শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

‘সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা চালু হবে’

Paris
Update : রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১

এফএনএস : একযোগে দেশের সব পর্যায়ের (সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌনপ্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক ওয়েবিনারে তিনি এ কথা জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জেনারেশন ব্রেক থ্রু প্রকল্প’ সীমিত আকারে শুরু করা হয়েছিল। মাঝখানে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আমার কাছে উপস্থাপিত হয়েছিল দুটো বিভাগে হবে। কিন্তু আমি বলেছিÑ দুটি বিভাগ একটি বিভাগের বিষয় নয়।

এটি সারাদেশের সকল শিশুদের জন্য প্রযোজ্য। কাজেই অন্য কোনও কর্মসূচি আমরা পর্যায়ক্রমে বাড়াতে পারি কিন্তু এই কর্মসূচি যেহেতু সফল বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। এ পর্যন্ত যা মূল্যায়ন হয়েছে তাতে এ প্রকল্পটি কার্যকর। সে কারণে সারাদেশে আমরা একযোগে সারা দেশে শুরু করছি। শিক্ষামন্ত্রী জানান, জেনারেশন ব্রেক থ্রু প্রকল্পের মধ্যেই কিশোর-কিশোরী কর্নার আছে। বিভিন্ন ধরনের বই আছে। প্রশিক্ষক শিক্ষক দিয়ে পরিচালনা করা হয়। আমরা দেখেছি, এতে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা নিজেদের ম্যানেজ করা অন্যান্যের সঙ্গে প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার বিষয়গুলো দক্ষতার সঙ্গে শেয়ার করে শিখে যাচ্ছে। কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়ে বইয়ে চ্যাপ্টার থাকলেও শিক্ষকরা সেটি পড়ান না বলে অভিযোগ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় শিক্ষকদের প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

কিন্তু এর পরও হয়তো সামাজিক কারণে বিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পাঠদান করতে শিক্ষকরা আগ্রহী হন না। এটি একজন মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মূল বিষয় হচ্ছে সচেতনতা। এই জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি। শুধু কিশোর-কিশোরী নয়; বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং স্বাস্থ্যকমীদেরও সচেতন হতে হবে। কিশোর বয়সটি বেয়াড়া। অস্বস্তির সময়। এই অস্বস্তির সময় কিশোর-কিশোরীরা যেন স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগ রয়েছে, কিন্তু এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। এর মধ্যে আমরা অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছি। দীপু মনি বলেন, এই বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়, অস্বস্তি, দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতে পারে। এতে তাদের মানসিক সমস্যা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেকটি স্কুলে একজন কাউন্সিলর নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাউন্সিলর নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু করোনার কারণে উদ্যোগটি পিছিয়ে যায়।

এখন আমরা প্রতিটি জেলায় একজন করে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দিচ্ছি। আমরা আমাদের দুই লাখ শিক্ষকের কাউন্সিলিংয়ের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। মাঝখানে করোনার কারণে পিছিয়ে পড়েছি। এখন আমরা ৬৪টি জেলায় একজন করে কাউন্সিলর বা মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেওয়ার কাজটি শুরু করেছি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত দুজন শিক্ষককে কাউন্সেলিং বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারে। আমরা আশা করছি শিগগিরই দুই লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে পারবো। যাতে এসব ক্ষেত্রে যেকোনও সমস্যার সমাধান করতে পারেন শিক্ষকরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে এতে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ শরীফ (এমসিএইচ)। ‘কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থা’ বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন নারীপক্ষের সদস্য ও নারীর স্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরিন।

এ বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির ফেলো অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ড. সাবিনা ফাইজ এবং পিপিআরসি’র কথা রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটের পরিচালক উমামা জিল্লুর। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী প্রধান শাহীন আনাম। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ২০১৯-২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে ২০১৯ সালে ২৩৯ জন কিশোর ও এক হাজার ৬২৮ জন কিশোরী এবং ২০২০ সালে ৩১২ জন কিশোর ও এক হাজার ৪০০ জন কিশোরী এই স্বাস্থ্যসবো গ্রহণ করেছে।

জেলাওয়ারি দেখা গেছে, পটুয়াখালী ও বরগুনাতে এই দুই বছর কিশোর বা কিশোরীরা কোনও সেবা গ্রহণ করেনি। সংখ্যায় কম হলেও ঝালকাঠি জেলার কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছে এই দুই বছর। আর সংখ্যায় খুবই কম হওয়া সত্ত্বেও বরিশাল বিভাগের কিশোরীরা কিশোরদের চেয়ে বেশি সেবা নিয়েছে। ভোলায় সেবা নেওয়া কিশোরদের হার শূন্য। ওয়েবিনারে আরও বলা হয়, খুব যত্ন নিয়ে বা গুরুত্ব দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলা হয় না। বিদ্যালয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী চলছে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোও সময়মতো খোলে না।

তবে এর জন্য কারো কোনও জবাবদিহিতা নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি ৭৭ লাখ কিশোর-কিশোরী। কৈশরকালে মন ও দেহের যে বৃদ্ধি ঘটে, সেই পরিবর্তনের সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো শিশু-কিশোরদের মনো-দৈহিক ও মনো-সামাজিক, আবেগীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তন ঘটে। একইসঙ্গে এই বয়সটা তাদের জন্য খুব সম্ভবনার সময়। এই পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয় এবং পরিবার, সমাজ ও দেশের ভার গ্রহণ করে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris