শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! বাগমারায় এক স্কুলের সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এলাকাছাড়া! বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল জাতীয় চার নেতা কখনো মৃত্যু ভয় করেননি : লিটন প্রেমিককে কুপিয়ে জখম করল প্রেমিকা! গোদাগাড়ীতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ২ আসামি গ্রেপ্তার এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের সরে দাঁড়াতে নির্দেশ সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তিন প্রতারক রাজশাহীতে গ্রেফতার পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করে লাশ গুম করেছিলেন পুত্রবধূ! রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরা

রাজশাহীতে সূর্যমূখী ফুল চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা

Paris
Update : বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১

মোবারক হোসেন শিশির, দুর্গাপুর : রাজশাহীতে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান ও সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তরুণ সূর্যমূখী ফুলচাষীরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে সূত্রে জানাযায়, রাজশাহী জেলার ৬টি উপজেলা দুর্গাপুর, পুঠিয়া, চারঘাট, তানোর, বাগমারা, মোহনপুরে এই মৌসুমে ১৫৬ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখী ফুল চাষে হয়েছে।
দ্র্গুাপুর উপজেলায় পৌর সদরের সিংগা গ্রামের আনোয়ার হোসেন, আকরাম আলী, জাহিদ হোসেন, আব্দুল জলিল সহ আরো অনেকে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে গাছে ফুল ধরেছে। চারিদিকে শুধু হলুদ ফুলের সমারোহ।

সরেজমিনে দুর্গাপুর উপজেলার পৌর সদরের সিংগা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সূর্যমুখী ফুল বাগান ঘুরে দেখা যায়, অপরূপ সৌন্দর্যে সেজেছে এ সূর্যমুখী বাগান। এ যেন এক ফুলের রাজ্য, এখানে এসে ভ্রমণ পিপাসুদেরও মন আনন্দে ভরে ওঠে। সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে মনোরম পরিবেশে শোভা পাচ্ছে হলুদ রঙের সূর্যমুখী। দূর থেকে যে কারো মন কেড়ে নেবে অপরূপ দৃশ্যটি। সূর্যমুখীর বাগানে দর্শনার্থীদের পদচারণা বেড়েছে বলে জানান তিনি।

নাটোর বড়াইগ্রাম থেকে সূর্যমুখী ফুল বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী মরিয়ম সুলতানা মায়া বলেন, আসলে একসঙ্গে এতগুলো সূর্যমুখী ফুল আগে কখনো দেখা হয়নি। তাছাড়া নাটোরে সূর্যমুখীর বাগান আগেও আমি দেখিনি তাই এখানে ছুটে আসা। তিনি আরো বলেন কিছুদিন ধরে আমার বন্ধুবান্ধব এখানে এসে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে। সেটা আমি দেখতে পাই। আর সেখান থেকেই বাগানটি নিজের চোখে দেখার আগ্রহ জন্মে। তাই বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে এখানে চলে আসি।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসীন মৃধা বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত বিশুদ্ধ তেল উৎপাদনে সূর্যমুখীর জুড়ি নেই। দেশের অন্যান্য জেলা উপজেলার মতো দুর্গাপুর উপজেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে। সারাক্ষণ এ ফুলের ওপর বসে মৌমাছিরা মধু আহরণ করায় বিপুল পরিমাণ মধু সংগ্রহ করাও সম্ভব। এ কারণে সূর্যমুখী চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন দুর্গাপুর এলাকার চাষিরা। মাঠে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহ। সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন গ্রামীণ অর্থনীতিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।

দুর্গাপুরের সূর্যমুখী ফুল চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, আগে তিনি বিভিন্ন ধরনের শস্য, ফল, ফুল সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতেন। উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মকলেছুর রহমানের পরামর্শে তিনি প্রথমবারের মতো হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। কৃষকদের সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহী করতে তার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছে ফুল ধরেছে।
প্রথমবারেই সূর্যমুখী চাষে সফলতা ও লাভের আশা করছেন তিনি। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বীজ দিয়েছে। বাগানে ফুল আসার পর প্রতিদিনই লোকজন আসছে বাগান দেখতে।

তিনিও আশা করছেন আগামীতে সরকারি প্রশিক্ষন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাওয়া গেলে আরো বড় পরিসরে বাণিজ্যিক ভাবে সূর্যমুখী চাষ করার। বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর এলাকার সূর্যমুখী চাষী আব্দুল জলিল জানান, ধান এবং সবজি চাষ করে প্রতি বছর তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। যার ফলে অনেক প্রান্তিক চাষীরা এখন দেনার দায়ে দিশেহারা। তাই বিকল্প পথ হিসেবে সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন তারা। তানোর উপজেলার সরনজাই এলাকার সূর্যমূখী ফুলচাষী মোশাররফ হোসেন বলেন, সূর্যমুখী চাষে সার কীটনাশক ও সেচ পানির খুব একটা প্রয়োজন হয় না। তারা অনেকে এ বছর নতুন ভাবে এ ফুলের চাষ করেছেন।

সূর্যমুখী ফুলচাষ নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, দুর্গাপুরের কৃষকরা বানিজ্যিক ভাবে এই প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন। দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে চাষিদেরকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করা হয়েছে। সূর্যমুখী ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ দেওয়া হয়েছে। আশা করি ফলন খুবই ভালো হবে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, জেলার ৬টি উপজেলায় এর আগে কৃষকদের সূর্যমুখী ফুল চাষে তেমন একটা আগ্রহ ছিলোনা। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার কৃষি কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধকরণে রাজশাহীতে ১হাজার ২২৩ জন কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছেন। সূর্যমুখী বীজ রোপণের ৯০-১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় তাহলে প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ সূর্যমূখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। ১ মণ বীজ থেকে ১৮ কেজি তেল পাওয়া যাবে। বিঘা প্রতি থেকে কৃষক ১০-১১ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবেন। সূর্যমুখীর তৈল ছাড়াও খৈল দিয়ে মাছের খাবার এবং সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এই গাছের কোন অংশই ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন হয়না।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris