শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের উদারতায় জাতিসংঘের প্রশংসা

Paris
Update : শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তার প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ প্রশংসা করেন তিনি। । গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন, আর তা হলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। সমস্যাটির সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে জাতিসংঘ সদা প্রস্তুত রয়েছে।

এসময় ভাষানচরে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার অনুরোধ জানান। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে আন্তোনিও গুতেরেজ বলেন, কোনো ঝুঁকি নিরসনের বৈশ্বিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ সর্বদাই শীর্ষস্থানীয়, তাই কোভিড মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্য দেখে আমি মোটেও অবাক হইনি। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।

এদিকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে অংশগ্রহণ করতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসকে আমন্ত্রণ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বৈঠকে করোনা অতিমারি কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত ও আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ গৃহীত ব্যাপকভিত্তিক পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের অতীত রেকর্ডের উদাহরণ টেনে মহাসচিব গুতেরেস বলেন, কোনো ঝুঁকি নিরসনের বৈশ্বিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ সর্বদাই শীর্ষস্থানীয়, তাই করোনা অতিমারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের এ ধরনের সাফল্য দেখে আমি মোটেও অবাক হইনি।

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতির উচ্চকিত প্রশংসা করেন। আলোচনাকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিব উভয়েই সম্মত হন যে করোনার ভ্যাকসিনকে ‘বৈশ্বিক সম্পদ’ হিসেবে বিবেচিত করা উচিত। জলবায়ু কর্মসূচিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের যে সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার প্রশংসা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জলবায়ু-অর্থায়নকে সচল করতে মহাসচিবের আহ্বানকে স্বাগত জানান। ক্লাইমেট ভারনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে ও এ বছর গ্লাজগোতে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৬ সফল করতে জাতিসংঘের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে মর্মে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা তার জীবনের যুদ্ধ বলে অভিহিত করে মহাসচিব বলেন, অভিযোজন কৌশল বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত জলবায়ু তহবিলের ৫০ শতাংশ বরাদ্দ পেতে দাতাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন তিনি। উপকূলবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক অভিযোজন কর্মসূচি ও নদী ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপসমূহকে অসাধারণ হিসেবে উল্লেখ করেন গুতেরেস। বাংলাদেশ এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরিত হতে যাচ্ছে মর্মে সন্তুষ্টির কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন অংশীদার ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ উত্তরণ পরবর্তী সময়েও যেন নতুন সহায়তা ব্যবস্থার আওতায় সদ্য উত্তরিত দেশগুলোকে বিবেচনা করে সেজন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে মহাসচিবের দপ্তরের পূর্ণ সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

উত্তরণ কেবল জিডিপি দ্বারা পরিমাপকৃত কোনো কারিগরি বিষয় নয়, এটি বিবেচনার ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক নাজুক সূচকসমূহেরও ব্যবহার করা যেতে পারে মর্মে মত প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, উত্তরণ কোনো শাস্তি হতে পারে না, এটি হতে পারে পুরস্কার। অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুগপৎভাবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম এবং মহাসচিবের পুননির্বাচন ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে অংশগ্রহণ করতে মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভার্চ্যুয়াল এ বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন তিনদিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

এদিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলকে সার্বজনীনতা, নিরপেক্ষতা ও ভেদাভেদ পরিহারের নীতি অনুসরণ করে মানবাধিকার রক্ষার জন্য একটি দুর্গ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৬তম অধিবেশনের একটি উচ্চতর সেশনে এক ভিডিও বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন। ড. মোমেন বলেন, মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, জেন্ডার সমতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও সংখ্যালঘু, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সবার অধিকারের প্রতি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।

তবে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে মানবাধিকার কাউন্সিল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গঠনমূলক ভূমিকা নিতে হবে। তিনি রাখাইন বিষয়ক উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ও মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতেও জোর দেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris