শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনীহায় বিদ্যুৎ বিল আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না

Paris
Update : শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো অনীহায় বিতরণ সংস্থাগুলো বিদ্যুৎ বিল আদায়ের সামগ্রিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। কারণ ওসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখছে। সাধারণ ও বেসরকারি খাতের গ্রাহকরা গড়ে পৌনে ২ মাসের বিল বাকি রাখলেও সরকারি, আধা-সরকারি ও স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যায়ক্রমে প্রায় সাড়ে ৬ মাস, পৌনে ৬ মাস এবং পৌনে ১৭ মাসের বিল বকেয়া রয়েছে। আর সময়মতো বিল পরিশোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন অনীহায় বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত বোর্ড-কোম্পানিগুলো গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি সৃষ্টি করতে পারছে না। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিতরণ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। গত নভেম্বর পর্যন্ত ওই কোম্পানিগুলোর এবং বিদ্যুৎ বিভাগের হাল নাগাদকৃত তথ্যানুযায়ী সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে।

টাকার অঙ্কে বেসরকারি খাতে বকেয়া বিলের পরিমাণ বেশি হলেও সময়ের হিসাবে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাকির খাতাই বেশি দীর্ঘ। মোট ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা বকেয়ার মধ্যে বেসরকারি খাতের বকেয়ার পরিমাণই ৬ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। বাকি প্রায় ১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

সূত্র জানায়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বকেয়ার পরিমাণ বেশি হলেও তারা অপেক্ষাকৃত কম সময় ওই বকেয়া ধরে রাখছে। প্রকৃতপক্ষে এখন বেসরকারি খাতে বিলিং মাসের বাইরে এক মাসের কম সময়ের বিল বাকি রয়েছে। ফলে তা বিতরণ কোম্পানিগুলোর ওপর বেশি চাপ তৈরি করছে না। কিন্তু অনেক সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর ধরেও বিল দিচ্ছে না। যা বাড়তি চাপ তৈরি করছে।

সূত্র আরো জানায়, সরকারি, আধা-সরকারি, স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বকেয়া বিল বাবদ পিডিবি যথাক্রমে ৭.১৪ মাসের, ৬.৯৩ মাসের, ১৮.০১ মাসের এবং ২.৪৭ মাসের সমতুল্য বিল পাবে। পল্লী বিদ্যুৎ সরকারি ও আধা-সরকারি থেকে পাবে ৩.০৭ এবং ২.১৩ মাসের বিল। সবচেয়ে বড় এ বিতরণ সংস্থা স্থানীয় সরকার থেকে বকেয়া বিল বাবদ পাবে ১০.২৯ মাসের বিল। বেসরকারি খাত থেকে পাওনা রয়েছে ১.৬৪ মাসের বিল। স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলোর মধ্যে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

আর ডিপিডিসি সরকারি, আধা-সরকারি, স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বকেয়া অর্থ বাবদ যথাক্রমে পাবে ৯.২০, ৩.৭২, ৭.৩০ এবং ১.৪২ সমতুল্য মাসের বিল। ডেসকো সরকারি, আধাসরকারি, স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাওনা রয়েছে যথাক্রমে ৭.০৭, ০.৬৯, ২.৭০ এবং ১.৪৯ মাসের বিল। সরকারি, আধা সরকারি, স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বকেয়া অর্থ বাবদ ওজোপাডিকো যথাক্রমে ৩.১৮, ১০.১৭, ৪৮.১১ এবং ১.২৩ মাসের সমতুল্য বিল পাবে। নেসকো সরকারি, আধা-সরকারি, স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বকেয়া অর্থ বাবদ যথাক্রমে পাবে ১১.২৯, ২.৭১, ১৭.৫৩ এবং ১.৬১ মাসের বিল।

সরকারি, আধা-সরকারি, স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সবগুলো সংস্থার মোট বকেয়ার পরিমাণ যথাক্রমে ৬.৭৫, ৪.০২, ১০.৮৫ এবং ১.৭১ সমতুল্য মাসের বিল। এদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের থিঙ্ক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানান, বকেয়া বিল দেশের বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির পথে একটি বড় বাধা। স্মার্ট ও প্রিপেইড মিটার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে বকেয়া নিয়ে অস্বস্তিকর চাপ দূর হয়ে যাবে। বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও প্রিপেইড মিটার স্থাপনে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে। তাছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন দ্রুত বিল পরিশোধ করে সেজন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে আরো ভালো হওয়া প্রয়োজন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris