বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাংস্কৃতিক চর্চা নিশ্চিতে নীতিমালা হচ্ছে

Paris
Update : শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০

এফএনএস : দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতিক চর্চা হবে। এজন্য একটি নীতিমালা করছে সরকার। সম্প্রতি ‘মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম পরিচালনা নীতিমালা, ২০২০’ এর খসড়া করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সূত্র বলছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০ হাজারের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, পর্যায়ক্রমে সরকার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করবে। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের সংগীত চর্চা করানো হবে। সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলোর প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে প্রতি বছর উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে বলেও খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন বলেন, আমরা চাই একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংস্কৃতি চর্চাটা হোক। শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা সারাদেশে ছড়িয়ে যাক। সংস্কৃতি চর্চা শিশুদের মনন গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তারা যেন সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে। যেন অপসংস্কৃতি থেকে বেঁচে থাকতে পারে। তিনি বলেন, এখনো কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংস্কৃতি চর্চা কার্যক্রম চলমান। এজন্য আমরা বরাদ্দও দিচ্ছি। কিন্তু আমরা এ কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে দিতে চাই। এটি একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে করতে চাই, এটা করা হলে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। নীতিমালা করে দিলে সে অনুযায়ী সবাই কাজ করবে।

স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজটা করা যাবে। নীতিমালার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, কর্মসূচিটা যেন যথাযথভাবে হয়, মান ঠিক থাকে, মনিটরিংটা করা যায়, নিয়মনীতির মধ্যে থাকে-সেজন্যই নীতিমালা করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এটা চূড়ান্ত করব। নীতিমালায় সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রমের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম বলতে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতির সুনির্দিষ্ট কর্মকাণ্ড যেমন- বিভিন্ন ধরনের সংগীত চর্চা (দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, আধুনিক সংগীতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজ সংগীতসমূহ) বোঝাবে। খসড়া নীতিমালার পটভূমিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সংস্কৃতিমনষ্ক করে গড়ে তুলতে হবে।

এ লক্ষ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘সাংস্কৃতিক চর্চা’ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে প্রাথমিকভাবে ১৮টি জেলায় জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ১০টি করে ১৮০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিটি বিদ্যালয়কে একটি হারমোনিয়াম ও এক সেট তবলা কেনার জন্য অর্থ মঞ্জুরি দেয়া হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ দিতে প্রশিক্ষক এবং তবলা সঙ্গতকারীকে মন্ত্রণালয় নির্ধারিত হারে সম্মানী দেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের পাঠানো প্রতিবেদনে জানা যায়, যে সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে সেসব বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে স্থানীয়, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রমের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে পটভূমিতে উল্লেখ করা হয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংস্কৃতি চর্চার উদ্দেশ্য তুলে ধরে নীতিমালায় বলা হয়, দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম চালু করা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সুস্থ ও দেশীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশে উৎসাহিত করা এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমে ভবিষ্যতে শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করা। অন্যান্য উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে- বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনে উৎসাহিত করা।

ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমে উপযুক্ত শিক্ষক ও শিল্পী গড়ে তোলা। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় এবং প্রয়োজনে সরাসরি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্বাচন করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলায় সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় নির্বাচন করে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাবেন। জেলা প্রশাসক নীতিমালা অনুযায়ী জেলা কমিটির সভা করে উপজেলা থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে জেলায় সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম পরিচালনা করার উপযুক্ত বিদ্যালয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে নির্বাচন করে পূরণ করা ফরমসহ তালিকা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ তালিকা থেকে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয় নির্বাচন করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রমের তালিকাভুক্ত করবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris