শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সুরা ইখলাসকে কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ বলা হয় কেন?

Paris
Update : শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১

এফএনএস : সুরা ইখলাস তথা ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ মহান আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে সুন্দর পরিচয় বহনকারী সুরা। এ কারণে এটিকে সুরা আত-তাওহিদ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। আল্লাহর পরিচয় সমৃদ্ধ ৪ আয়াত বিশিষ্ট সুরাটিকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বলা হয়েছে। কিন্তু কেন এ সুরাটিকে কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ বলা হয়? সুরা ইখলাস তথা ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ সুরাটিকে কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ বলা সম্পর্কে সুস্পষ্ট একটি বর্ণনা তুলে ধরেছেন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ছাত্র আল্লামা আবুল আব্বাস আহমাদ ইবন ওমার ইবন সুরাইজ আশ-শাফেঈ।

তাকে একবার প্রশ্ন করা হলো- সুরা ইখলাস তথা ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ কে, কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বলা হয় কেন? আল্লামা আবু আব্বাস আহমাদ ইবনে ওমার ইবনে শুরাইজ আশ-শাফেঈ এর উত্তরে বলেন- কুরআনুল কারিমে মৌলিক আলোচ্য বিষয় ৩টি অংশে বিভক্ত। তাহলো-কুরআনের একাংশের আলোচনার বিষয় : আহকাম বা বিধি-বিধান।

অপর অংশে আলোচনার বিষয় : ওয়াদা ও ওয়িদ তথা জান্নাতের সুসংবাদ ও জাহান্নামের হুংকারের বিবরণ। আর বাকী অংশে আলোচনার বিষয় : মহান আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণগান।’ (মাজমু‘ ফাতাওয়া)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে-
কুরআনের বিভিন্ন সুরার বিষয়বস্তু প্রধানত তিন ধরণের-

আল্লাহর পরিচয়;

হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেসালাত এবং পরকালের বর্ণনা।

আর সুরা ইখলাসে শুধু আল্লাহর কথাই আলোচিত হয়েছে।
এ কারণে সুরা ইখলাসকে মূলত কুরআনুল কারিমের ৩ ভাগের এক ভাগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
বিশ্বনবির বক্তব্য
হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্রাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সুরা ইখলাসকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ সুরা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সুরা ইখলাস-এর আয়াত সংখ্যা ৪টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১টি। ইখলাস সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সুরাটিকে ইসলামের শেষ পয়গম্বর মুহাম্মাদ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তাৎপর্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুরাটি ছোট্ট হলেও এতে ওঠে এসেছে মহান আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে সুন্দর পরিচয়।
সুরাটি নাজিলের কারণ
আল্লাহর পরিচয় সংক্রান্ত অবিশ্বাসীদের জিজ্ঞাসার জবাবে সুরাটি নাজিল হয়। প্রশ্ন নিয়ে একাধিক মতামত রয়েছে-

মুশরিকরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলার বংশ পরিচয় জিজ্ঞাসা করেছিল। মুশরিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মহান আল্লাহ তাআলা স্বতন্ত্র এ সুরাটি নাজিল করেন। কেউ কেউ বলেন, মদিনার ইয়াহুদিরা এ প্রশ্ন করেছিল।

কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, তারা আরও প্রশ্ন করেছিল- আল্লাহ তাআলা কিসের তৈরি? স্বর্ণ-রৌপ্য নাকি অন্য কিছুর? এ প্রশ্নের জওয়াবে সুরাটি অবতীর্ণ হয়।
কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ সম্পর্কিত হাদিস

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা কনের, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে রাতে বারবার সুরা ইখলাস পড়তে শুনেছেন। অতঃপর সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, সেই সত্তার শপথ! যার কুদরতের হাতে আমার জীবন। অবশ্যই এ সুরা কুরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান।’ (বুখারি, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুআত্তা মালেক)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাহাবিদের বলেন, তোমারা কি এক রাতে কুরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে? সাহাবিরা এ প্রস্তাবকে খুবই কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বলল, আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, সুরা ইখলাস কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।’ (বুখারি, নাসাঈ)

হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ কুরআনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। আর এ সুরাটি (সুরা ইখলাস)-কে একটি ভাগে পরিণত করেছেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
উল্লেখ্য, সুরা ইখলাস ৩ বার পড়লেই এক খতম কুরআনের সাওয়াব পাওয়া যাবে। এমন কোনো কথা হাদিসের কোনো বর্ণনায় আসেনি। বরং মর্যাদার দিক থেকে সুরা ইখলাস কুরআনুল কারিমের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য। তাই ৩ বার সুরা ইখলাস পড়লেই এক খতম কুরআন পড়ার সাওয়াব যাবে বলা ঠিক নয়।
সুরা ইখলাসের ভালোবাসা
সুরা ইখলাসকে ভালোবাসলে আল্লাহও ওই বান্দাকে ভালোবাসেন। এ সম্পর্কে হাদিসের একটি বর্ণনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার একজন সাহাবির নেতৃত্বে একদল সৈনিককে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। যুদ্ধের সেনাপতি ওই সফরের দীর্ঘ সময় জুড়ে শুধু সুরা ইখলাস দ্বারা নামাজ পড়িয়েছিলেন।
যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈন্যরা ফিরে এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা অবহিত করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বললেন-
তোমরা কি তাকে জিজ্ঞাসা করনি, কেন সে এরূপ করেছে?
তারা সেনাপতির বর্ণনা তুলে ধরেন- এ সুরায় আল্লাহর গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে; বিধায় আমি এ সুরাকে ভালোবাসি।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের বললেন-
‘তোমরা তাকে গিয়ে বল; আল্লাহ তাআলাও তাকে ভালোবাসেন।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ)
সুরা ইখলাস গোনাহ মাফ ও জান্নাত লাভের কারণ

এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বলেন, এ ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ (বুখারি, তিরমিজি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, তবে ঋণ থাকলে তা মাফ হবে না।’ (তিরমিজি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, বেশি বেশি সুরা ইখলাস পড়ে আল্লাহর সুন্দর ও সর্বোত্তম পরিচয় লাভ করা। আল্লাহর পরিচয়ের মাধ্যমে নিজেদের ইমান ও আমলকে সুন্দর করে গড়ে তোলা। গোনাহ মাফ ও জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা ইখলাসের আলোচ্য বিষয়ের ওপর আমল করার ও সুরাটিকে ভালোবাসার তাওফিক দান করুন। আমিন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris