শনিবার

২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

Norway

টমেটোর রাজ্যে বেচা-কেনার ধুম

Reporter Name
Update : সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর গোদাগাড়ী সদরের রামনগর গ্রামের মাঝখানে হ্যালিপ্যাড মাঠ। এই মাঠের চারিদিকে খোলা আকাশের নিচে কয়েকটি জমিতে রোদে শুকানো হচ্ছে টমেটো। কোনোগুলো কাঁচা সবুজ রংয়ের। আবার কোনোগুলো হালকা হলুদ বা হালকা লাল রংয়ের। গোদাগাগীর বিভিন্ন বিলে চাষকৃত কাঁচা টমেটো কিনে এনে ব্যবসায়ীরা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে পাকাচ্ছেন। সবুজ থেকে লাল রংয়ে পরিণত করতে টমেটো রোদে শুকানো হচ্ছে। আবার কোনো কোনোগুলো স্তুপ করে রেখে খড় দিয়ে ঢেঁকে রাখা হয়েছে। যেগুলোতে প্রায় পুরোপুরি লাল রং ধারণ করবে, সেগুলো আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বাজারজাত করণ হবে।

এই টমেটোগুলোই চলে যাবে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এভাবে টমেটো পক্রিয়াজতের মাধ্যমে বাজারজাত করতে গোদাগাড়ীর এই হ্যালিপ্যাড এলাকার অন্তত ১০টি স্থানে ব্যবসায়ীরা আস্তানা গেঁড়েছেন। তারা অস্থায়ী বাড়ি করে বা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ফাঁকা জমি বর্গা নিয়ে সেখানে কাঁচা টমেটো পাকিয়ে বাজারজাত করছেন। এভাবে গোদাগাড়ীর অন্তত ৩০টি স্থানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এই টমেটো ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে এবারকার মৌসুমের টমেটো বেচাকেনা শুরু হয়েছে গোদাগাড়ীতে।

চলবে আগামী আরও প্রায় দুই মাস। এই দুই মাস টমেটোর চরণভূমি বলে খ্যাত গোদাগাড়ীতে শুধুমাত্র টমেটো বেচা-কেনায় হবে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার। ব্যবসায়ীদের দাবি, এবারও বছরের শুরুতেই টমেটোর দাম অনেক বেশি। বেশি দাম দিয়ে কেনার পর সেগুলো বাজারজাত করতে অনেকটা ঝুঁকি নিতে হয় তাদের। এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় আমদানীকৃত টমেটোর প্রভাব। ফলে উচ্চ হারে দাম দিয়ে টমেটো কিনে সেটি বাজারে গিয়ে ভালো দাম না পাওয়া গেলে শুরুতেই ব্যবসায়ীরা ক্ষতিরমুখে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলেও জানান তারা। গোদাগাড়ীতে মাঠ থেকে এখন কাঁচা টমেটো বেচা-কেনা হচ্ছে ১৩-১৫শ’ মণ (৪৫ কেজিতে এক মণ ধরা হয়) দরে। সেই টমেটোতে একবার ‘ইথিফন’ ও ‘ডায়াথিন এম’ জাতীয় ওষুধ স্প্রে করা হয়। এরপর তিনধাপে রোদে শুকিয়ে লাল রং ধারণ করতে সময় লাগে প্রায় ১০দিন। তারপর সেই টমেটো বাজারজাত করতে হয়।

এবার এই প্রক্রিয়াটি এখন শুরু হয়েছে। তবে টমেটোর পুরো লাল রং গতকাল পর্যন্ত ধারণ না করায় সেটি বাজারজাত এখনো শুরু হয়নি। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই দেশের বাজারে নামতে শুরু করবে গোদাগাড়ীর এই টমেটো। গেদোগাড়ীতে টমেটো কিনতে যাওয়া ঢাকার ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন জানান, তারা ছয়জন মিলে এ বছর টমেটো ব্যবসা করতে গেছেন তাঁরা। গত ৭-৮ দিন ধরে তাঁরা কাঁচা টমেটো কিনছেন। শুরুতেই তারা ১৭-১৮শ টাকা মণ ধরে টমেটো কিনেছেন। গতকাল সেটি নেমে এসেছে ১-১৪ শ টাকা দরে। প্রথম দিকে কেনা টমেটোগুলো পক্রিয়াজাত করে হালকা লাল রংয়ে পরিণত হয়েছে। পুরোপুরি লাল হতে আরও ২-৩দিন সময় লাগবে। তারপরে বাজারজাত শুরু হবে। এমন অবস্থা গোদাগাড়ীতে জড়ো হওয়া অন্য ব্যবসায়ীদের আড়তেও লক্ষ্য করা গেছে। বেলাল হোসেন বলেন, টমেটো কেনার পর কয়েক ধাপে বাছাই করতে হয়। বিশে করে পোকায় খাওয়া খারাপ টমেটোগুলো ফেলে দিতে হয়। এরপর দাগ হয়ে যাওয়া টমেটোগুলোও বাছাই করতে হয়।

এছাড়াও স্প্রেসহ অন্যান্য খরচ মিলে মণপ্রতি অন্তত দেড়শ টাকা খরচ হয়। ফলে এবার শুরুতেই যে টমেটো তারা কিনেছেন ১৭-১৮ শ টাকা দরে। সেটির সব খরচ হিসেব করে অন্তত দুই হাজার টাকা মণ পড়বে এখন। আগামী ২-৩ দিন পরে বাজারে সেই টমেটো কি দাম যাবে, তা বলা যাচ্ছে না। ফলে বেশি দামে টমেটো কেনা হলে অনেকটা ঝুঁকি নিতে হয়।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সামিরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জানান, তাঁরা এ বছর চারজন ব্যবসায়ী এসেছেন টমেটো কেনা-বেচা করতে। গত বছর দুই মাস ব্যভসা করে তাদের ছয়জনের এক লাখ টাকা মাত্র লাভ হয়েছিল। তবে এবার একটু বেশি লাভের আশায় তাঁরা আবার এসেছেন টমেটো ব্যবসায়। সামিরুল বলেন, ‘অনেকেই ধারদেনা করেই বছরের দুই মাস এই ব্যবসা করতে ছুটে আসেন গোদাগাড়ীতে। এবারও দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর ভিড় জমেছে গোদাগাড়ীতে।

এদিকে টমেটো চাষি আকবর আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবার। তবে এখন পর্যন্ত যে দাম আছে তাতে টমেটো নিয়ে আশাবাদী চাষীরা। কিন্তু ভারত থেকে যে হারে টমেটো আসছে, তাতে এভাবে চলতে থাকলে দাম আরও পড়ে যাবে। তখন প্রতিমণ টমেটো সর্বোচ্চ হয়তো ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হবে। তার চেয়েও কম দরে টমেটো বিক্রি হলে কৃষকরা ক্ষতিরমুখে পড়বেন। এদিকে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্র মতে, এ বছর এ উপজেলায় ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এখান থেকে অন্তত দেড়শ কোটি টাকার টমেটো কেনা-বেচা হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris