শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারারক্ষী-কারাবন্দি মাদক মামলার আসামিদের ডোপ টেস্টের উদ্যোগ

Paris
Update : শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : দেশের কারাগারগুলোতে দিন দিন মাদকসেবী বন্দির সংখ্যা বেড়েই চলছে। বর্তমানে দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৭০ হাজার বন্দি রয়েছে। তার মধ্যে ২৫ হাজার বন্দিই মাদক মামলার আসামি। মাদক মামলায় বন্দিদের মধ্যে বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। যে কারণে কারা কর্তৃপক্ষ কয়েদি ও হাজতিদের নিয়ে সব সময় বেকায়দায় থাকে। তাছাড়া বন্দিদের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কারারক্ষীকে বরখাস্ত ও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারারক্ষীসহ কারাগারের স্টাফদের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কারা অধিদপ্তর তাদের ডোপ টেস্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে। কারা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কারাগারের স্টাফ ও কারারক্ষীদের ডোপ টেস্টের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কারা অধিদপ্তর। মাদকাসক্ত কারারক্ষী ও স্টাফদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ করা হয়েছে। এমনিতেই কারাগারগুলোতে মাদকাসক্ত বন্দিদের আচরণ সব সময় স্বাভাবিক থাকে না। বন্দি ও অনেক হাজতি কয়েদি কারাগারের মধ্যে মাদক সেবন না করতে পারায় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে। কখনো কখনো কারাগারে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের আদেশ ও নিষেধ অমান্য করে তাদের সঙ্গেও তর্কে জড়ায়। মাদকের নেশা যখন উঠে তখন তারা কারাগারের মধ্যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটায়। প্রায় সময় অন্যসব বন্দিদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। কারারক্ষীদের সঙ্গেও ঝগড়া করে। মাদকাসক্ত অনেক বন্দি কারাগারে মাদক ব্যবসায় চালায়। এর পেছনে কারারক্ষীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মাদকাসক্ত বন্দিদের নজরদারি করতে গিয়ে অনেক কারারক্ষীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।

সূত্র জানায়, কারাগারগুলোতে প্রতিদিনই নতুন করে যুক্ত হচ্ছে মাদক মামলার আসামি। তারা কারাগারে আসার পরও মাদক সেবনের চাহিদা থাকে। সেজন্য তারা আদালতে হাজিরা দেয়ার সময় তাদের স্বজন বা বন্ধুদের কাছ থেকে পেট ও পায়ুপথে কারাগারে মাদক নিয়ে আসে। তাদের কারাগারে প্রবেশের সময় শরীর তল্লাশি করার পর কারাগারে ঢোকানো হয়। কিন্তু পেট বা পায়ুপথে বহন করা মাদক শনাক্তের কোনো স্ক্যানিং মেশিন কারাগারগুলোতে নেই। ফলে বিভিন্ন সময়ে কৌশলে বন্দিরা কারাগারের ভিতরে মাদক নিয়ে প্রবেশ করছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৮ হাজার বন্দির মধ্যে ৩ হাজার বন্দিই মাদকাসক্ত। কিন্তু বন্দিদের সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্য দেশের কোনো কারাগারে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র নেই। ওসব বন্দিকে নেশার জগত থেকে ফিরিয়ে আনতে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি মনিটরিং টিম রয়েছে। আবার কারাগারের স্টাফ, কারারক্ষী ও মাদক মনিটরিং টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে কারাগারে মাদক প্রসঙ্গে কারা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদকাসক্ত বন্দিদের মোটিভেশন করার কাজ চলছে। তাছাড়া কারা অধিদপ্তরের বাইরের কিছু অর্গানাইজেশন আহছানিয়া মিশন, জিআইজেড ও আইসিআরসি এ ব্যাপারে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সম্প্রতি আহছানিয়া মিশন মাদক বিষয়ে বন্দিদের মোটিভেশন করার জন্য সেমিনার ও ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেছে। তারা কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যে কীভাবে মাদকাসক্ত বন্দিদের মাদক থেকে নিরাময় করা যায়। এ ব্যাপারে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে এ ব্যাপারে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন জানান, কারাগারের স্টাফ ও কারারক্ষীদের ডোপ টেস্টের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে ১২ হাজার স্টাফ ও কারারক্ষীর ডোপ টেস্ট করা একটু কঠিন। সে কারণে যেসব ব্যক্তি সন্দেহভাজন রয়েছে তাদের গতিবিধি, চলাফেরা মনিটরিং করা হচ্ছে। কারা হাসপাতালের চিকিৎসকরাও বিষয়টিতে নজর দিচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris