শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ রাবি শিক্ষার্থীরা

Paris
Update : বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০

শাহজালাল ইসলাম তুহিন, রাবি : আবাসিক হল বন্ধ রেখে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কর্তৃপক্ষ। গত সোমববার বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনে আয়োজিত একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন ঘোষনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত হলেও আবাসিক হল বন্ধ রেখে মহামারীর মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ায় রাজশাহীতে এসে কোথায় থেকে পরীক্ষা দেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা মহামারীর মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই মুহূর্তে আবাসিক হল খোলা ‘সম্ভব নয়’।

কষ্ট হলেও রাজশাহীতে আত্মীয়-স্বজনের বাসা কিংবা মেসে থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। এটা সরকারী ঘোষনা বলেও দাবি করেন তারা। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ১৮ মার্চ থেকে অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যথাসময়ে পরীক্ষা না হওয়ায় ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদন করা নিয়ে বিপাকে পড়েন স্নাতক শেষবর্ষে শিক্ষার্থীরা। এবং দীর্ঘ সেশনজটের আশংকায় পরীক্ষা নেয়ার আহ্বান জানান এসব শিক্ষার্থীরা। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আগামী ০২ জানুয়ারী থেকে অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় রাবি কর্তৃপক্ষ।

তবে আবাসিক হল বন্ধ রেখেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষনা করা হয়। এই ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের মাঝে আবাসিক হল খোলার দাবি ওঠে এবং হল খোলা না রেখে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়কে অযৌক্তিক দাবি করে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সেতু সীন বলেন, পরীক্ষা এবং হল খোলা দুটি বিষয় একসাথে বিবেচ্য। কেননা পরীক্ষা নিলেই মানসিক চাপ কমবে এমন নয়। পরীক্ষা নিতে হবে চাপমুক্ত রেখেই। যেহেতু সব কিছুই স্বাভাবিক সেক্ষেত্রে হল খুলে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে মানবিক এবং সুবিবেচিত সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছি।

সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে বিশ্ববদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী শিমুল বলেন, যেহেতু হল খুলবে না, সেহেতু অন্তত পরীক্ষার বিশ দিন আগে নোটিশ দেয়া দরকার ছিল। কারন রাজশাহী গিয়ে শিক্ষার্থীদের নতুন করে মেস ঠিক করা, হল থেকে সবকিছু শিফট করার জন্য অনেক দিন সময় লেগে যাবে। এজন্য হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জীবন সিদ্দিকী বলেন, হুট করে ক্যাম্পাস খোলাতে মেস পাওয়া অনেক দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। এমুহূর্তে মেসে থাকার মতো পর্যাপ্ত টাকা পয়সাও অনেকের কাছে নেই। যদি মেসে থেকে পরীক্ষা দিয়ে সমস্যা না হয়, তাহলে হলে থেকেও তো পরীক্ষা দেয়া যাবে। হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নিলেই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছি।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই স্বল্প সময়ের মধ্যে রাজশাহী এসে নিজেদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে ‘পারবেন না’। অনেক শিক্ষার্থী আছেন যাদের দূর থেকে দূরতম কোনো আত্মীয় রাজশাহীতে থাকেন না এবং অনেকের কোথাও ভাড়া থাকার আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্য হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি করেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, “শিক্ষাথীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই অনার্স ফাইনাল ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে আমাদের তারা পিছিয়ে না থাকে।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আবাসিক হল বন্ধ রেখেই পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে পরীক্ষা না হওয়ায় চাকরির আবেদন করতে পারছে না বিষয়টি উলে¬খ করে অনেক শিক্ষার্থী নিজ দায়িত্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে বলে আমাদের লিখিতভাবে জানিয়েছে। তাই চাকরির পরীক্ষা ও সেশনজট লাঘবের জন্য একটু কষ্ট হলেও বাহিরে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে হবে।

হল খুলে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখনই হল খুলবে তখনই অন্য শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানাবে এতে তাদেরকেও সুযোগ দিতে হবে এবং জনসমাগম হবে। এই মহামারীতে শিক্ষার্থীদের এতটুকু কষ্টের চেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় মাথায় রেখেই হলে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris