শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা পূরণে দেশেই ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ

Paris
Update : বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০

এফএনএস : দিন দিন দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) চাহিদা বেড়েই চলেছে। মূলত আবাসিকে পাইপলাইনের গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় এলপিজির চাহিদা বাড়ছে। এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদাও বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি মিলে দেশে বর্তমানে ১২ লাখ টনের মতো এলপিজি বাজারজাত হচ্ছে। যেখানে চাহিদার কথা বিবেচনায় নিলে প্রতি বছর দেশে ১ কোটি ৬০ লাখের মতো সিলিন্ডার প্রয়োজন হয়। আর বছরে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে আগামী ৫ বছর পর দেশে ২৪ লাখ সিলিন্ডার প্রয়োজন হবে। তাছাড়া দেশে বর্তমানে ২০ শতাংশ হারে এলপি গ্যাসের গ্রাহক বাড়ছে। ফলে সিলিন্ডার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়বে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মালিকানাধীন এলপি গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড গ্যাস সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিপিসি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় বছরে ২০ লাখ সিলিন্ডার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ওই ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপনে অর্থসহায়তা দেবে। বিপিসি এবং এলপি গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে বিপিসির মালিকানাধীন এলপি গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড বছরে ১৫-২০ হাজার টন এলপি গ্যাস বোতলজাত করে। সেজন্য বছরে প্রয়োজন হয়১৫ থেকে ১৬ লাখ সিলিন্ডার। কিন্তু কোম্পানিটির কাছে মাত্র সাড়ে ৪ লাখ সিলিন্ডার রয়েছে। আর ওসব সিলিন্ডারের বেশির ভাগই পুরনো এবং গুণগত মান কমে এসেছে। এমন অবস্থায় সিলিন্ডারের ঘাটতি মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির বেশ আগে থেকেই নিজস্ব প্লান্ট করার পরিকল্পনা ছিল। এখন এলপি গ্যাস লিমিটেডের সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ৬৭ কোটি ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয় হবে। ইতিমধ্যে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদে এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আর আগামী এক মাসের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলে গ্যাসের চাহিদা বাড়বে এমন পরিকল্পনা থেকে ১৯৮৫ সালে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপনের জন্য ৬ দশমিক ৯ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল বিপিসি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে একটি গ্যাসকূপ থেকে ব্যাপক পরিমাণে কনডেনসেট পাওয়া যাবে এমন পরিকল্পনা থেকেই সেখানে ওই জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

বিপিসির চিন্তা ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কনডেনসেট পাইপলাইনের মাধ্যমে সেখানে নিয়ে বোতলজাত করা হবে। কিন্তু ধারণা অনুযায়ী আশুগঞ্জে কনডেনসেট পাওয়া না যাওয়ায় প্রায় ৩৫ বছর ওই জমি পতিত অবস্থায় পড়ে ছিল। কিন্তু আগের ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় এলপি গ্যাস কোম্পানি ওই জমিতে নতুন করে ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। প্লান্ট স্থাপনের জন্য প্রায় ৩ একর জমির প্রয়োজন হবে। বিপিসির আগের পরিকল্পনার জন্য তৈরি করা একটি অফিস ভবন, ১১ হাজার ৮২০ বর্গফুটের ৩টি শেড, বাউন্ডারি ওয়াল, ফায়ার পন্ড, সিকিউরিটি পোস্ট রয়েছে। যেগুলো ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপিত হলে কাজে লাগানো যাবে। তাছাড়া এর আগে এলপিজি প্লান্ট স্থাপনের জন্য বাগেরহাটের মোংলায় বিপিসি জমি অধিগ্রহণ করেছিল। কিন্তু ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় পরে তা বাতিল হয়ে যায়।

সূত্র আরো জানায়, এলপিজি সিলিন্ডার বোতলজাত করার জন্য নানা সময়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং পরিকল্পনা ঘাটতি থাকায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন পরিকল্পনাগুলো আগামীতে লাভজনক অবস্থায় থাকবে এমন গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফলে আশা করা হচ্ছে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। সরকারি উদ্যোগে এলপিজির বাজার বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে (ত্রিপুরা মৌজা) বিপিসির একটি প্লান্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের আপত্তির কারণে ওই জায়গায় এখন এলপিজি প্লান্ট করার সম্ভাবনা ধোঁয়াশায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে দেশে বেসরকারি খাতের অন্তত ২২টি কোম্পানি বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করে এলপিজি ব্যবসা করছে। তার মধ্যে অন্তত চার-পাঁচটি কোম্পানি এলপিজি সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং করছে। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে ওসব কোম্পানি যেখানে লাভের অপেক্ষায় রয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগ এলপিজির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বেসরকারি এলপিজি ব্যবসায়ীরা মনে করেন। তাদের মতে, সরকার একদিকে এলপিজি কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে, অন্যদিকে নিজেই ব্যবসায় নামছে। তাহলে বেসরকারি কোম্পানিগুলো কীভাবে মুনাফা করবে।

ন্যদিকে এলপি গ্যাসের বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় নামলে বেসরকারি এলপি গ্যাস কোম্পানিগুলো আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিপিসি সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার বিদেশ থেকে ২২-২৪ ডলারে একেকটি সিলিন্ডার আমদানি করছে। এরপর ট্যাক্স, ভ্যাট দিয়ে সেটির খরচ আরো বেড়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সরকার নিজে বিনিয়োগ করে সিলিন্ডার উৎপাদন করলে সেখানে খরচ কিছুটা কম হবে। অন্যদিকে বেসরকারি এলপিজি বোতলজাত কোম্পানিগুলো সরকারের কাছ থেকে সিলিন্ডার কিনে সুলভমূল্যে বাজারজাত করতে পারবে। সেক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির তো কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে বিপিসির মালিকানায় পরিচালিত এলপি গ্যাস লিমিটেডের আওতায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় (উত্তর) এবং সিলেটের কৈলাসটিলায় দুটি এলপিজি বটলিং প্লান্ট রয়েছে। ওই প্লান্ট দুটি থেকে বছরে ২০ হাজার টন এলপিজি বোতলজাত করে বিপণন হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. ফজলুর রহমান খান জানান, দেশে এলপি গ্যাসের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে এলপির বাজার বড় হলে আমদানিনির্ভরতা যাতে কমানো যায়, সেজন্য এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris