বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে রোডম্যাপ

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১

এফএনএস : আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ রোডম্যাপও তৈরি করেছে সরকার। ওই রোডম্যাপে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত উদ্ভাবনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণের উপায় খুঁজতে গবেষণার কথা বলা হয়েছে। সংষ্টিরা মনে করছেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশে পেঁয়াজের সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে। কারণ বিগত কয়েক বছর ধরেই আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। ঘাটতি মেটাতে তখন আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে কোনো কারণে আমদানিতে সংকট দেখা দিলেই পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায়। সরকার এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতেই চার বছর মেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে পেঁয়াজের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ উৎপাদন হয়। আর অভ্যন্তরীণ চাহিদা মোকাবেলায় প্রতি বছর গড়ে ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। তাতে ব্যয় হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। আর ভারত থেকেই মসলাজাতীয় পণ্যটির মোট আমদানির ৭৫-৮০ শতাংশ আসছে। চীন থেকে আসে ১৫ থেকে ১৯ শতাংশ। তার বাইরে মিসর, অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য দেশ থেকেও যৎসামান্য পরিমাণে আনা হয়। কিন্তু সরবরাহ সংকটের পাশাপাশি বাজার তদারকির অভাব ও ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফার প্রবণতায় অনেক সময়ই পণ্যটির মূল্যকে অস্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যায়।

তবে দেশেই উন্নত জাতের ভালো বীজ কাজে লাগিয়ে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দেশে প্রতি বছর ১ হাজার ১০০ টন থেকে ১ হাজার ৩০০ টন পর্যন্ত পেঁয়াজ বীজের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ৫-৭ টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে। আর বেসরকারিভাবে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৫৫ টন বীজ উৎপাদন হয়।

সূত্র জানায়, পেঁয়াজের উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে ইতিমধ্যে উন্নতজাতের শীতকালীন বারি পেঁয়াজ-১, বারি পেঁয়াজ-৪, বারি পেঁয়াজ-৬ উদ্ভাবন করা হয়েছে। তাছাড়া গ্রীষ্মকালীন জাত হিসেবে বারি পেঁয়াজ-৩ ও বারি পেঁয়াজ-৫ উদ্ভাবন করা হয়েছে।

অধিক সংরক্ষণ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি উচ্চফলনশীল লাইন সিএমও-৩৭৪ এবং সিএমও-৩৭৫ আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষণে রয়েছে, যা থেকে নতুন ভালো জাত উদ্ভাবন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘বাংলাদেশে মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ’ প্রকল্পের সহায়তায় মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা পেঁয়াজের সংরক্ষণকাল বাড়ানোর এবং অধিক সংরক্ষণকাল উপযোগী শর্ট ভ্যারাইটির উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, দেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে এবারই প্রথম ৫০ হাজার বিঘা জমি পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। আর যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে খুব বেশি বাড়তি অর্থায়নের প্রয়োজন হবে না। বরং সরকার যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়, তার মধ্য থেকেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে কৃষকদের ভালো মানের বীজ সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বীজ সংরক্ষণের ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওসব কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে ড বছরের মধ্যেই পেঁয়াজ চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে বাংলাদেশ।

এদিকে পেঁয়াজ উৎপাদনে সরকারের রোডম্যাপে বলা হয়েছে, প্রতিটি পারিবারিক পুষ্টি বাগানে পেঁয়াজ চাষের ব্যবস্থা করতে হবে। পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রণোদনার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া ভারত থেকে গ্রীষ্মকালীন ও মিয়ানমার থেকে শীতকালীন পেঁয়াজ বীজ আমদানি করা এবং গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আবাদি এলাকা বৃদ্ধি করার মতো উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দেশীয় পর্যায়ে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে দ্রুত কাজে লাগিয়ে ঘাটতি পেঁয়াজের স্থান পূরণ, এর সংরক্ষণকাল বাড়ানোসহ পেঁয়াজের শর্ট ভ্যারাইটির জাত উদ্ভাবনের সুপারিশ করা হয়।

ওই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। তাতে পেঁয়াজের সংকট কাটাতে চলমান নানা উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। পেঁয়াজ উৎপাদনে চার বছর মেয়াদি রোডম্যাপ সম্পর্কে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর দেশে ৮-১০ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি থাকে। ঘাটতি মেটাতে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায়। ওই লক্ষ্য অর্জনে ৪ বছর মেয়াদি একটি রোডম্যাপ করা হয়েছে। রোডম্যাপে উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের একটি অংশ নষ্ট হয়ে যায়। সেটি কীভাবে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করা যায়, সে বিষয়টি নিয়েও গবেষণা করা হচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris