এফএনএস : রেলে নিয়োগ, কেনাকাটা, টিকিট বিক্রি ও ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতিসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০ খাতে অনিয়ম হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রেলের বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিং প্রয়োজন বলে মনে করে দুদক। দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) চট্টগ্রাম এবং (পশ্চিমাঞ্চল) রাজশাহীর অধীনে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়ে থাকে। রেলওয়ের অধীনে ওয়াগন, কোচ, লোকোমোটিভ ক্রয় ও সংগ্রহ ছাড়াও বিভিন্ন সেকশনের স্টেশন সিগনালিং ব্যবস্থা পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নে দুর্নীতি হয় বলে দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ডাবল লাইন, সিঙ্গেল লাইন, ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ কাজে ও রেলওয়ের ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতি হয়ে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিএস সৈয়দপুর, নীলফামারী; বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল, পাকশী; বাংলাদেশ রেলওয়ে, লালমনিরহাট; পাহাড়তলী ও চট্টগ্রাম কর্তৃক বিজি ও এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুর্নবাসন নিলামে যন্ত্রাংশ বিক্রয় প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে। এছাড়া রেলওয়ের অধীনে ওয়ার্কশপগুলো ও স্লিপার ফ্যাক্টরি কার্যকর না করে আমদানির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অনিয়ম, রেলওয়ের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারি হয়ে থাকে এবং এ কালোবাজারিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারীরা অনিয়ম করে থাকেন। দুদকের প্রতিবেদন বলছে, কতিপয় দালাল বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারীদের সহযোগিতায় আন্তঃনগর ট্রেনের অধিকসংখ্যক টিকিট ক্রয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে।
এর ফলে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ইজারা প্রদান ও আন্তঃনগর ট্রেনসহ অন্যান্য ট্রেনে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে রেলের এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী দুর্নীতি করছে।
দুদকের সুপারিশ: বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ও বিভিন্ন ক্রয়ে প্রতিযোগিতামূলক উন্মুক্ত বা ই-টেন্ডারিং দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে কার্যাদেশ প্রদান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানসম্পন্নদের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে দুদক। বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টার, বাসভবন বা অফিস স্থাপনার সম্পত্তিসমূহ ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করাসহ অবৈধভাবে দখল করা সম্পত্তি নিজ তত্ত্বাবধানে আনা ও রেলওয়ের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য ডাটাবেইজ তৈরি করতে বলেছে দুদক।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়ার্কশপ ও স্লিপার ফ্যাক্টরিগুলো সচল করা, সেগুলো তদারকির জন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে। মনোপলি বা একচেটিয়া ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পিপিএ এবং পিপিআর অনুসরণ, অডিট কার্যক্রম জোরদার, টিকিট কালোবাজারি রোধে বিক্রয়ে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার ও নিয়মিত মনিটরিং, রেলওয়ের পদোন্নতি ও বদলির ক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠাকে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা ও রেলওয়ের সকল কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) পদ্ধতির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে দুদক।