শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সব সড়ক-মহাসড়কে অপরিকল্পিত গতিরোধক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

Paris
Update : শনিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : অপরিকল্পিত গতিরোধক দেশের প্রায় সব সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে গতিরোধকের কারণে প্রতি বছর দেশে সড়ক-মহাসড়কে কী পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তার কোনো পরিসংখ্যান পুলিশ বা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে নেই। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা গতিরোধকই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বিষয়টি নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। ওসব আলোচনায় অপরিকল্পিত গতিরোধকগুলোকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ি করা হয় এবং ওসব গতিরোধক তুলে দেয়ার সুপারিশও করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা দেশের সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ১০টি জোনের আওতাধীন সড়ক-মহাসড়কগুলোয় এখনো ১ হাজার ১৮৮টি গতিরোধক রয়ে গিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ওসব সড়ক-মহাসড়ক থেকে ৭৫৫টি গতিরোধক অপসারণ করা হয়েছে। সওজ’র জোনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম জোনে সর্বোচ্চসংখ্যক গতিরোধক রয়েছে। ওই জোনের সড়ক-মহাসড়কে এখনো ২৪৮টি গতিরোধক রয়েছে। দেশের প্রায় সব সড়ক-মহাসড়কেই অপরিকল্পিত গতিরোধকের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। ওসবের অনেকগুলোতেই সাদা রংয়ের রোড মার্কিং করা নেই। অনেক গতিরোধকের সামনে আবার সাইনবোর্ডও নেই। ফলে ওসব গতিরোধক অনেক সময়েই চালকের চোখ এড়িয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা কমার চেয়ে বরং বেড়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় অব্যাহত দুর্ঘটনার জেরে ২০১১ সালেই মহাসড়ক থেকে গতিরোধক অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। সওজ’র অধীনে সারা দেশে সড়ক নেটওয়ার্কের পরিমাণ কম-বেশি ২২ হাজার কিলোমিটার। আর ওসব সড়কে বিদ্যমান গতিরোধকের পরিমাণ ১ হাজার ১৮৮টি। জোনভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অধিদপ্তরের ঢাকা জোনে গতিরোধক রয়েছে ১৮৮টি। একইভাবে ময়মনসিংহ জোনে ৮৫টি, কুমিল্লা জোনে ১২৬টি, সিলেট জোনে ৬০টি, চট্টগ্রাম জোনে ২৪৮টি, বরিশাল জোনে ৬২টি, খুলনা জোনে ১১১টি, রাজশাহী জোনে ৫৯টি, গোপালগঞ্জ জোনে ৯৯টি ও রংপুর জোনে ১৫০টি গতিরোধক রয়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে অপসারিত গতিরোধকের সংখ্যা ৭৫৫টি। রংপুর জোন থেকে সবচেয়ে বেশি গতিরোধক অপসারণ করা হয়েছে। সওজ সাম্প্রতিক সময়ে সেখান থেকে ১৪৬টি গতিরোধক অপসারণ করেছে। একইভাবে ময়মনসিংহ জোনে ১৪২টি ও চট্টগ্রাম জোনে ১২৫টি গতিরোধক অপসারণ করা হয়েছে।

তাছাড়া অধিদপ্তরের ঢাকা জোন থেকে ১৮টি, কুমিল্লা থেকে ৯৫টি, সিলেট থেকে ৩২টি, বরিশাল থেকে ৩০টি, রাজশাহী থেকে ৬৪টি ও গোপালগঞ্জ জোন থেকে ৪৭টি গতিরোধক অপসারণ করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সড়ক-মহাসড়কে সাধারণত হাট-বাজার এলাকা এবং স্কুল-কলেজ-হাসপাতালের সামনে গতিরোধক দেয়া হয়। দুর্ঘটনা বাড়ানো নয়, গতিরোধক দেয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্ঘটনা কমানো। কিন্তু অপরিকল্পিত গতিরোধকের কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। সচরাচর কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই স্থানীয়রা সেখানে গতিরোধক দেয়ার দাবি তোলেন। দুর্ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল থেকেও গতিরোধক স্থাপনের জন্য চাপ দেয়া হয়। মূলত ওসব অপরিকল্পিত গতিরোধকই মহাসড়কে দুর্ঘটনার পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেইন মহাসড়কে গতিরোধক দেয়ারই পক্ষপাতী নন। তাঁর মতে, মহাসড়কে সাধারণত গতিরোধক দিতে নেই। দিলেই সেগুলো যথাযথভাবে পরিকল্পনা করে দিতে হয়, যাতে তা সহজেই চালকের নজরে পড়ে ও চালক গতি কমাতে বাধ্য হয়। শুধু গতিরোধক বানালেই হবে না, সেগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও করতে হয়। কিন্তু মহাসড়কে যদি আননোটেবল অবস্থায়, যথাযথ পরিকল্পনা না করে গতিরোধক বসানো হয় তাহলে অবশ্যই তা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠবে। অন্যদিকে বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী গুবছরের অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ছিল ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার ৪২০। ওসব গাড়ির বিপরীতে লাইসেন্স রয়েছে এমন চালকের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ১৭৪। ওই হিসেবে ৭ লাখ ৩১ হাজার ২৪৬টি গাড়ির বৈধ কোনো চালকই নেই। দক্ষ বা বৈধ চালক সংকটে বিভিন্ন সময় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে।

ওই কারণে সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে গতিরোধক বসানোর চেয়ে চালকের দক্ষতা বাড়ানো বেশি জরুরি। একই সঙ্গে চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণও প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন জানান, সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ চালকদের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। সেজন্য চালকদের দক্ষতা কীভাবে আরো বাড়ানো যায় তা ভাবতে হবে। তাছাড়া তাদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পরিপালন করতে হবে।

কমিটির একাধিক বৈঠকে সুপারিশ করা হয়েছে যাতে গতিরোধকগুলো তুলে ফেলা হয়। কারণ অপ্রয়োজনীয় গতিরোধকের কারণে অনেক সময়ই মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। সেজন্যই সংসদীয় কমিটির বৈঠক থেকে গতিরোধকগুলো তুলে দেয়া হয় সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে এখনো সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে গতিরোধক রয়ে গেছে। ওসব গতিরোধক সরিয়ে ফেলতে আবারো পরামর্শ দেয়া হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris