শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেশি যাত্রী বহনকারী লোকাল মেইল ও কমিউটার ট্রেনে উদাসীন রেল কর্তৃপক্ষ

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : করোনার প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দেশের জল ও স্থলপথে সকল প্রকার যানবাহন চালু থাকলেও রেলপথে এখনো অধিকাংশ লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র দূরপাল্লার আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চলাচল করছে। অথচ লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনগুলোই ৭৫ ভাগ যাত্রী বহন করে। ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ওসব ট্রেন চালুর কোনো উদ্যোগ নেই। কবে নাগাদ ওসব ট্রেন চালু হবে তারও কোনো উত্তর মিলছে না। বরং যুগ যুগ ধরে স্পষ্ট হচ্ছে লোকাল ট্রেনের প্রতি কর্তৃপক্ষের অবহেলার চিত্র। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দীর্ঘদিনেও লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনে নতুন কিছু সংযোজন হয়নি। বরং দূরপাল্লার আন্তঃনগর ট্রেনের জন্যই রেলের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ এবং আধুনিক সব ইঞ্জিন ও কোচ আনা হচ্ছে। অথচ রেলের হিসাবেই প্রতিবছর ট্রেনে ভ্রমণকারী প্রায় ১০ কোটি যাত্রীর ৭৫ ভাগই বহন করে লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন। ওসব ট্রেন বন্ধ থাকায় রেলের আয়ও কমে গেছে। পাশাপাশি অল্প আয়ের ও দূরত্বে চলাচলকারী রেলযাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। করোনার এই সময়ে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চলাচল করার কথা থাকলেও নির্ধারিত আসনের প্রায় অর্ধেক যাত্রী মিলছে।

বর্তমানে ঢাকা-কলকাতা ও খুলনা-কলকাতা রুটে চলা ৪টি যাত্রীবাহী ট্রেনও বন্ধ। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চালুর পর লোকসানের পাশাপাশি সেবাও নিশ্চিত করা হচ্ছে না। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্ধ ট্রেনগুলো চালু হলে লোকসানও কমে আসতো। গত ৬ মাসে রেল যাত্রী পরিবহণ করেছে মাত্র এক কোটি ৬০ লাখ। তার আগে রেলে একই সময়ে সাড়ে ৪ কোটি যাত্রী পরিবহণ করা হয়। ৬ মাসে যাত্রী কমেছে প্রায় ৭০ ভাগ। তাছাড়া ভারত বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেসে ৪ জোড়া ট্রেন বন্ধ থাকার কারণেও রেলের লোকসান বাড়ছে। ওসব ট্রেনে মাসে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার যাত্রী ভ্রমণ করতো। আর ওই ওই রুটে আয়ের ৭৫ ভাগই পেত বাংলাদেশ।

সূত্র জানায়, বর্তমানে রেলওয়ের ৪৯৩টির মধ্যে মাত্র ৪১টি স্টেশনে ১০৪টি আন্তঃনগর ট্রেন বিরতি দিচ্ছে। কিন্তু গরিবের বাহন মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনগুলো প্রতিটি স্টেশনেই বিরতি দিতো। তাছাড়া ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা পথে চলা ৪টি যাত্রীবাহী ট্রেনও বন্ধ। তবে ট্রেন বন্ধ থাকলেও ওসব স্টেশনের প্রয়োজনীয় লোকবলকে বসিয়ে বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে। অথচ বন্ধ ট্রেন চালু হলে ওসব স্টেশন সচল হয়ে উঠার পাশাপাশি রেলের আয়ও বাড়তো। করোনা সংক্রমণ রোধে প্রায় দু’মাস সব ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চালু করা হলেও অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হচ্ছে।

লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনের মধ্যে সিলেট সেকশনে ৩ জোড়া, আখাউড়া-সিলেট, আখাউড়া-চট্টগ্রাম, আখাউড়া-ভৈরব, চট্টগ্রাম-লাকসাম-চাঁদপুর রুটে ৮ জোড়া, ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার রুটে ৪ জোড়া, খুলনা-বেনাপোল, রাজশাহী-খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট-পার্বতীপুর, নীলফামারী-চিলাহাটি, দিনাজপুর-পঞ্চগড় রুটে ১৬ জোড়া, ঢাকা ময়মনসিংহ, ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে ৪ জোড়া ট্রেন বন্ধ থাকায় ওসব অঞ্চলের রেলযাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ময়মনসিংহ-ভৈরব পথে ৪টি লোকাল ট্রেন চলতো। কিন্তু ১০ মাস ধরে ওসব ট্রেন বন্ধ। ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস নামে দুটি মেইল ট্রেনও বন্ধ রয়েছে। অথচ ওই সব কটি ট্রেনেই উপচে পড়া ভিড় ছিল। সেগুলো বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

এদিকে রেলওয়ে প্রকৌশল ও মেকানিক্যাল দপ্তর সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রায় এক যুগ ধরে রেলে নতুন ইঞ্জিনসহ অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী কোচ ক্রয় করা হলেও লোকাল, মেইল কিংবা কমিউটার ট্রেনে নতুন কোনো কিছু সংযোজন হয়নি। বর্তমানে ৩৫১টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে, যার মধ্যে ১০৪টি আন্তঃনগর এবং ১৪৮টি মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন। অনেক আগেই ওসব ট্রেনের কোচ ও ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওসব ইঞ্জিন ও কোচ দিয়েই ট্রেনগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে ওসব ট্রেন উনিশ-বিশ হলেই লাইনচ্যুতসহ চলন্ত অবস্থায় বিকল হয়ে পড়ছে। বন্ধ রাখা ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন কোচগুলোকে মেরামতের জন্য। পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় পাঠানো হয়।

যদিও আগে থেকেই আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়া লোকাল ও মেইল ট্রেনগুলো বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ ছিল।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী জানান, করোনার এ কঠিন সময়েও জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সঙ্গে কিছু লোকাল-মেইল-কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছে। আর বন্ধ থাকা ট্রেনগুলোর মেরামত কাজ চলছে। উপর মহল থেকে নির্দেশনা এলেই সেগুলো চালু করা হবে। তবে বাস মালিকদের সঙ্গে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ঠিক নয়।

রং ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা মোতাবেক বন্ধ ট্রেনগুলো চালুর ব্যবস্থা করা হবে। একই প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, করোনার সময়ে ভাড়া বৃদ্ধি না করে পূর্বের মূল্যে এবং অর্ধেক সিটে যাত্রী বহন করায় রেলের আয়ও অনেক কমে গেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের বাহন ট্রেনের এই লোকসান স্বীকার করেই রেল যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে। যেসব ট্রেন বন্ধ রয়েছে সেগুলো চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে। ট্রেনগুলো চালু করলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ঝুঁকিতে না ফেলে নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে চায়। আর লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিন কোচের স্বল্পতা দীর্ঘদিনের। ওসব মেরামত করা হচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris