এফএনএস : পেট্রোবাংলা বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পুরনো প্রযুক্তির সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ দিতে আগ্রহী নয়। মূলত গ্যাস অপরোধে করতেই পেট্রোবাংলার এ অনাগ্রহ। কারণ একই জ¦ালানি খরচে সিম্পল সাইকেলের তুলনায় কম্বাইন্ড সাইকেলে দেড় গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সিম্পল সাইকেলে গ্যাস সরবরাহ করায় গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। দেশে এখনো এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। যেগুলোতে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে।
এমন অবস্থায় সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরের জন্য পিডিবিকে একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়ার কথা বলছে পেট্রোবাংলা। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দক্ষতা নির্ণয়ের কাজ চলছে। আর কেন্দ্রগুলোর দক্ষতা নির্ণয়ের কাজ শেষ হলেই সামগ্রিক বিষয় নিয়ে পেট্রোবাংলা পিডিবির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায়। জ¦ালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পুরাতন প্রযুক্তি। ওই ধরনের কেন্দ্র গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর প্রকৃতিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ ছেড়ে দেয়। যা সাধারণত আগে অপচয় হতো। এখন কম্বাইন্ড সাইকেল প্রযুক্তি আসায় সিম্পল সাইকেলের ছেড়ে দেয়া ওই তাপ দিয়েই আরেকটি কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। সিম্পল সাইকেল প্রযুক্তির এমন রূপান্তরকেই কম্বাইন্ড সাইকেল বলা হয়।
সূত্র জানায়, সিম্পল সাইকেল কেন্দ্রগুলোকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর ব্যয়সাপেক্ষ একটি বিষয়। কারণ এই প্রক্রিয়াতে অনেকটা নতুন কেন্দ্র নির্মাণের কাছাকাছি খরচ পড়ে। আবার অনেক পুরাতন সিম্পল সাইকেল কেন্দ্রকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করা সম্ভব হয় না। তাহলে আর সিম্পল সাইকেল কেন্দ্রটিও চলে না। সঙ্গত কারণে প্রযুক্তিগত দিকটি সবার আগে বিবেচনা করতে হয়। দেশে অনেক আগে থেকে যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো রয়েছে সেগুলোই সিম্পল সাইকেল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন করে যেসব কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর সব কটিই কম্বাইন্ড সাইকেল।
তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছোট আকারের রেন্টাল এবং আইপিপি কেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে যেগুলো ইঞ্জিন বেইজড বিদ্যুৎকেন্দ্র। সূত্র আরো জানায়, সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে সিলেটের ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রকে রি-পাওয়ারিং করে ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছে। এখন ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি চালাতে যে গ্যাসের প্রয়োজন হতো তা দিয়েই ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া ঘোড়াশালে ২১০ মেগাওয়াটের ৩ এবং ৪ নম্বর ইউনিট রি-পাওয়ারিং করে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে রূপান্তর করছে পিডিবি।
অর্থাৎ সেখানেও ২১০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র পরিচালনায় যে গ্যাস প্রয়োজন হতো তা দিয়ে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এদিকে পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্টরা বলছে, এখন বিদেশ থেকে প্রতি ঘনফিট এলএনজি ২৭ টাকায় কিনে এনে পিডিবির কাছে ৪ টাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। তাতে পেট্রোবাংলা প্রতি ঘনফিটে ২৩ টাকা লোকসান করছে। কিন্তু ওই গ্যাসেরই অপচয় করছে পিডিবি। ফলে গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহারের স্বার্থেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
সিম্পল সাইকেলে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন হয়, কম্বাইন্ড সাইকেলে তা দিয়ে কমপক্ষে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশিও পাওয়া যায়। ফলে একই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করে দেড়গুণ কিংবা তার বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি হলে পেট্রোবাংলাকে গ্যাস কম সরবরাহ করলেও হবে। তাতে পেট্রোবাংলার ওপর গ্যাস সরবরাহের চাপ কমবে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে দেশেরই লাভ হবে।