শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! বাগমারায় এক স্কুলের সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এলাকাছাড়া! বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল জাতীয় চার নেতা কখনো মৃত্যু ভয় করেননি : লিটন প্রেমিককে কুপিয়ে জখম করল প্রেমিকা! গোদাগাড়ীতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ২ আসামি গ্রেপ্তার এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের সরে দাঁড়াতে নির্দেশ সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তিন প্রতারক রাজশাহীতে গ্রেফতার পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করে লাশ গুম করেছিলেন পুত্রবধূ! রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরা

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণায় বেহাল দশা

Paris
Update : রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : সরকার গবেষণাভিত্তিক উচ্চশিক্ষা বাস্তবায়ন করতে চাইলেও দেশে ৬০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম নেই। গত বছর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বাবদ কোনো বরাদ্দই ছিল না। ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না কোনো প্রকাশনা। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক কোনো জার্নালে প্রবন্ধ, সাময়িকী বা কোনো গবেষণাপত্রও প্রকাশ করতে পারেননি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তাদের ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতের এমন বেহাল দশা উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চশিক্ষার প্রধান কাজ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালন করা। তার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান এবং শিক্ষাদানের জন্য নতুন নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন তৈরি হবে। একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি চলে না। এ দুটির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গবেষণা কার্যক্রম। কিন্তু বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণার চিত্র নাজুক। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সে লক্ষ্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন তারা। ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে অর্ধেকের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।

আর যারা করেছেন তাও নামমাত্র হওয়ায় উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা। এজন্য সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় দায়ী নয়, সরকারও কিছুটা দায়ী বলে মনে করেন তারা। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সরকার উন্নয়ন-অনুুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ালেও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না। ক্ষেত্রবিশেষে গত এক দশকে বরাদ্দের পরিমাণ কমেছে। এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানো হয়নি, বরং বাড়ানো হয়েছে। গবেষণা ছাড়া যেমন বিশ্ববিদ্যালয় অর্থহীন, তেমনি শুধু ইউজিসি নয়, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক-গবেষকসহ ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার গবেষণা খাতে অর্থ বাড়াতে আগ্রহী, কিন্তু অনুকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বাড়ছে না। শুধু টাকা দিলেই গবেষণা বাড়বে না, সেটি অপচয় হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ খাতকে এগিয়ে নিতে গবেষকদের উৎসাহ দিতে হবে। কেউ ভালো কোনো গবেষণার প্রস্তাব দিলে ইউজিসি ফিরিয়ে দেয়নি বলেও জানান তিনি। ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। এর মধ্যে ১২টি সরকারি এবং ৪৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

২০টি বেসরকারি ও ৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ওই বছর গবেষণা খাতে কোনো বরাদ্দই রাখেনি। আর বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণায় বরাদ্দ ছিল পাঁচ লাখ টাকার কম। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ৩৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো প্রকাশনা বের করেনি। আর সরকারি ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালে একটি প্রকাশনাও প্রকাশ করতে পারেনি। যারা প্রকাশ করেছে তাও নামমাত্র। বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৪৬টি। আরও চারটি বিশ্বিবদ্যালয় সরকার অনুমোদন দিলেও এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি। শিক্ষা কার্যক্রমে থাকা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালে গবেষণা খাতে কোনো বরাদ্দ রাখেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণায় পাঁচ লাখ টাকার কম বরাদ্দ ছিল রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এছাড়াও আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নামমাত্র বরাদ্দ রেখে এ খাতের দায় সেরেছে। এদিকে সারাদেশে ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ৪৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কাজের বেহাল দশা। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে কোনো বরাদ্দই রাখেনি। আর ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচ লাখ টাকার কম বরাদ্দ রেখে দায় সেরেছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখেনি সেগুলো হলো- রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়,

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জাহা বিশ্ববিদ্যালয়, জেড এন আর এফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজম্যান্ট সায়েন্সেস, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীর শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববদ্যিালয়, বরিশালের ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি। গবেষণা খাতে বরাদ্দে শীর্ষে যে পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেগুলো হলো- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি,

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস। বেসরকারি ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ সালে কোনো প্রকাশনাও ছিল না। এ প্রসঙ্গে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মৌখিক গবেষণা হলেও ছোট বা নতুনগুলো এ ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এ খাতে বার্ষিক যে বরাদ্দ চাওয়া হয়, তাও পাওয়া যায় না। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬০টিতে গবেষণা কার্যক্রম নেই এবং ব্যয় দেখিয়েও কাজ হয়নি।

২০১৫ সালে ৮৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই সংখ্যা ছিল ২৮টি ও ২০১৪ সালে ছিল ২৭। গবেষণা ব্যয় দেখানোর পরও ২৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো প্রকাশনা পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষকরা আদর্শ ভুলে রাজনীতিতে প্রবেশ করায় আসল কাজগুলো পিছিয়ে পড়ছে। প্রশাসনিক কাজে তাদের বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সেজন্য গবেষণা, প্রবন্ধ, সেমিনার করতে তারা সময় পান না।

গবেষণা ও শিক্ষার মান কমে যাওয়ার জন্য শিক্ষকরা যেমন দায়ী, তেমননি সরকারও দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, ‘সরকার গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর চেয়ে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। সেখানে দলীয় পরিচয়ের লোক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris