শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত বরাবরই বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিয়েছে : মোদি

Paris
Update : শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০

এফএনএস : ‘প্রতিবেশীর অগ্রাধিকার’ নীতিতে তাঁর দেশ ভারত বিশ্বাসী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত সবসময়ই বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার প্রদান করে এসেছে। মোদি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার এই নীতি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই আমার অগ্রাধিকারে রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ-ভারত ভার্চুয়াল সামিটের উদ্বোধনী বক্তৃতায় একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নয়াদিল্লীস্থ তাঁর দপ্তর থেকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এই বছরটিরকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং আখ্যায়িত করে মোদি বলেন, সন্তুষ্টির বিষয় এই কঠিন সময়েও ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার সহযোগিতা রয়েছে। তিনি বলেন, মেডিসিন বা চিকিৎসা সরঞ্জাম বা স্বাস্থ্য পেশাদারদের একসাথে কাজ করা ছাড়াও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও আমাদের মধ্যে ভাল সহযোগিতা রয়েছে। তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, আপনাদের সকল প্রয়োজনীয়তার প্রতি আমি বিশেষ মনোযোগ দিতে চাই।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ছাড়াও, এ বছর অন্যান্য ক্ষেত্রেও দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব অবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়েছে। তিনি বলেন, তাঁরা স্থল সীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাধা হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছেন এবং উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগের উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন উপায় যুক্ত করা হয়েছে এবং এগুলি আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার আকাঙ্খার বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি আপনার (শেখ হাসিনা) ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতিও খুব স্পষ্ট। ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে তিনি সকল ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে তাঁর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মুজিব চিরন্তন, বঙ্গবন্ধুর বাণী চিরায়ত এবং এই অনুভূতি দিয়েই আমরা তাঁর উত্তরাধিকারকে সম্মান করি।

তিনি আরো বলেন, আপনার (শেখ হাসিনা) মহান নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে ভারতীয় ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে স্মারক ডাক টিকেট অবমুক্তকরণ এবং ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী এবং বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে একটি ‘ডিজিটাল এক্সিবিশন’ দুই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, শেখ হাসিনার সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্মানে একটি ডাকটিকিট প্রকাশের সুযোগ এবং বাপু (মহাত্মা গান্ধী) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করার সুযোগ পাওয়াটা তাঁর জন্য গর্বের বিষয়।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমি আশা করি বাপু এবং বঙ্গবন্ধুর এই প্রদর্শনীটি আমাদের যুবসমাজকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। যেখানে কস্তুরবা গান্ধী এবং বঙ্গমাতার (বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব) জন্য আলাদা একটা বিভাগ রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাত্তরে বাংলাদেশকে মিত্রবাহিনী হিসেবে সহযোগিতা করতে গিয়ে আত্মাহুতিদানকারি ভারতীয় বীরদের জন্য গত বুধবার (বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস) জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধের দচিরন্তন শিখা’ থেকে ‘স্বর্ণিম বিজয় মশাল’ প্রজ¦লিত করেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদি তার ভাষণে বলেন, বাংলাদেশের বিজয়ের ৪৯তম বর্ষপূতিতে তিনি জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং বিজয়ের সোনার মশাল জ¦ালিয়েছেন।

এছাড়াও, তিনি বলেন তাঁরা ১৬ ডিসেম্বর থেকে বছরব্যাপী সুবর্ণ বিজয় উদযাপন করছেন, যে সময়ে পুরো ভারতজুড়ে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এসময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ আত্মত্যাগকারী সবার প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জানান। তিনি ২০২১ সালের ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশ সফরে বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাওয়া আমার জন্য সম্মানজনক। এই ভার্চুয়াল সামিটের পূর্বে ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাণিজ্য, জ¦ালানি, কৃষি, পরিবেশসহ বিভিন্ন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতায় সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ এবং ভারত।

পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ভার্চুয়াল দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এসব চুক্তি স্বাক্ষর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বন্ধ করে দেওয়া নীলফামারীর চিলাহাটি সীমান্ত থেকে পশ্চিমঙ্গের হলদিবাড়ি পর্যন্ত রেল যোগাযোগেরও উদ্বোধন করা হয় অনুষ্ঠানে। দুই প্রধানমন্ত্রী একযোগে বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ভারতের ডাক বিভাগের একটি ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন এবং ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল এক্সিবিশন’ এর উদ্বোধন করেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris