শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এলপিজি গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণে নতুন নীতিমালা করার উদ্যোগ

Paris
Update : বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১

এফএনএস : এলপিজি এখন শুধুমাত্র বাসা-বাড়িতে ব্যবহার হচ্ছে তা নয়। বরং গাড়ি চালানো, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিল্পেও এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে। ইতিমধ্যে কোন কোন জায়গাতে এলপিজি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু ওসব ক্ষেত্রে বিপণন এবং গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। যেহেতু সরকার সাধারণ ভোক্তার বিষয়টি সকল ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয় সেজন্যই এলপিজির মান এবং দর নিয়ন্ত্রণে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশব্যাপী তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াতেই সরকার ব্যবসায়ী এবং গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য ইতিপূর্বে জারি করা অন্য নীতিমালার সমন্বয় করে একটি নতুন নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এখন নীতিমালাটিতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত নিচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। ফলে এর আগে জারি করা এলপিজি বটলিং প্লান্ট স্থাপনের নীতিমালা-২০১৬, ‘তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (অটোগ্যাস) রিফুয়েলিং স্টেশন ও রূপান্তর ওয়ার্কশপ স্থাপন, পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণ নীতিমালা-২০১৬ এবং এলপি গ্যাস অপারেশনাল লাইসেন্সিং নীতিমালা-২০১৭ বাতিল হয়ে যাবে। তবে ওসব নীতিমালার আওতায় নতুন নীতিমালা জারির পূর্বদিন পর্যন্ত সম্পাদিত সকল কার্যক্রম বৈধ বলে গণ্য করা হবে।

সূত্র জানায়, উদ্যোক্তারা নিজেই এখন পর্যন্ত সরকারি অংশের বাইরে এলপিজির দাম বৃদ্ধি করে। জ্বালানি বিভাগ এলপিজির মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। উচ্চ আদালতেরও এ সংক্রান্ত নির্দেশনা রয়েছে। বিইআরসি এ সংক্রান্ত শুনানি করেছে। তবে নতুন নীতিমালায় এলপি গ্যাসের বহুমুখী ব্যবহার সম্প্রসারণের জন্য এলপিজি আমদানি, রফতানি, মজুদ, জেটি বা সিবিএম সুবিধাসহ টার্মিনাল স্থাপন, বটলিং প্লান্ট স্থাপন, অটোগ্যাস ডিসপেন্সিং বা রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন, যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহারের জন্য রূপান্তর ওয়ার্কশপ স্থাপন, রেটিকুলেটেড পদ্ধতির জন্য এলপিজি মজুদ ও ব্যবহার, এলপিজি পরিবহন এবং জ্বালানি ও কাঁচামাল হিসেবে এ গ্যাস বিতরণ ও বিপণনের লক্ষ্যে ফ্রাঞ্চাইজি বা ডিস্ট্রিবিউটর বা ডিলার নিয়োগের সঙ্গে ভোক্তা স্বার্থ ও অধিকার, এলপিজির নিরাপদ ব্যবহার পদ্ধতি সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে এলপি গ্যাস অপারেটর সারাদেশে এক বা একাধিক স্থানে ন্যূনতম ৫ হাজার মেট্রিক টন এলপিজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মজুদ ট্যাঙ্ক স্থাপন করে এলপিজি পরিবহন, বিতরণ, বিপণন বা রফতানি করার লক্ষ্যে নিজস্ব জেটিসহ টার্মিনাল বা অন্যের জেটি ও টার্মিনাল ব্যবহার করে এলপিজি আমদানি অথবা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এলপিজি সংগ্রহ, বটলিং প্লান্ট স্থাপন, বোতলজাতকরণ, অটোগ্যাস ডিসপেন্সিং বা রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন, যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহারের জন্য রূপান্তর ওয়ার্কশপ নির্মাণ করতে পারবে উদ্যোক্তারা।

তাছাড়া নিজস্ব জেটিসহ টার্মিনাল বা অন্যের জেটি ও টার্মিনাল ব্যবহার করে এলপিজি আমদানি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এলপিজি সংগ্রহ, অটোগ্যাস ডিসপেন্সিং বা রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন, অটোগ্যাস হিসেবে এলপিজি বিক্রি করা যাবে। অর্থাৎ এলপিজি বিক্রি করতে গেলে জেটি বা টার্মিনাল থাকতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা থাকছে না। তাছাড়া এলপিজি বটলিং প্লান্ট স্থাপনের জন্য ৩০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এলপিজি স্টোরেজ ট্যাঙ্ক থাকতে হবে। ফ্রাঞ্চাইজি বটলিং প্লান্ট স্থাপন ও বোতলজাতকরণ এবং একটি নির্দিষ্ট এলাকায় এলপিজি পরিবহন, বিতরণ, বিপণন ও ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে।

সূত্র আরো জানায়, দেশে এখন অনেক কোম্পানিরই ৫ হাজার মেট্রিক টনের ধারণ ক্ষমতার স্টোরেজ নেই। সেক্ষেত্রে যে সকল প্রতিষ্ঠান এলপিজি মজুদ ট্যাঙ্কের ধারণ ক্ষমতা ৫ হাজার মেট্রিক টন নেই সে সকল প্রতিষ্ঠানকে এলপি গ্যাস অপারেশনাল সমন্বিত নীতিমালা, ২০২০ অনুযায়ী অপারেটর হিসেবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নতুন নীতিমালা প্রকাশের তারিখ থেকে ২ বছরের মধ্যে প্লান্টের এলপি গ্যাস মজুদ ট্যাঙ্কসমূহের ধারণ ক্ষমতা কমপক্ষে ৫ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করতে হবে। অন্যথায় তিনি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। তবে কেউ যদি একেবারেই না পারে সে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ কোম্পানি বা কনসোর্টিয়াম গঠন করে এলপিজি ব্যবহার করতে পারবে।

তবে সেক্ষেত্রে একক নামে এলপিজি ব্যবহার করতে হবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অটোগ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন করতে পারবে না। অটোগ্যাসের কোন ফ্রাঞ্চাইজি থাকবে না। অপারেটর এবং ডিলার ওই দুই স্তরে অটোগ্যাস বিপণন ও বিতরণ করতে হবে। অপারেটর অটোগ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন ও পরিচালনার জন্য অটোগ্যাস স্টেশন স্থাপনের সংখ্যা উল্লেখপূর্বক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে আবেদন করবে। অনুমতি প্রাপ্তির পর অপারেটর অটোগ্যাস ফিলিং স্টেশন স্থাপনের জন্য ডিলার নিয়োগ করতে পারবে এবং অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অপারেটরের তত্ত্বাবধানে ডিলার অটোগ্যাস স্টেশন স্থাপন করতে পারবে। তবে সকল ডিলারের অটোগ্যাস স্টেশন স্থাপনের ক্ষেত্রে যাবতীয় অনুমোদন অপারেটরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে গ্রহণ করতে হবে।

পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে অটোগ্যাস দিন দিন জনপ্রিয় হলেও এখনো তার কোন নীতিমালা নেই। আর হাইওয়েতে অনুমোদিত একটি অটোগ্যাস স্টেশনের একই দিকে ৪ কিলোমিটার ও বিপরীত দিকে ২ কিলোমিটারের মধ্যে অটোগ্যাস স্টেশন স্থাপন করা যাবে না। সিটি কর্পোরেশন, জেলা শহর ও পৌরসভার আওতাভুক্ত এলাকায় অনুমোদিত একটি অটোগ্যাস স্টেশনের একই দিকে ২ কিলোমিটার ও বিপরীত দিকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে অটোগ্যাস স্টেশন স্থাপন করা যাবে না। আর অটোগ্যাস রূপান্তর কাজে আমদানিকৃত সিলিন্ডার, কিট ও যন্ত্রপাতি এলপিজি বিধিমালা ২০০৪ (সংশোধিত ২০১৬) অনুযায়ী স্বীকৃত আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বা কোড অনুসারে প্রস্তুত হতে হবে।

রূপান্তরিত ইঞ্জিন হতে নির্গত ধোঁয়ার মান পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক নির্ধারিত সীমার মধ্যে হতে হবে। নীতিমালার সংশ্লিষ্ট অংশের কোন শর্ত ভঙ্গ করলে এলপি গ্যাস লিমিটেড অটোগ্যাস রূপান্তর ওয়ার্কশপের অনুমোদন বাতিল করতে পারবে।

এদিকে সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি জাহাজ বা নৌযান থেকে এলপিজি খালাস অথবা জাহাজ বা নৌযানে এলপিজি বোঝাই করার জন্য জেটি বা জেটিসহ টার্মিনাল নির্মাণ করতে পারবে না। এলপিজিবাহী জাহাজ বা নৌযান নঙ্গর করতে সক্ষম এমন নদী বা চ্যানেল বা সাগর তীরবর্তী স্থানে প্রস্তাবিত জেটি বা জেটিসহ টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। প্রস্তাবিত জেটি বা জেটিসহ টার্মিনাল নির্মাণের ক্ষেত্রে আবাসিক/জনবহুল এলাকা পরিহার করতে হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris