শাহীন আলম, দুর্গাপুর : রাজশাহীর দুর্গাপুরে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে একের পড় এক অবৈধ ইটের ভাটা। কৃষিনির্ভর দুর্গাপুর উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত আছে। রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলার মাছ, পান, ও আমের ব্যাপক সুনাম রয়েছে দেশ ও বিদেশে সুখ্যাতি রয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের ওপর নির্ভর করেই তাদের সংসার চালাতে হয়। এক কথায় বলতে গেলে কৃষিনির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল এটি।
ভালো মাটি ও সুন্দর জলবায়ুর কারণে ফসলের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়। কিন্ত অবৈধ ইটভাটা গুলোর কারণে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। এসব ভাটার গর্ভে চলে যাচেছ কৃষিজমির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি)। কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর ইট তৈরির মৌসুমকে ঘিরে ভাটাগুলোতে মজুদ করা হয়েছে বিশাল আকারের মাটির স্তপ। ইতোমধ্যে প্রায় ২০টি ভাটায় ইট পোড়ানোর লক্ষ্যে আগুন দেওয়া হয়েছে। যার সবগুলোতে আমসহ বিভিন্ন কাঠ পোড়ানো হচেছ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিবছর ভাটাগুলোতে প্রায় ২৫০ একর জমির টপ সয়েল পোড়ানো হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ১৯৯২ সালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে কৃষি-জমিতে ইটভাটা নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ ও ইট প্র¯‘ত ও ভাটা ¯’াপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩, কৃষি জমিতে ভাটা স্তাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব আইন দুর্গাপুরে মানা হয়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার এসব ভাটায় ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিশাল মজুদ করা হয়েছে। দুইএকটা ভাটাতে সামান্য কয়লা চোখে পড়লে বিভিন্ন রকমের কাঠ দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
সরকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ইট প্র¯‘ত ও ভাটা ¯’াপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করে। কিš‘ আইন রয়েছে আইনের জায়গায়, বাস্তবে নেই কোনো প্রয়োগ নেই। ক্রমেই বেপরোয়া ভাঁটা মালিক গন৷ সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব ইটভাটার মালিক হন তোয়াক্কা করে না কোনো আইন, প্রশাসন। কোনরকম অনুমোদন ছাড়াই ফসলি জমিতে গড়ে তোলে তাদের ইট ভাটা। এ অঞ্চলের কৃষিজমির টপ সয়েল দিয়েই তৈরি হয় ফাঁপা, ও ছিদ্র বিহীন ইট। কালো ধোঁয়ায় এলাকা আ”ছাদিত করে তৈরি করা হয় ইট। আর গ্রামীণ সড়ক ব্যাবহার করে পরিবহন করা হয় ইট।
উপজেলা অবৈধ অর্ধশতাধিক ভাটা গুলো গড়ে উঠেছে গ্রামের ফসলি জমিতে। কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের জমি লিজ নিয়েই তৈরি হয় তাদের অবৈধ ভাটাগুলো। ২০১৩ সালের আইনে কৃষি জমিতে ভাটা ¯’াপনের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স দিতে পারবে না। আইনে আরও উল্লেখ রয়েছে ইটে অবশ্যই হ্যালো ফ্লাক্স থাকতে হবে। জ্বালানি হিসেবে কাঠ, বাঁশের মোথা, ও খেজুর গাছের গুড়ি ব্যবহার করা যাবে না। খাল, নদী, পতিত জমি ব্যতীত কোন মাটি ব্যবহার করা যাবে না, অতিরিক্ত সালফার, অ্যাশ, মারকারি বা অনুরূপ উপাদান সম্বলিত কয়লা ব্যবহার করা যাবেনা ইত্যাদি আরো অনেক নিয়ম রয়েছে যা পরিবেশ রক্ষার জন্যই করা হয়েছে।
দুর্গাপুরে এসব অবৈধ ইটভাটা গুলোর কারণে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ। আশেপাশের জমিগুলো অনুর্বর করে তুলেছে, অল্পতে জমিতে শুকিয়ে যা”েছ পানি ,খরা মৌসুমে পানি লেয়ার দিন দিন নিচের দিকে নামছে। ছোট জলাশয়গুলো শুকিয়ে যা”েছ খরা মৌসুমের আগেই, ফসলের পর্যাপ্ত পরিচর্যা করলেও মিলছেনা কাক্সিক্ষত উৎপাদন। গ্রামীণ সড়কগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে ফলে যোগাযোগ ব্যব¯’ার মারাত্মক ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষসহ কৃষকেরা।
কৃষি অফিসার মশিউর রহমান জানান, অধিকাংশ কৃষিজমিতে ভাটা ¯’াপন করেন কোনরকম অনুমতি ব্যতীত। এই ভাটা গুলোর কারণে কৃষিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এর আশেপাশে ও কয়েক কিলোমিটার ভিতরে থাকা ফসলগুলো দশ থেকে একশ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। অত্র এলাকায় আমের গাছে মুকুল আসবে না মুকুল আসলেও গুটি অব¯’ায় আম ঝরে যাবে। পানির লেয়ার দিন দিন নিচের দিকে নামতে থাকবে। ফসলি জমি খনন করে সেই মাটি নিয়ে ইট তৈরি করে যার সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহসীন মৃধা জানান, কৃষকেদের উন্নয়ন দ্বারাই দেশের আরও উন্নয়ন ঘটবে। দ্রুত কৃষি জমিতে অবৈধ ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আইন আনুক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।