার কলেজের গভনিং বড়ির মিটিংএ তিনি সবার কাছে ভুল স্বীকারও করেছেন। আমি সকল সদস্যদের নিয়ে মঙ্গলবার প্রায় ৪ ঘন্টাব্যাপি মিটিং করেছি। আশা করি এ বিষটি অতি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।