বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

অভিযোগ-আন্দোলন উপেক্ষা পুকুর খননকারীদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ রাজশাহীর কৃষক-জনতা

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েও রাজশাহীর বাগমারায় বন্ধ হয়নি কৃষিজমিতে পুকুর খনন। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল বুধবার বিকেলে বাগমারার গনিপুর ইউনিয়নের তাহের একডালা আমতলী বাজারে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন এলাকার শতশত কৃষক। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর বাগমারার গনিপুর ইউনিয়নের তাহের একডালা এলাকার সোনাবিলের প্রায় দুইশো’ বিঘা কৃষিজমিতে জোরপূর্বক পুকুর খননের কাজ শুরু করছেন এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল। কৃষিজমিতে পুকুর খননের কারণে বিলের অন্যান্য জমিগুলোও হুমকির মুখে পড়ছে এবং আবাদি জমির পরিমান কমে যাবে। তাছাড়া ওই বিলের মধ্যে পুকুর খনন করা হলে বিলের পানি চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে চাষাবাদ হুমকীর মুখে পড়বে। কাজেই পুকুর খনন বন্ধ করা না হলে এলাকার কৃষকেরা চরম খাদ্য সংকটে পড়বে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছে গত সোমবার এই অভিযোগটি করেছেন এলাকাবাসীর পক্ষে গণিপুর ইউনিয়নের তাহের একডালা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলী মন্ডলের ছেলে দুলাল হোসেন মন্ডল। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েও সোনাবিলের কৃষিজমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধ না হওয়ায় মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন এলাকাবাসী। গনিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল ইসলামের নেতৃত্বে এলাকার ১০-১২টি গ্রামের শতশত কৃষক একত্রিত হয়ে রাস্তার দুই পার্শ্বে দাঁড়িয়ে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। এসময় মানববন্ধন কর্মসূচীতে গনিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য আব্দুস সোবহান ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কৃষকলীগসহ এলাকার শতশত কৃষকরা অংশগ্রহণ করেন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং কৃষিজমিতে পুকুর খনন বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের। বাগমারার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেছেন, বাগমারায় কৃষিজমিতে পুকুর খননের জন্য কাউকে অনুমোতি দেয়া হয়নি। তাছাড়া এ বিষয়ে জেলা প্রসাশকের দপ্তরে অভিযোগ হলেও আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অসহায় চারঘাটের কৃষক : চারঘাট থেকে একে আজাদ (সনি) জানান, চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়নের মাঠ জুড়ে চাষ হয়েছে গম, মশুর, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ফসল। চোখ মেললে সেখানে সবুজের সমারোহে মনটা ভরে উঠে। কিন্তু সেই সবুজের বুক চিড়ে খনন করা হচ্ছে অবৈধভাবে একের পর এক পুকুর। যেনো দেখার কেউ নেই। প্রভাবশালী পুকুর খননকারীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে সেখানকার কৃষকরা। এভাবে চলতে থাকলে চারঘাটের অন্য বিলের কৃষকদের মত নিমপাড়ার কৃষকরাও এক সময় চরম সংকটের মধ্যে পড়বে। জলাবদ্ধতার কারণে পুকুরের আশেপাশের জমিগুলো অনাবাদী হয়ে পড়বে। কৃষকদের পথে বসতে হবে। এভাবেই আক্ষেপ জানান ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিন নিমপাড়া ইউনিয়নের ঝাউবনা বিলে গিয়ে দেখা যায়, ফসলী মাঠ জুড়ে এসকেভেটর দিয়ে রিতিমত পুকুর খননের উৎসবে মেতেছে রতন আলী নামের কথিত এক দন্ত ডাক্তার। মুনসুর আলী নামে এক ব্যাক্তির প্রায় ৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চলছে পুকুর খনন। তার পাশেই ভাটপাড়া বিলে পাপুল নামে আরেক ব্যাক্তির পুকুর খনন চলছে। নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক পুকুরের পাশ্ববর্তী জমির কৃষকরা জানান, কথিত দন্ত ডাক্তার রতন আলীর দাপটের কাছে সেখানকার কৃষকরা অসহায়। রতন ও তার লোকজনের ভয়ে স্থানীয় কৃষকরা নিশ্চুপ। নিঃশব্দে চোখের পানি ফেললেও তারা বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেনা। তবে পুকুরগুলো খনন হলে শতশত বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। তাই দ্রুত এসব অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তারা।

ঝাউবনা বিলে অবৈধ পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে পুকুর খননকারী রতন আলী বলেন, সবখানেই তো পুকুর খনন চলছে, শুধু আমার ক্ষেত্রেই বাধা। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে ভুমি মন্ত্রনালয়ের অনুমতি প্রয়োজন হয়। আপনি কি সেই অনুমতি নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এত কথা বলতে পারছি না। দেখা করে কথা বলবো। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানান, অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খননের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে চরম ভাবে কৃষি জমির উপর প্রভাব পড়বে। এতে কৃষি জমি সংকটে পড়বে। ফসল উৎপাদন কমে যাবে, সেজন্য দ্রুত প্রতিকার প্রয়োজন। এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা সামিরা বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা যাবেনা। অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

দুর্গাপুরে ভেকু দালাল : দুর্গাপুর থেকে শাহীন আলম জানান, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় তিন ফসলী জমিতে পুকুর খননের জন্য বিভিন্ন দালাল শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছে, থানা,সাংবাদিক বিভিন্ন উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ম্যানেজের নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছ নারয়ণপুরের মইদুল দালাল, ঢাকা থেকে আগত ছলিম দালল, চট্টগ্রাম থেকে আগত মোশাররফ দালাল, আলিপুর শফিকুল, কিসমত গণকৌড় আমিন, কয়ামাজপুরের জাহাঙ্গীর, চৌপুকুরিয়ার মান্নান, আলীপুরের জাহাঙ্গীর, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সন্ধ্যা হলেই সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রশাসনিক কিছু অসাধু-কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে পুকুর খননের রেট নির্ধারণ করেন। বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত ম্যানেজ রেট থাকে। তাঁরা বিভিন্ন কৌশলে তাদের নিজ স্বার্থ রক্ষা করে চালাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম।

প্রশাসনের সাথে সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যাবহার করেন হর হামেশাই এমনকি তাঁদের বিক্রয়ের তালিকায় সাংবাদিক মহলও । পুকুর মালিকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার সাথে বিভিন্ন কূটবুদ্ধি দিয়ে অসহায় কৃষকদের বিপদে ফেলেন। দুর্গাপুর জুড়ে আলোচনার শীর্ষে মইদুল, সোলিম, মোশাররফ এই তিন দালাল। শুন্য থেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন মইদুল পূর্ব থেকে আনাগোনা রয়েছে। বিভিন্ন মামলার আসামীও তিনি। গত দুই তিন বছরে উপজেলার বিভিন্ন বিলে আবাদি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খননের নামে পুকুর মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন টাকা। চারদলীয় জোট সরকারের সময় যুবদলের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিলো। বর্তমানে সরকারের টানা তিন বারের মেয়াদে খোলোস পাল্টে এখন হয়েছেন যুবলীগের নেতা।

আর এই প্রভাবকেই কাজে লাগিয়ে বনে গেছেন টাকার কুমির। অর্ধকোটি টাকা ব্যায়ে নিজ গ্রাম নারায়ণপুরে জুড়েছেন আলিশান বাড়ি। কিভাবে তিনি এতো টাকার মালিক? প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এলাকাবাসী বলেন, তিনি থানায় যাতায়াত করেন নিয়মিত হামলা মামলার ভয় দেখান কিছু বলতে শাহস হয়না। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার টাইম নাই আপনার যা ইচ্ছে করেন।

আরেক দালাল ঢাকার আমিন বাজার থেকে আগত সোলিম, নিজ বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে ড্রাইভার থেকে হয়েছেন বড় ব্যবসায়ী। বিভিন্ন দালাল তার আন্ডারে কাজ করে অপাতত দৃষ্টিতে মনে দালালির কোম্পানী। তার নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক জিডি রয়েছে। কখনো সাংবাদিকের মুখোমুখি হলেই বিভিন্ন হুমকি দিয়ে সত্য প্রকাশে ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকেন। এবিষয়ে তিনি জানান, যারা নেতাদের নাম ভাঙ্গাচ্ছেন, তাদের ধরেন? আমার গাড়ি চলছে না। চট্টগ্রাম থেকে আগত দালাল মোশাররফ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের নাম ও প্রশাসনের নাম ব্যাবহার করে প্রতারণার জাল বিছিয়েছেন পুরো দুর্গাপুর জুড়ে। এবিষয়ে তিনি বলেন, আমি এসবের সাথে জড়িত না, আমি এলাকায় নাই।

এই দালল তিন ফসলী জমি, রাস্তা, কারেন্টের পোল, ট্রান্সমিটার, ডিপ লাইন সবকিছু ধংস করার উৎসবে মেতেছে তাঁরা। নিজের মতো ম্যানেজের আইন তৈরি করে শস্য শ্যামল দুর্গাপুরকে বদ্ধ ডুবন্ত জলাভূমিতে পরিণত করার প্রধান কারিগর তারা। সাধারণ মানুষ বলছে এরাই যতো সমস্যার মুল এদের জন্যে দুর্গাপুরের আজ এই অবস্থা দ্রুতই এই দালালদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি হাশমত আলী জানান, পুকুর ভূমি সেক্টর এটি উপজেলা দেখবে। আমাদের নাম কেউ ব্যবহার করলে থানায় জানাবেন আমরা ব্যবস্থা নিবো। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মহসিন মৃধা জানান, আমাদের নাম ব্যাবহার করে কেউ অপরাধ সংগঠিত আমাদের জানান। আর ভেকু দালালদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris