স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে শূণ্যপদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত সার্বিক কর্মকান্ডে স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও বিধি বহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ সম্পন্নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও উক্ত শূণ্যপদকে কেন্দ্র করে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। তেমন কোন যৌতিক কারণ ব্যতীরেকেই একাধিকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, যোগ্য আবেদনকারীকে অযৌতিক কারণে নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া, আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য পূর্বক বেআইনী পন্থাবলম্বনে ম্যানেজিং কমিটি ও নিয়োগ বোর্ডের হর্তাকর্তাদের নিজস্ব প্রার্থীকে উক্ত শূণ্যপদের দায়িত্ব দেওয়াসহ আরো বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে শূণ্যপদের বিপরীতে নিয়োগ সংক্রান্ড কর্মকান্ড নিয়ে।

যার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী ও বঞ্চিত হওয়া আবেদনকারীরা বিজ্ঞ ‘জেলা-রাজশাহীর দূর্গাপুর সহকারী জজ আদালতে’ একটি মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। যার মোকদ্দমা নং-৩৫/২০২০ অঃপ্রঃ। উক্ত মোকদ্দমার বাদী পক্ষের অভিযোগ, বিবাদীরা আইনানুগ পন্থাবলম্বন না করে উপরন্তু; নিয়োগ বোর্ড গঠণ না করেই মনগড়াভাবে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে দিয়ে উক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক কাজ সম্পন্ন করাচ্ছেন। যদিওবা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও নিষেধাক্তার আবেদনের বিপরীতে বিবাদীরে দেওয়া লিখিত জবাবানুযায়ী নিয়োগ বোর্ডের সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ থাকার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার প্রশাসনিক কাজ থেকে মোকদ্দমার ৬নং বিবাদী সাইদুর রহমানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য একটি আদেশ দিয়েছেন।

কিন্তু, ম্যানেজিং কমিটি ও মনগড়া নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা বিজ্ঞ আদালতের সেই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিধিবহির্ভূত ভাবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সাইদুর রহমানকে দিয়েই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার কাজ সম্পন্ন করাচ্ছেন। এতে করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আদালতের আদেশকে অবমানান ও অবজ্ঞা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য বাদীদ্বয়ের। বাদীর অভিযোগ ও মামলার নথি দেখে জানাগেছে, কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদে বিপরীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক গত ০২-০৪-২০১৯ ইং তারিখে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রেক্ষিতে শূণ্য পদের বিপরীতে দশটি আবেদন জমা পড়ে।

প্রায় ছয় মাস পরে গত ১৫-১০-২০১৯ ইং তারিখে ঐ একই পদের বিপরীতে ম্যানেজিং কমিটি আবারো দ্বিতীয়বারের মতো আরো একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন পূর্ববর্তী উভয় পত্রিকায়। দ্বিতীয়বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পরে উক্ত শূণ্য পদের বিপরীতে আর কোন আবেদন জমা না পড়ার কারণে পূর্ববর্তী আবেদীত প্রার্থীদেরকেই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশহগ্রহণ করার জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির ছাত্র অভিভাবক সদস্য শামীম মোল্ল¬া বিজ্ঞ আদালতে এফিডেভিট দাখিল করে ঘোষণা করেন যে, করোনা ভাইরাসের পর থেকে অদ্যবধি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোন মিটিং হয়নি বা নিয়োগ সংক্রান্ত বা প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বা নিয়োগ বোর্ড হয়নি।

তবে, কিভাবে সাইদুর রহমানকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া সাপেক্ষে উক্ত ব্যক্তিকে দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক প্রশাসনিক কাজ করানো হচ্ছে বলে প্রশ্ন তোলেন বাদী পক্ষসহ এলাকার সচেতন মহল। উক্ত মোকদ্দমার বাদীদ্বয় হলেন, আবেদনকারী রেজাউল করিম ও সাইফুল ইসলাম। আর পর্যায়ক্রমে বিবাদীগণ হচ্ছেন, উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল গফুর শাহ্, ঐ প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান, দূর্গাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, নগরীর হাজী মোহাম্মদ মহসিন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও বিধিবর্হিভূত ভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাজে সম্পৃক্ত থাকা সাইদুর রহমান।

ভুক্তভোগী ও নিয়োগ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া প্রার্থীর অভিযোগপত্র ও মামলার নথি থেকে আরো জানাগেছে যে, প্রথমবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে প্রথমাবস্থায় প্রত্যেক আবেদনকারীকে প্রাথমিকভাবে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার পরে দ্বিতীয়বার পুনঃরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শূণ্যপদের বিপরীতে কোন আবেদন জমা না পড়ার পরেও হঠাৎ করেই তেমন কোন কারণ দর্শানো ব্যতীরেকেই অসৎ অভিপ্রায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার হর্তাকর্তারা দুই নং বাদী সাইফুল ইসলামকে অন্যায় ও অবৈধভাবে উক্ত নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার জন্য অযোগ্য ঘোষণা পূর্বক গত ১৬-১-২০২০ ইং তারিখে তাকে অবগত করেন।

প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় ছয় মাস পরে পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এবং প্রথমবার সকল আবেদনকারীকে পরিক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত করার তিন মাস পরে তেমন কোন কারণ ব্যতীরেকেই দুই নং বাদীকে পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে কেনো বঞ্চিত করা হয়েছে সেটি সকলের কাছেই প্রশ্নাতীত বিষয় হিসেবেই চিহিৃত হয়েছে বলে মন্তব্য বাদীদ্বয়ের। অভিযোগ সূত্রে আরো জানাগেছে যে, গত ২৪-১-২০২০ ইং তারিখে উক্ত শূণ্যপদের বিপরীতে সাক্ষাত গ্রহণের দিন ধার্য করে নিয়োগ বাণিজ্যের ষড়যন্ত্র হিসেবে অত্র কালিগঞ্জ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পক্রিয়ার সাক্ষাৎকার না নিয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে ৪ নং বিবাদীর স্কুলে নিয়োগ সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

বিধি মোতাবেক প্রধান শিক্ষক নিয়োগের স্থান কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে হওয়া বাঞ্চনীয় ছিল বলে মন্তব্য বাদীদ্বয়ের। বাদীদ্বয়ের অভিযোগ, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারি করার অসৎ অভিপ্রায়ে মনগড়া নিয়োগ কমিটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উক্ত হর্তাকর্তারা যেসকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সেটি নির্দ্ধিধায় দেশের আইনকে অবমাননা করার সামিল। দুই নং বাদী সাইফুল ইসলাম শিক্ষকতা পেশায় দীর্ঘ ২৭ বছরের অভিজ্ঞতা ধাকার পরেও কেনো তাকে নিয়োগ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হলো সেটি প্রশ্নাতীত হিসেবে সকলের মনে কড়া নাড়ছে বলে মন্তব্য এলাকার সচেতন মহলের।