শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেব্রুয়ারিতে খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জুন-জুলাইয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা

Paris
Update : বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০

এফএনএস : আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে সশরীরে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার পাঠ্যপুস্তক বিতরণ-২০২১ ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এর মাধ্যমে ক্লাসরুমে বসিয়ে শিক্ষার্থীদের অসমাপ্ত সিলেবাস শেষ করে একটি প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নেয়া হবে। তার মধ্যে এ দুই স্তরের পরীক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হবে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হলে আগামী বছরের জুনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেয়া হবে। এরপর জুলাই-আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। তবে করোনা পরিস্থিরি কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে ক্লাস বসিয়ে তা পড়ানো হবে।

এইচএসসির ফল : করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার সরাসরি পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছিলেন, এ মাসেই এই মূল্যায়নের ফল ঘোষণা করা হবে। তবে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে শিগগির অধ্যাদেশ জারির পর ফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ফল তৈরি আছে। অধ্যাদেশ জারি হওয়া মাত্রই ফল ঘোষণা করা হবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই অধ্যাদেশ জারি হবে এবং সঙ্গে সঙ্গেই ফল প্রকাশ করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

এ সময় তিনি শিক্ষার বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। গত ৭ অক্টোবর সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, করোনার কারণে এ বছর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা হবে না। জেএসসি, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল ঘোষণা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে কীভাবে এই মূল্যায়নের কাজ হচ্ছে, তার কিছু ধারণা দেন শিক্ষামন্ত্রী। মূলত, জেএসসি, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল সমন্বয় করেই এই ফল প্রকাশ করা হবে।

জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির বিষয়গুলোকে ‘ম্যাপিং’ করে বিষয়ভিত্তিক ফল প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া বিভাগ ও বোর্ড পরিবর্তন, মানোন্নয়নসহ অন্যান্য বিষয়ে এ বিষয়ে করা পরামর্শক কমিটির সুপারিশে কাজটি হবে। ফল নিয়ে কেউ ক্ষুব্ধ হলে বোর্ডে আবেদন পারবে। তবে শিক্ষামন্ত্রীর আশা, ফল নিয়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হবে না। তাঁর ভাষ্য, এবার তো সবাই পাস করবেন। এবার পরীক্ষা না হওয়ায় ফরম পূরণের সময়ে নেওয়া টাকার মধ্যে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়নি, সেই টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়া হবে। ফল প্রকাশের পর সে বিষয়ে নির্দেশনা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এবার এইচএসসি ও সমমানের মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন।

বই বিতরণ ১২ দিনে : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, পহেলা জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে না। ধারাবাহিকভাবে ১২ দিনে সব ক্লাসে বই বিতরণ করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের বই নিতে হবে। দীপু মনি বলেন, গত ১০ বছর থেকে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়। এটি আমাদের একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। করোনা হানা দিয়েছে বলে এবার সেই উৎসব আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি পাঠ্যবই বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এরপর থেকে স্কুলে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হবে। তিনি আরও বলেন, এবার বছরের প্রথম দিন সকল শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে না। প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের তিনটি ভাগে তিন দিন বই বিতরণ করা হবে। মোট ১২ দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হবে।

জেএসসি-জেডিসির সনদে জিপিএ থাকবে না। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে জুনিয়ার স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করা হলেও পরীক্ষা ছাড়াই সব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ করা হবে। আর তাদের সনদপত্রে কোনো জিপিএ থাকবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এ বছর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিতে পারিনি, সম্ভব হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছে।

তিনি বলেন, এরইমধ্যে শিক্ষাবোর্ডগুলো জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজও সম্পন্ন করেছে। বোর্ডগুলো সব শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ সনদ দেবে। কিন্তু কোনো নম্বরপত্র দেওয়া হবে না। কারণ আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্টের কিছুটা মূলায়ন করেছি, সে মূল্যায়নপত্রও আমরা সংগ্রহ করবো। কিন্তু আমরা কোনো নম্বরপত্র এবার দিচ্ছি না, এ কারণে জেএসসি-জেডিসির সনদপত্রেও জিপিএ উল্লেখ থাকবে না।

রোল নম্বর : করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল এবং লটারির মাধ্যমে সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পর মাধ্যমিকের কোনো শিক্ষার্থীর রোল নম্বর দেওয়া হবে না। মাধ্যমিকে রোল নম্বরের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের আইডি নম্বর দেওয়া হবে এবং প্রাথমিকে আগের রোল থাকবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রোল নম্বর নিয়ে একটা সমস্যা হয়। প্রত্যেক শ্রেণিতে যে রোল নম্বর থাকে, আমাদের রোল নম্বরের যে প্রথা রয়েছে, তার কারণে একটা অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক সময় যে সহযোগিতার মনোভাব যেটি থাকার দরকার, অনেক সময় সেটির অভাব ঘটে রোল নম্বরের কারণে সামনে আসতে চায় সবাই।

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের শ্রেণির রোল নম্বরের এ বিষয়ের পরিবর্তে আইডি নম্বর দিতে, এতে পুরানো রোল নম্বর প্রথার বিলুপ্তি হবে এবং অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সৎ প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে বলে আশা করছি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক থেকে সব শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি দেওয়া হবে। পুরো শিক্ষা জীবনে সে ওই আইডি নম্বর নিয়ে থাকবে, এতে তাকে ট্র্যাক করা যাবে সে ঝরে পড়ছে কি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা আনা এবং গুণগত শিক্ষা অর্জন আনতে আমরা কাজ করছি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, প্রাথমিকে আমাদের আইডি নম্বর দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। আগের রোল নম্বর দেওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, আমরা আশা করছি এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও হয় সমতা আসবে। লটারির মাধ্যমে যেটি হচ্ছে এই বৈষম্যের জায়গাটা অনেকখানি নিরসন হবে এবং কিছুটা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা আসবে। মিক্সঅ্যাবিলিট ক্লাসের কারণে ২০২১ সালে আমাদের গুণগত শিক্ষা অর্জন কিছুটা হয়ত সহজতর হবে। কিছু স্কুলে খুব ভালো ফলাফল করে তেমন শিক্ষার্থীরা যায়, কিছু স্কুল থাকে একেবাইরে ভালো ফল করছে না তেমন শিক্ষার্থীরা যায়, এ যে একটা বিরাট রকমের বৈষ্যম্য তৈরি হয়ে যায়, এ বৈষম্যটা তারা স্কুল-কলেজ পার হওয়ার পুরো সময়টায় বয়ে নিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহাবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক গোলাম ফারুক চৌধুরী, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris