শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রেকর্ডকৃত আজানের জবাব সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনা কী?

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১

এফএনএস : নামাজের সময় হলে দেশের প্রায় সব রেডিও এবং টেলিভিশনে আযান সম্প্রচার করা হয়। এ আযান শুনে কি জবাব দিতে হবে? আজানের জবাব দেয়া সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনাই বা কী? ‘না’, রেডিও এবং টেলিভিশনে রেকর্ডকৃত আজানের সম্প্রচার হলে, তা শুনে আজানের জওয়াব দিতে হবে না। কেননা হাদিসে আজানের জওয়াবের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আজানের জওয়াব দেয়ার জন্য শর্ত হলো- নামাজের ওয়াক্ত হলে মুয়াজ্জিন যে আযান দেবে, যারা তা শুনবে অনুরূপ মুয়াজ্জিনের মতো বলবে। কিন্তু রেডিও এবং টেলিভিশিনে যে আযান প্রচার করা হয়। মুয়াজ্জিন ওই সময় সে আযান দেন না। বরং তা হলো- আগে থেকে রেকর্ডকৃত আজান।
আজানের উত্তর দেয়া সম্পর্কে হাদিসের সুস্পষ্ট বর্ণনা হলো-

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা আযান শুনতে পাও; তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তা-ই বলবে।’ (বুখারি, মুসলিম)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘তোমরা যখন মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তা-ই বল। অতঃপর আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমাত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্যে আল্লাহর কাছে ওয়াসিলাহ প্রার্থনা কর। কেননা, ‘ওয়াসীলাহ্’ জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আমি আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্যে ওয়াসীলাহ্ প্রার্থনা করবে তার জন্যে (আমার) শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ (মুসলিম)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ছিলাম। এমন সময় বিলাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আযান দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন। তিনি আযান শেষ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গ (মুয়াজ্জিন বিলাল) এর অনুরূপ বলবে (আজানের জবাব দেবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (নাসাঈ)
উল্লেখিত হাদিসগুলোতে আজানের উত্তর দেওয়ার ব্যাপারে যে নির্দেশনা এসেছে, তাতে সরাসরি মুয়াজ্জিনের থেকে শোনা আজানের উত্তর দেওয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

‘যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে বলতে শুনবে তখন তোমরাও তার অনুরূপ বল।’ তাই রেকর্ডকৃত আযান রেডিও কিংবা টেলিভিশনে প্রচারিত হলে তার জবাব দেওয়া মাসনূন বলে বিবেচিত হবে না।
মুয়াজ্জিনের আজানের উত্তর দেয়ার নিয়ম
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি মুয়াজ্জিনের-

  • ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’-এর জাওয়াবে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলে এবং
  • ‘আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর জওয়াবে ‘আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে এবং
  • ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’-এর জওয়াবে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলে তারপর – ‘হাইয়্যা আলাস্-সলাহ’-এর জওয়াবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলে, তারপর
  • ‘হাইয়্যা আলাল-ফালাহ’-এর জওয়াবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলে, তারপর
  • ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’-এর জওয়াবে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ এবং
  • ‘লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ’-এর জওয়াবে ‘লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ’ বলে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ, মুসলিম)
    সুতরাং আজানে সময় অযথা কথা নয়, বরং মুয়াজ্জিনের আজানের সঙ্গে সঙ্গে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী জবাব দেয়া উত্তম। আযান যেভাবেই প্রচার হোক না কেন, আজানের সময় কথা না বলাই উত্তম।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris