শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ

পেঁয়াজ আমদানি করে বিপুল টাকা গচ্চার মুখে শতাধিক ব্যবসায়ী

Paris
Update : শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে শতাধিক ব্যবসায়ী। লাভ তো দূরের কথা এখন তাদের শত কোটি টাকারও বেশি গচ্চা গুনতে হচ্ছে। মূলত ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে গিয়েই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার পরিস্থিতি না বুঝে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাত্রাতিরিক্ত এলসি খোলা, সময় মতো এলসি পণ্য দেশে আনতে না পারা, বিক্রির তুলনায় আমদানি খরচ বেশি হওয়া এবং ভারত ফের রপ্তানি শুরু করার কারণে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে। ফলে দেশে আসার পরও তারা এখন বন্দর থেকে পেঁয়াজ খালাস করছে না। পেঁয়াজ আমদানিকারক এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৯০ কোটি টাকার প্রায় ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ পড়ে রয়েছে। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও আমদানিকারকরা ওসব পেঁয়াজ খালাসে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সাড়ে তিন মাস বন্ধ রাখার পর সম্প্রতি ফের বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করেছে ভারত। ভারত থেকে আমদানি ব্যয় তুলনামূলক কম। ফলে ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ এখন ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র জানায়, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর পেঁয়াজের নতুন বাজার ধরতে মাঠে নেমেছিলেন প্রায় ৬০০ ব্যবসায়ী। এ তালিকায় বড় শিল্প গ্রুপের পাশাপাশি মৌসুমি ছোট ব্যবসায়ীরাও ছিলো। ওই ব্যবসায়ীরা ভারতের বিকল্প দেশ থেকে ৭ লাখ টন পেঁয়াজ আনতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়েছিল। তবে অনুমতিপত্র নেয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে এলসি খুলেছেন প্রায় অর্ধেক ব্যবসায়ী। বাজার স্থিতিশীল করতে তখন পেঁয়াজ আমদানির ওপর নির্ধারিত ৫ শতাংশ শুল্কের পুরোটাই অর্থ মন্ত্রণালয় প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। আর ওই সুযোগটাই নিয়েছিল ব্যবসায়ীরা।

ভারতের বিকল্প দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড, চীন, মিসর, তুরস্ক, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ডস, মালয়েশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান থেকে বেশি পেঁয়াজ আনার অনুমতিপত্র নেয় ব্যবসায়ীরা। তবে তার আগে মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক ও মিসরের দিকেই নজর ছিল ব্যবসায়ীদের। আমদানির বেশিরভাগ পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে সমুদ্রপথে আনতে হয়েছে। তাতে খরচও পড়েছে। আবার সময়মতো আনতে না পারায় ব্যবসায়ীরা লাভও ধরতে পারছে না। কারণ বিদেশেও করোনার কারণে রপ্তানি শিডিউল এলোমেলো ছিল। তাছাড়া অনভিজ্ঞ অনেক প্রতিষ্ঠান দেরিতে এলসি খুলেছে। বাজার পর্যবেক্ষণ করে এলসি খুলতে গিয়ে যারা সময় নিয়েছে, এখন তারাই বেশি লোকসান গুনছে।

সূত্র আরো জানায়, পেঁয়াজের সঙ্কটকালে নতুন বাজার ধরতে তৎপর ৬শ ব্যবসায়ীর বেশিরভাগই ছিল অনভিজ্ঞ। বিগত ২০১৯ সালে প্রায় ৬শ ব্যবসায়ী ৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছিল। তার মধ্যে গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক দিনে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী। সাড়ে ৮শ চালানে ওসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনার কথা ছিল। তবে ওই ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই এক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- রেড লিঙ্ক মিসর থেকে এক হাজার মেট্রিক টন, পাকিস্তান থেকে এএস করপোরেশন ৫০১ মেট্রিক টন, মিয়ানমার থেকে এসএন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ৫০০ মেট্রিক টন, এএইচ এন্টারপ্রাইজ চীন থেকে ৫০০ মেট্রিক টন ও মিয়ানমার থেকে ৫০০ মেট্রিক টন, চীন থেকে এ মোক্তার ট্রেডিং ৫০০ মেট্রিক টন, মিয়ানমার থেকে খাতুনগঞ্জ ট্রেডিং ৫০০ মেট্রিক টন, পাকিস্তান থেকে এস ইসলাম ট্রেডিং ৪০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করে।

এদিকে এ প্রসঙ্গে দেশের প্রধানতম পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, ‘ভারতের বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ এনে অনেক ব্যবসায়ীর এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে তারা ৯০ কোটি টাকার পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আর খালাস করছে না। বর্তমানে আমদানি খরচের চেয়ে অনেক কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। অথচ বন্দর পর্যন্ত আনতে প্রতি কেজিতে খরচ হয়েছে ৪০ টাকারও বেশি। ভারত ফের রপ্তানি শুরু করায় পেঁয়াজের দাম আরো পড়ে যাবে। না বুঝে যারা এলসি খুলেছে তারা এখন কাঁদছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, পেঁয়াজের চাহিদা ও মজুদের তথ্য ভালোভাবে বুঝে এলসি খোলা উচিত ছিল। নতুন ব্যবসায়ীরা সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করেনি। বাজারে যে সংকট ছিল তা কত দিন থাকবে, এই মুহূর্তে কত পণ্য মজুদ আছে, আর কত চাহিদা আছে, ভারত কখন বাজার উন্মুক্ত করবে- এগুলো যারা হিসাবে আনেনি, তারা এখন ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে খরচও অনেক বেশি পড়ে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris