রাজশাহীর কারাফটকে ভীন্ন স্বাদের বিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার : ধর্ষণ মামলায় আট বছর ধরে কারাগারে বন্দি আছেন দিলীপ খালকো। ২০১২ সালে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। সম্প্রতি উচ্চ আদালতে দিলীপের আইনজীবী তার জামিনের আবেদন করেন। দিলীপের দ্বারা ধর্ষণের শিকার ওই নারী আদালতে বলেন, তারা বিয়ে করবেন। আসামিকে জামিন দিলে তার আপত্তি নেই। আদালত কারাফটকেই তাদের বিয়ের আদেশ দেন। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে গতকাল শনিবার দুপুরে দিলীপ খালকোর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। কয়েদি দিলীপ খালকোর বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর ভিকারপাড়া গ্রামে।
তিনি ওই গ্রামের সিতানাথ খালকোর ছেলে। তার বিয়ের জন্য এদিন কনেসহ দুই পরিবারের ১৪ জন কারাগারে গিয়েছিলেন। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যও। তাদের সঙ্গে এসেছিল ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া ভিকটিম নারীর আট বছরের ছেলেও। কনেসহ দুই পরিবারের সদস্যরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত একটি নসিমনে চড়ে কারাগারের সামনে আসেন। এরপর তাদের কারা ফটকে ঢোকানো হয়। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার কৃষ্ণা দেবী এবং পুরহিত পরিমল চক্রবর্তী।
কনেপক্ষ আসার পর কারাগার থেকে বর দিলীপ খালকোকে আনা হয়। তিনি একটি সাদা পাঞ্জাবি পরেছিলেন। মাথায় দিয়েছিলেন মোটা কাগজের টোপর। কয়েদিরাই এটা বানিয়ে দিয়েছিলেন। কারাগারের অফিস কক্ষের পাশে জানালার সামনে এসে দাঁড়ান দিলীপ। তখন জানালার কাছে এগিয়ে যায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া তার ছেলে। ভেতর থেকে একজন মজা করে বলে ওঠেন, ‘দিলীপ এটা তোমার শ্বশুর।’ দিলীপ হাসেন। জানালার ওপারে দিলীপের পাশে এসে কনে দেখার জন্য ভিড় করেন কয়েদিরা। ভেতরে একটি চেয়ারে বসে ছিলেন কনে। জানালার ওপার থেকে একজন কয়েদি বলে ওঠেন, ‘মাস্কটা একটু নামান গো বৌদি’। কনে হেসে ফেলেন। মাস্ক নামান। কয়েদিরা কনে দেখেন। তারপর কনেকে সাজগোজ করতে শুরু করেন দিলীপের বড় বোন ও ভাবি।
তারপর ওই কক্ষে আনা হয় দিলীপকে। সেখানে কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালার উপস্থিতিতে দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। প্রথমে নিবন্ধন বইতে বর-কনের স্বাক্ষর নেন হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার। তারপর দুজনকেই পরিয়ে দেওয়া হয় গাদা ফুলের মালা। পুরোহিত তাদের দুজনকে তিনবার মালাবদল করান। এরপরই উলুধ্বনি দেন দুই পরিবারের নারীরা। তারপর দিলীপের বোন কনেকে শাখা পরিয়ে দেন। মাথায় তুলে দেন সিঁদুর। পুরোহিত এবার দিলীপকে বলেন, আগে যা ভুল করেছেন, করেছেন। আর না। এখন থেকে মেয়েটি আপনার অর্ধাঙ্গিনী হলো। সুখে-দুঃখে তাকে নিয়েই থাকবেন। দিলীপ কথা দেন। এরপর বর-কনের হাতে উপহার হিসেবে ধনের প্রতীক ধান এবং দীর্ঘায়ুর প্রতীক দুর্বা ঘাস তুলে দেওয়া হয়। শেষ হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
এ সময় সিনিয়র জেল সুপার কনেকে একটি নতুন শাড়ি উপহার দেন। দুই পরিবারের সবাইকে মিষ্টিমুখ করান। দিলীপ কয়েদি হিসেবে এখনও কারাবন্দী থাকার কারণে বিয়ের ছবি তোলা যায়নি। তবে দিলীপের অনুভূতি জানা গেছে। দিলীপ বলেন, বিয়ে করে ভালোই লাগছে। সবাই দোয়া করবেন। যেন সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারি। কনে বলেন, বাকি জীবনটা যেনো ভালভাবে কাটাতে পারি সেই দোয়া করবেন। সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, উচ্চ আদালত আমাদের দিলীপের বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিন দিন আগে আদেশের কপি পাওয়ার পরই দুইপক্ষকে ডাকি। সুষ্ঠুভাবে বিয়েও সম্পন্ন হলো। এখন যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাগজপত্র উচ্চ আদালতে পাঠানো হবে। দিলীপ কুমার এবং ভিকটিম সম্পর্কে খালাতো ভাই-বোন। তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল।
এর সূত্র ধরে ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দৈহিক মেলামেশা করেন দিলীপ। এতে ভিকটিম গর্ভবতী হয়ে পড়েন। কিন্তু এরপর থেকে দিলীপ আর বিয়ে করতে রাজি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সালিশ করার কথা বলে সময়ক্ষেপণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত সালিশ বৈঠক না হওয়ায় ভিকটিম ওই বছরের ২৩ অক্টোবর প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করেন। এরপর ২৫ অক্টোবর গোদাগাড়ী থানায় হাজির হয়ে দিলীপ খালকোর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় আসামির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর বিচার শেষে ওই বছরের ১২ জুন এক রায়ে দিলীপ খালকোকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।
যখন ভিকটিম ধর্ষণের শিকার হন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। কিন্তু সেই বয়সেই তার কোলজুড়ে আসে একটি পুত্র সন্তান। মেয়েটির আর পড়াশোনা করা হয়নি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা আদিবাসী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের এই মেয়েটি কৃষিশ্রমিক হিসেবে নতুন জীবন শুরু করে। দিনে দিনে বড় হতে থাকে তার সন্তান। তার সন্তানের বয়স এখন আট বছর। দিলীপেরও আট বছর জেল খাটা হয়ে গেছে। এতদিন পর দুই পরিবারের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। কনের সম্মতিতেই আদালত তাদের বিয়ের আদেশ দেন। এখন বিয়ের কাগজপত্র উচ্চ আদালতে গেলে জামিন পেতে পারেন দিলীপ খালকো।
আরও খবর
- আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস
- রাজশাহীতে চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার চোর গ্রেফতার
- নগরীতে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ পরিদর্শনে মেয়র
- রমজানেও আন্দোলন চলবে : ফখরুল
- গোদাগাড়ীতে অটো ছিনতায় চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার
- তিন দিনের ছুটি নিয়ে ৭ মাস অনুপস্থিত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা
- শাকিব প্রসঙ্গে মুখ খুললেন সেই নারী
- ভারত-চীন যুদ্ধের ছায়ায় বাস করছে যে শহরের মানুষ
- ‘খুব শিগগিরই’ পাল্টা আক্রমণে যাচ্ছে ইউক্রেন
- নতুন পজিশন নিয়ে যা বললেন মুশফিক
- ৭ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ৩ হাজার কোটি টাকা
- পাবনায় এক বিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষক-কর্মচারীকে শোকজ
- এক হালি লেবুর দাম ১০০ টাকা!
- এমপি ফারুকের ভাতিজা পাপ্পু স্ত্রীসহ কারাগারে
- নান্দনিক ভবন ডিজাইনের কারিগর মেসার্স রহমান ডেভেলপার এন্ড এসোসিয়েটস