শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নকলের তালিকায় যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন পণ্য

Paris
Update : বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১

এফএনএস : নকল পণ্যের কারখানা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত নকলের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন পণ্য। অসাধু ব্যবসায়ীরা সহজে অতি মুনাফার উদ্দেশ্যে অভিনব কৌশলে নকল পণ্য তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন অভিযানে প্রসাধনী, ওষুধ, পানীয়সহ কিছু পণ্যের নকল ধরা পড়তো। এখন খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত অনেক ধরনের নকল পণ্যই বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের কারণে নকল পণ্য উৎপাদনের জায়গা বদল করছে। বর্তমানে জেলা পর্যায়ে ছোট কারখানায় ছড়িয়ে পড়ছে আর পণ্য বিক্রিতে অপরাধীরা পাইকারি বড় বাজারকে টার্গেট করছে। তাছাড়া অনলাইনেও নকল পণ্য বিক্রির অপতৎপরতা বেড়েছে। বিএসটিআই এবং ক্যাব সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বর্তমানে নকল পণ্যের তালিকা বেশ দীর্ঘ। ওই তালিকায় যুক্ত হয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জাম, মশার কয়েল, টাইলস, সিরামিকসহ নানা পণ্য। চা, চিপস, চকলেট, চানাচুর, নুডলস, বেভারেজ, ঘি, বাটার অয়েল, সস ও মধুও নকল হচ্ছে। নকলের তালিকায় নতুন খাদ্যপণ্য যুক্ত হওয়ায় আরো বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। আর আগে যেসব পণ্য বেশি নকল হতো তার মধ্যে অন্যতম ছিল কসমেটিকস বা প্রসাধনী। তাছাড়া জীবন রক্ষাকারী ওষুধও নকল হচ্ছে। মোবাইল হ্যান্ডসেট, অন্যান্য ইলেকট্রনিকস পণ্য ও বৈদ্যুতিক তারের মতো পণ্য হরহামেশাই নকল হচ্ছে।

নকল হচ্ছে সরকারের রেভিনিউ স্ট্যাম্পও। সিগারেটের ট্যাক্স-স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোল নকল ও পুনর্ব্যবহার করে সরকারকে বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত ঠেকানো না গেলে শুধু অর্থনীতিই আরো ক্ষতির মুখে পড়ছে তা নয়, পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সেজন্য নকল পণ্য উৎপাদন বন্ধ এবং অপরাধীদের শাস্তি বাড়ানো জরুরি। সূত্র জানায়, নকল বিরোধী অভিযানে আগে রাজধানীর পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক নকল পণ্য তৈরির কারখানা ধরা পড়লেও অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন ঢাকার আশপাশেসহ সারাদেশে কারখানা সরিয়ে নিচ্ছে।

কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, শ্যামপুর, বাড্ডা, সাভার, গাজীপুর, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা ও রাজশাহী বিভিন্ন জেলায় নকল পণ্য উৎপাদনের কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সম্প্রতি রাজধানীর কাফরুলের দক্ষিণ ইব্রাহীমপুরে এক কারখানায় অভিযান চালায় বিএসটিআই ও র‌্যাব। ওই অভিযানে নকল ঘি, বাটার অয়েল ও সস তৈরির প্রমাণ মিলে। আড়ং, মিল্ক ভিটা, প্রাণ, রেড কাউসহ নানা ব্র্যান্ডের নকল পণ্য পাওয়া যায়। গত জানুয়ারিতে এক অভিযানে উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরের একটি শপিংমলের দোকানে বিদেশি ব্র্যান্ডের জুস, চকলেট, কফি, চা পাতাসহ নানা নকল পণ্য ধরা পড়ে। ওসব পণ্যে বিএসটিআইর কোনো অনুমোদন ছিল না।

রাজধানীর ভাটারায় একটি কারখানায় নকল ও নিম্নমানের জুস ও চকলেট তৈরির কারখানায় অভিযান চালায় বিএসটিআই। গত ৪ মার্চ বংশালের আবুল হাসনাত রোডে ও খিলগাঁওয়ের দুটি কারখানায় অভিযান চালায় বিএসটিআই ও র‌্যাব। ওই কারখানায় নকল নারিকেল তেল তৈরির প্রমাণ পাওয়া যায়। নামিদামি ব্র্যান্ডের মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি ম্যারিকোর প্যারাসুট ব্র্যান্ড ছাড়াও কুমারিকা, ডাবর আমলা, কিউটসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল নারিকেল তেল জব্দ করা হয়। প্রতিষ্ঠান দুটিকে জরিমানা এবং কারখানা সিলগালা করা হয়। সম্প্রতি বাজারে নকল নুডলস আসার কথা জানা যায়। তাছাড়া গত এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অভিযানে গুডনাইট, এসিআইসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মশার কয়েল, নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য, তার, নানা ইলেকট্রিক্যাল পণ্য, স্যানিটারি পণ্যসহ বিভিন্ন নকল পণ্য তৈরির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সূত্র আরো জানায়, অসাধু ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন নকল পণ্য বিক্রিতে অনলাইনকে বেছে নিচ্ছে। বাজার পর্যায়ে মনিটরিং জোরদার হওয়ায় তারা সেদিকে ঝুঁকছে। তবে নকল পণ্য এড়াতে হলে ভোক্তাদের সচেতন হতে হওয়া জরুরি। সেজন্য ভোক্তাদের বিএসটিআইর মানচিহ্ন ও বার কোড যাচাইয়ের দিকে নজর দিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএসএফএ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে নতুন নানা ধরনের নকল পণ্য ধরা পড়ছে।

ভোক্তারাও নকল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে। এদিকে নকল পণ্য বিষয়ে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির জানান, খাদ্য পণ্য নকল হওয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। নকল ও ভেজাল রোধ করতে বাণিজ্য, শিল্প, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসহ সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। আর শুধু রমজান ঘিরে তৎপর না হয়ে বছরব্যাপী উৎপাদন থেকে বাজার পর্যায়ে অভিযান জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও আরো সচেতন হতে হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইউম সরকার জানান, খাদ্যপণ্য নকল করার প্রবণতা রোধে নিয়মিত অভিযান চলছে।

মনিটরিংও আরো জোরদার করা হচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সারাদেশের বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করছে। নমুনা পরীক্ষার পরে যাচাই করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাছাড়া রমজানে বাজারে খাদ্যপণ্যের বেচাকেনা বেড়ে যায়। ওই সুযোগে যাতে নকল পণ্য বিক্রি বেড়ে না যায় সেজন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নকল প্রতিরোধে ভোক্তাদের আরো সচেতন হতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক রিয়াজুল হক জানান, উৎপাদন ও বাজার পর্যায়ে নকল পণ্য বন্ধে বিএসটিআই নিজস্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। তবে অনলাইনে নকল পণ্য বিক্রি রোধে ভোক্তাদের আরো সচেতন হতে হবে। ভোক্তারা সচেতন হলে নকল রোধ করা সহজ হবে। নকল পণ্য বন্ধে বিএসটিআই কিউআর কোড ও বার কোডে বিএসটিআইর লোগো সংযুক্ত করার বিষয়ে কাজ করছে। এর বাস্তবায়ন হলে ভোক্তারা যাচাই করে পণ্য কিনতে পারবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris