শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নতুন করে বেসরকারি কলেজে আর অনার্স-মাস্টার্স কোর্স দেয়া হবে না

Paris
Update : সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : দেশের বেসরকারি কোনো কলেজেই আর কোনো অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের অনুমোদন দেয়া হবে না। কারণ ওসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত যোগ্য শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। যেখানে একাদশ বা ডিগ্রি শিক্ষা কার্যক্রম চালানোই দায়, সেখানে চলছে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স। ওই স্তরের শিক্ষক এমপিওভুক্ত নন। আবার কলেজ থেকেও বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে না। ফলে শিক্ষকও নেই। প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় বেসরকারি শিক্ষা তষ্ঠানগুলোতে ঠিকমতো লেখাপড়া হচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় নতুন করে কোনো বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছে মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। ৩১৫টি কলেজে বর্তমানে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষক শুধু জনবল কাঠামোর বাইরে থাকায় দীর্ঘ ২৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। অথচ মাদ্রাসার ফাজিল ও কামিল (মাস্টার্স) পর্যায়ে শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা বঞ্চিত রয়েছে।

এমন অবস্থায় এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোর সংশোধনীতে এমপিওভুক্তির সুযোগ চান অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা। এমপিওভুক্ত করা না হলে তারা আমরণ অনশনে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু না করে সেখানে ডিগ্রি পাস কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে শর্টকোর্স চালুর চিন্তাও চলছে। তাতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে সফলতা পাবে।
সূত্র জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স অনুমোদন, শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকার পরও কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স কেন অনুমোদন দেয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যেসব কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, অবকাঠামো নেই, এমন কলেজগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বাতিল করা হবে। আর কোর্স বাতিল হওয়া কলেজের শিক্ষকদের পার্শ্ববর্তী কলেজগুলোতে স্থানান্তর করার বিষয়টিও নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স খোলার উদ্দেশ্য ছিল পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা। বিশেষ করে মেয়েদের কথা চিন্তা করা হয়েছিল। কারণ উচ্চ শিক্ষার আগ্রহ আছে কিন্তু দূরের কলেজে গিয়ে পড়ার সামর্থ্য নেই এমন পরিস্থিতি উত্তরণের জন্যই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। যদিও কলেজে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স অনুমোদন দেয়ার সময় কলেজগুলোর জন্য শর্ত ছিল কলেজগুলো থেকেই ওই স্তরের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু কলেজগুলো তা করেনি। এখন শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির দাবি তুলেছেন।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান জানান, সারা দেশে ৮ শতাধিক কলেজে অনার্স কোর্স চালু আছে। তার মধ্যে ৩ শতাধিক বেসরকারি কলেজ। তবে মাস্টার্স রয়েছে এমন কলেজের সংখ্যা অনেক কম। বর্তমানে যেসব কলেজের পর্যাপ্ত শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই সেসব কলেজের অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বাতিলের বিষয় চিন্তা চলছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান জানান, বেসরকারি কলেজে নতুন করে আর অনার্স-মাস্টার্স কোর্স অনুমোদন দেয়া হবে না। গত ৮-৯ মাস ধরে এমন কোনো কোর্স অনুমোদন দেয়া হয়নি। বর্তমানে দেশে ১৩টি শতবর্ষী সরকারি কলেজ রয়েছে। সেসব কলেজে ডিগ্রি (পাস) কোর্স না রেখে সেখানে শুধু অনার্স-মাস্টার্স কোর্স পরিচালনার চিন্তা করা হচ্ছে। তাতে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোরও দ্বিমত নেই। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি রিজিওনাল সেন্টারের কাজ চলছে। সেখানে ভালো কলেজ থেকে শিক্ষকদের এনে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু করা যাবে।

বেসরকারি কলেজে অর্নাস-মাস্টার্স কোর্সের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রশ্ন তুলেছেন। সম্প্রতি তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকার আর সনদধারী বেকার তৈরি করতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছেন। কাজেই যারা অনার্স-মাস্টার্স করবেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই করবেন। আর ডিগ্রি পাস কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন শর্টকোর্স করা যেতে পারে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris