শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আলমকে ‘চোর’ ও ‘ডাকাত’ আখ্যায়িত করলেন হাইকোর্ট

Paris
Update : বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : পিপলস লিজিংয়ের শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে ‘চোর’ ও ‘ডাকাত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন হাইকোর্ট। ভার্চুয়ালে যুক্ত এক আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের বিচারক মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ ঋণখেলাপিদের আইনজীবীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথা বলেন। আদালতে এদিন উপস্থিত ৫১ ঋণখেলাপির পক্ষে আইনজীবী মুশতাক আহমেদ শুনানি করেন। এ সময় আদালত বলেন, পি কে হালদার এবং এস কে সুর কী আকাম-কুকাম করছে সেটা তো চলবেই। আমরা দেখছি হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে এ কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রেখে টাকা উদ্ধার করা যায় কি-না। আমানতকারীরা আজকে খেয়ে, না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আমরা চেষ্টা করছি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের।

একটি কোম্পানি অবসায়ন করতে হলেও তার একটা প্রসিডিং আছে। আমরা সেটাও দেখছি। টাকাগুলো উদ্ধারের একটা পথ বের করার চেষ্টা করছি। এ সময় অনেক ঋণখেলাপি টাকা পরিশোধে সময় প্রার্থনা করছেন। এরই একপর্যায়ে ভার্চুয়ালে যুক্ত আইনজীবীকে আদালত বলেন, ‘শাহ আলম একটা চোর, ডাকাত।’ এর আগে, এই দুর্নীতির অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হককে গ্রেপ্তার করে।

হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেয়া হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক অফিসিয়াল আদেশে বিষয়টি জানানো হয়। তবে একটি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে এখনও বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যানসিয়াল স্টাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট, ডিপোজিট ইন্সুরেন্স ডিপার্টমেন্ট এবং স্পেশাল স্টাডিজ সেলের নির্বাহী পরিচালক। এদিকে, প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে কানাডায় পলাতক আছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের সাবেক পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার)। তাকে দেশে ফেরাতে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

গতকাল মঙ্গলবার আইনজীবীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত বলেন, সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার এবং এসকে সুর চৌধুরী কী আকাম-কুকাম করলো, সেটা নিয়ে হাইকোর্ট বসে থাকবে না। আদালতের কি আর কোনো কাজ নেই! দুদক কী ব্যবস্থা নিলো? আমরা আদেশ দিলাম কত আগে, আর জানুয়ারি মাসে এসে জানানো হলো, পি কে হালদার বিদেশ পালিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর কাছে আদালত জানতে চান, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের হেড অফিস কোথায়? সেখানে কম্পিউটার, চেয়ার টেবিল কি কিছু আছে? প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, অন্য লোকজন ও পিয়ন আছে? শুনানিতে আরেক খেলাপির আইনজীবী ২৭ কোটি টাকা দিতে সময় চাইলে আদালত পিপলস লিজিংয়ের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘উনার কত টাকা?’

আইনজীবী জানান, ‘১১৬ কোটি টাকা’। তখন আদালত বলেন, ‘রাস্তায় যে ক্লায়েন্টরা না খেয়ে আছেন তাদেরকে দেখবে কে?’ এদিকে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি টাকার ঋণখেলাপিরা তলব আদেশে হাজির না হলে প্রয়োজনে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হবে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি অর্থের ঋণখেলাপি ২৮০ ব্যক্তিকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। ২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের পর্যায়ক্রমে আদালতে হাজির হয়ে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়েছিল। আদালতের সে আদেশের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ১৪৩ জন ঋণখেলাপির হাজির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র ৫১ জন হাজির হন। বিষয়টি নজরে আসার পর হাইকোর্ট বলেন, আদালতের তলবে যারা আজ আসেননি, তাদের আরেকবার সুযোগ দেওয়া হবে।

এরপরও তারা আদালতে হাজির না হলে প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে কোর্টে হাজির করা হবে। উল্লেখ্য, নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও পরিচালকদের অর্থ আত্মসাতের কারণে আমানতকারীদের অর্থ ফেরতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের ১০ জুলাই পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ন ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অবসায়ন সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত ঋণখেলাপিদের তলব করেন। পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন পায় ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর। এরপর ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এ প্রতিষ্ঠানে দুই হাজার কোটি টাকার আমানত ছিল।

এই টাকা থেকে পিপলস লিজিং এক হাজার ১৩১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে যার মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি হয়। খেলাপি ঋণের মধ্যে ৫৭০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং বিদেশে পাচারের অভিযোগ নিয়ে কানাডায় পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারও (পিকে হালদার) পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস এর গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris