বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

আব্দুল জলিল হেমো ডায়ালাইসিস সেন্টারে সেবা পাচ্ছেন রোগীরা

Paris
Update : শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ সদর হাসপাতালে ‘আব্দুল জলিল হেমো ডায়ালাইসিস সেন্টার’ এ সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন কিডনি রোগীরা। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ডায়ালাইসিস সেন্টারে পাঁচটি মেশিন দিয়ে সেবা দেয়ায় বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। মেশিনের সংখ্যা এবং জনবল বাড়ানো গেলে সেবার মান আরো বেড়ে যাবে। হাজার হাজার মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য শরীরে দু’টি কিডনির ভূমিকা অপরিসীম। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য বাহিরের দেশে চিকিৎসা গিয়ে নিতে প্রাণপন লড়াই করে চলছেন। অনেকে আবার কেউ মৃত্যু সাথে লড়াই করে হেরে যান।

নওগাঁ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের আগষ্টে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মরহুম আব্দুল জলিল নওগাঁবাসীর সুবিধার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে দুই শয্যা বিশিষ্ট ‘আব্দুল জলিল হেমো ডায়ালাইসিস সেন্টার’ চালু করেন। এরপর ২০১৩ সালে আরো তিনটি মেশিন বাড়ানো হয়। মোট পাঁচটি মেশিনে দিয়ে অদ্যাবধি ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হচ্ছে। ডায়ালাইসিস চালুর পর এ পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার রোগী সেবা নিয়েছেন। একজন রোগী ডায়ালাইসিসের জন্য প্রথমে ২ হাজার ৯শ টাকা খরচ হয়। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে ১ হাজার ৯শ টাকা করে খরচ হয়। চারটি ধাপ শেষ হলে আবার নতুন করে ২ হাজার ৯শ টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস শুরু করতে হয়।

ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এক শিফটে পাঁচটি মেশিনের সাহায্যে সেবা দেয়া হয়। কিনডি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি যন্ত্রপাতি। সেবার মান ভাল হওয়ায় অন্যান্য জেলা থেকেও এ হাসপাতালে আসছেন কিডনি রোগীরা। ‘হেপাটাইটিস বি পজেটিভ মেশিন’ না থাকায় রোগীদের অন্যত্র চলে যেতে হচ্ছে। জেলার ১১টি উপজেলা ছাড়াও বগুড়া, জয়পুরহাট জেলা থেকেও কিডনি রোগীরা সেবা নিয়ে থাকেন। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে রোগীর চাপ, অপরদিকে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও জনবল না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

জেলার পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর গ্রামের কিডনি রোগী কৃষক নুরুন নবী মন্ডল (৪৫)। গত দুই বছর আগে হঠাৎ করেই তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে প্রয়োজনের তুলনায় ক্রিয়েটিন অনেক বেড়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েও কোন উপকার হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার দুটো কিনডি নষ্ট হয়ে গেছে। গত ৭ মাস থেকে তিনি ‘আব্দুল জলিল হেমো ডায়ালাইসিস সেন্টার’ এ চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নুরুন নবী মন্ডলের ছেলে আবু হেনা বলেন, বাবার কিনডি রোগ সনাক্ত হওয়ার পর দেশের বাহিরে চার বার চিকিৎসা করিয়েছেন। এছাড়া কিডনি ফাউন্ডেশন সহ কয়েক জায়গায়ও দেখানো হয়েছে। ডায়ালাইসিস করার আগ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাবার ব্যাংকে কিছু টাকা ছিল সব খরচ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই বিঘা জমিও বিক্রি করা হয়েছে। গত ৭ মাস থেকে বাবার ডায়ালাইসিস শুরু করেছেন। বগুড়াতে ডায়ালাইসিস করতে যাওয়া-আসা সহ খরচ বেশি পড়তো। মাস কয়েক থেকে নওগাঁতে করা হচ্ছে। এতে অনেকটা সুবিধাও হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ঔষধ ও ২বার ডায়ালাসিস সহ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। কিডনি প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগে ঔষধের দোকানদার ঔষধের দাম কিছুটা কম রাখলেও বর্তমানে এমআরপি মুল্য অনুযায়ী নেয়া হচ্ছে। এতে খরচ তুলনামুলক বেশি পড়ছে। উল্লাসপুর গ্রামের কিডনি রোগী সাজেদুর রহমান বলেন, তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক। তার দুইটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। কিডনির চিকিৎসা অনেক ব্যয় বহুল। ২০১৯ সাল থেকে সপ্তাহে দুইবার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করছেন। নিজের চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন খুবই খারাপ হয়ে গেছে। এভাবে আর কতোদিন চালাতো পারবো জানিনা। বাঁচার ইচ্ছা তো সবারই থাকে।

ডায়ালাইসিস সেন্টারের সিনিয়র স্টাফ নার্স মেমি খাতুন বলেন, এখানে দুইজন নার্স সেবা দিয়ে থাকি। জনবল বাড়ানো হলে সুবিধা হতো। করোনার লকডাউনের সময়ও ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু রেখেছি। যেখানে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়েছি। ডায়ালাইসিস সেন্টারে দেখভালকারী হায়াত মাহুমদ বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় ডায়ালাইসিস মেশিনের সংখ্যা কম। এজন্য তালিকাভুক্ত রোগীদের সিরিয়াল অনুসারে ডাকা হয়। ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সেবা দেয়া হয়। সেবার মান ভাল হওয়ায় দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

প্রতি তিন মাস পর পর রোগীদের হেপাটাইসিস বি এবং সি পরীক্ষা করা হয়। যদি কোন রোগীর পজেটিভ আসে তাকে রেফার্ড করা হয়। এটি একটি ক্ষতিকর ভাইরাস। আমাদের সেন্টারে পজেটিভ মেশিন না থাকায় এ পর্যন্ত ৩০ জন রোগীকে রেফার্ড করা হয়েছে। বর্তমানে পজেটিভ মেশিনটি জরুরী হয়েছে। এ মেশিন থাকলে সেবার মান আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডা. সাইদুল হক বলেন, সারাদেশেই জনবল কম। সাপ্তাহিক জুম মিটিংএ বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) ডায়ালাইসিস মেশিন বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। চিঠি আসার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে যেখানে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হবে বা নতুন করে আরো ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু হতে পারে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris