শুক্রবার

১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চোর সন্দেহে তানোরে দুই যুবককে মির্মম নির্যাতন

Paris
Update : বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার মোহর গ্রামে চোর সন্দেহে দুই যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় রাতভর নির্যাতন করা হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে আহত অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা হাসপাতালের ৩১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত মামলা রেকর্ড করা হয়নি। নির্যাাতনের শিকাররা হলেন, উপজেলার মোহর গ্রামের ইসাহাক আলীর ছেলে সেলুন ব্যবসায়ী ফিরোজ কবির (২৫) ও একই গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে ট্রলিচালক জসিম উদ্দীন (২৭)। এদের মধ্যে ফিরোজের পায়ে হাতুড় দিয়ে লোহার পেরেক পুতে দেয়া হয়। আর জসিমকে লোহার রড় ও হাতুড়ী দিয়ে পেটানো হয়। এছাড়াও তাদের একটি মটোরসাইকেল ভাংচুর করা হয়।

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দুই যুবককে ভর্তির পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয। এছাড়াও অস্ত্রপ্রচার করে ফিরোজের পা থেকে পেরেক বের করা হয়েছে। তারা ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা এখন আশঙ্কা মুক্ত।’’
তানোর থানার ওসি রাকিবুল হাসান বলেন, দুই যুবককে নির্যাতনের একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ফিরোজের পিতা ইসাহাক আলী বাদি হয়ে থানায় এই অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে স্থানীয় তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন ও দেবিপুর গ্রামের মৃত বেলাল হোসেনের ছেলে আব্দুর রহিমসহ ১১ জনকে আসামী করা হয়েছে। এব্যাপারে মামলা দায়ের হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে নির্যাতনের স্বীকার ওই দুই যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের আত্মীয় দেবিপুর গ্রামের জোহরার বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। খাবার শেষে ওই বাড়ি থেকে বের হওয়া মাত্র রহিমসহ কয়েকজন চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা ফিরোজ ও জসিমকে আটক করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এসময় তারা মোটরসাইকেলও ভাংচুর। পরে তাদের দুইজনকে বেধেঁ রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের শিকার ফিরোজের মামা কামাল হোসেন জানান, রাতেই স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মামুনুর রশিদ গিয়ে তাদের বেধড়ক মারপিট করে। এ সময় মামুন পায়ে পেরেক পুতার নির্দেশ দিলে রহিম হাতুড়ি দিয়ে ফিরোজের পায়ে পেরক পুতে দেয়। তারা ফিরোজের পায়ে পেরেক পুতে চোর হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়েরে চেষ্টা করে। কামাল বলেন, সোমবার সকাল ১১টার দিকে তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সেখানে আসেন।

তিনি ফিরোজের মায়ের জিম্মায় দিয়ে তাদের কোন অভিযোগ নেয় বলে মুছলেখা নিয়ে দুইজনকে ছেড়ে দেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাদের গুরুত্বর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে। তিনি আরো বলেন, কয়েক মাস আগে দেবিপুর বাজারে ফিরোজের সেলুন ছিল। সেলুনে চুল কাটা নিয়ে ফিরোজের সঙ্গে রহিমের দ্বন্দ্ব হয়েছিল। এ কারণে ফিরোজ সেখান থেকে সেলুন গুটিয়ে নিয়ে তার নিজ গ্রামে গিয়ে সেলুন দেয়। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে রহিম এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ (সদর) ইফতে খায়ের আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে এবং দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তানোর থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris